প্রকল্পের গ্রাহকদের সঙ্গে কথা পুরপ্রধানের। নিজস্ব চিত্র
সরকারি প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য এক-এক করে উপভোক্তার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে অনুমতিপত্র। তার পরেই তাঁদের ডাক পড়ছে একটি ঘরে। সেখানে বসে রয়েছেন কাউন্সিলরেরা। তাঁদের সামনে উপভোক্তাকে পুরপ্রধান বলছেন, ‘‘ঘর তৈরির জন্য যদি কেউ কোনও টাকা-পয়সা চায়, দেবেন না। আমাদের জানাবেন। যদি জানা যায় কাউকে টাকা দিয়েছেন, তাহলে আর ঘর তৈরির টাকা পাবেন না।’’
সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তাদের কাছ থেকে ‘কাটমানি’ আদায় রুখতে এই পদ্ধতি নেওয়া হয়েছে বলে দাবি কাটোয়া পুরসভা কর্তৃপক্ষের। কাটোয়ার পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘নানা রকম খবর দেখছি। সে জন্য উপভোক্তাদের সতর্ক করছি। তার পরেও কেউ কাউকে টাকা দিলে প্রকল্পের বাকি কিস্তির টাকা আটকে দেওয়া হবে।’’
তৃণমূলের নানা সূত্রের দাবি, রাজ্যের নানা এলাকার মতো কাটোয়াতেও কাটমানি নেওয়ার নানা অভিযোগ উঠেছিল। বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে এ নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। শহরে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি দেওয়ার জন্য কাটমানি নেওয়া হচ্ছে— এই অভিযোগে পোস্টারও পড়েছিল। কাটমানি-কাণ্ডের জেরে তৃণমূলের একটি ওয়ার্ড অফিস ভেঙে দেয় পুরসভা। পুরভোট আসন্ন। তার আগে ভাবমূর্তি সাফ রাখতেই পুর কর্তৃপক্ষ এই পদক্ষেপ করেছেন বলে শাসকদলের একাংশের দাবি।
পুরসভা সূত্রে জানা যায়, কাটোয়া শহরে সরকারি প্রকল্পে ১১৫৫টি বাড়ি তৈরি হবে। সে জন্য পাঁচটি কিস্তিতে ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা পাবেন উপভোক্তারা। সম্প্রতি পুরসভায় গিয়ে দেখা যায়, উপভোক্তাদের ডেকে পুরপ্রধান জানতে চাইছেন, পাকা বাড়িতে থাকেন কি না? ‘না’ বলার পরে তাঁদের জানানো হচ্ছে, সরকারি ভাবে নির্দিষ্ট ৩৬০ বর্গফুটের মধ্যে বাড়ি তৈরি করতে হবে। শৌচাগার থাকা বাধ্যতামূলক। পাঁচটি কিস্তিতে টাকা দেওয়া হবে। এর পরেই পুরপ্রধান জানাচ্ছেন, এর জন্যে কাউকে কোনও টাকা দিতে হবে না। কেউ টাকা চাইলে পুরসভায় এসে খবর দেবেন।
পুরপ্রধানের ঘর থেকে বেরিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নার্গিস বিবি, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের উর্মিলা সরকারেরা বলেন, ‘‘আমরা কাটমানি নিয়ে নানা কথা শুনেছি। পুরপ্রধান সতর্ক করে দেওয়ায় ভাল হল।’’
পুরসভার এই উদ্যোগকে বিরোধীরা তো বটেই, কটাক্ষ করছে তৃণমূলের একাংশও। দলে পুরপ্রধানের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসাবে পরিচিত ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর শ্যামল ঠাকুরের বক্তব্য, “উনি শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। কাটোয়ার মানুষ সব বুঝে গিয়েছেন।’’ বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতি (কাটোয়া) কৃষ্ণ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল ও কাটমানি সমার্থক। এই দ্বিচারিতা মানুষ ধরে ফেলেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy