Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

আপেল-খুনে অভিযোগ কাজল, জাহেরের নামে

গোটা একটা ব্লকে বিরোধীদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক হানাহানির বিরাম নেই কেতুগ্রামে। শুধু গত তিন মাসেই খুনের ঘটনা ঘটেছে তিনটি। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই আঙুল উঠেছে তৃণমূলের কোন্দলের দিকে। তৃণমূলের নানা সূত্রের খবর, মূলত কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখের সঙ্গে তাঁর এক সময়ের ‘সহকর্মী’ সাউদ মিঞার দ্বন্দ্বই এর কারণ।

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেতুগ্রাম
নিজস্ব সংবাদদাতা, কেতুগ্রাম শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৪০
Share: Save:

গোটা একটা ব্লকে বিরোধীদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক হানাহানির বিরাম নেই কেতুগ্রামে।

শুধু গত তিন মাসেই খুনের ঘটনা ঘটেছে তিনটি। আর প্রতিটি ক্ষেত্রেই আঙুল উঠেছে তৃণমূলের কোন্দলের দিকে। তৃণমূলের নানা সূত্রের খবর, মূলত কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখের সঙ্গে তাঁর এক সময়ের ‘সহকর্মী’ সাউদ মিঞার দ্বন্দ্বই এর কারণ।

বুধবার যে তৃণমূল নেতা গুলিতে খুন হন, সেই আপেল শেখের সঙ্গেও দীর্ঘদিন মনোমালিন্য ছিল সাউদের। কিন্তু দু’জনেই জাহের-বিরোধী হওয়ায় সম্প্রতি তাঁদের মধ্যে ভাল সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল বলে দলের একটি সূত্রের দাবি। বুধবার রাতে আপেল শেখের ভাইপো লাল্টু শেখ কেতুগ্রাম থানায় তৃণমূল বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের ভাই, বীরভূমের নানুরের তৃণমূল নেতা কাজল শেখ, ভাগ্নে বাপ্পা শেখ, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের, পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ জাহাঙ্গির শেখ-সহ ১৭ জনের নামে অভিযোগ করেন। পুলিশ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করেছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

লাল্টু নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী দাবি করে অভিযোগ করেছেন, তিনি কাকার সঙ্গে দোকানে বসেছিলেন। সকাল ৯টা নাগাদ অভিযুক্তেরা দু’টি গাড়িতে করে কোমরপুর হাটতলা ও কোমরপুর গ্রামের মাঝামাঝি ওই দোকানে হামলা করে কাকা আপেল শেখকে খুন করে। তাঁর উপরেও গুলি চালানো হয়। কিন্তু কোনও রকমে প্রাণ বাঁচিয়ে এলাকা ছেড়ে পালান তিনি। পরে অভিযুক্তরা দু’টি গাড়িতে করে কেতুগ্রাম ১ ব্লকের সদর কান্দরার দিকে চলে যায় বলে লাল্টুর দাবি।

তবে বীরভূমের রাজনীতিতে অনুব্রত মণ্ডলের বিরোধী গোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত কাজল শেখ বৃহস্পতিবার দাবি করেন, “কেতুগ্রামের ঘটনার সময়ে আমি ও আমার ভাগ্নে নানুর থানায় ছিলাম, এটা প্রশাসনের সবাই জানে। এর আগে কেতুগ্রামের আর একটি খুনের ঘটনায় দিন আমি নানা জায়গায় প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ছিলাম, সেটাও প্রশাসনের সবাই জানে। তার পরেও বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের উস্কানিতে একটার পর একটা ঘটনা ঘটছে, আর আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে।” কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ কারও নাম না করে বলেন, “জাহের শেখদের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হচ্ছে। গোটা ঘটনাটাই দিনের বেলা প্রকাশ্যে ঘটেছে। মানুষ তো সব দেখছেন।” অনুব্রত মণ্ডলের যদিও সাফ বক্তব্য, ‘‘এ সমস্ত অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়া বৃথা।’’

শুধু আপেল নন, গত ২৬ জানুয়ারি কেতুগ্রামের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বাদশা শেখকে খুনের ঘটনার ক্ষেত্রেও তাঁর পরিবারের তরফে জাহের শেখ, কাজল শেখদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। এই ঘটনার দু’মাস পরে ২৭ মার্চ মাজিনা গ্রামের তৃণমূল নেতা সেন্টু শেখ খুন হন। এই ঘটনায় জাহের শেখের বিরোধী বলে পরিচিত সাউদ মিঞা, আপেল শেখদের নামে অভিযোগ করেন নিহতের এক ছেলে।

২০০৯ সালের লোকসভা ভোটের পরে বীরভূম যত উত্তপ্ত হয়েছে, কেতুগ্রামেও অশান্তি ছড়িয়েছে। সিপিএম এবং তৃণমূলের একের পর এক কর্মী নিহত হয়েছেন। পুলিশের হিসেবে, ২০০৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত ১৩ জন রাজনৈতিক কারণে নিহত হয়েছেন। বিরোধীদের অভিযোগ, সেই সময় থেকে কেতুগ্রাম ১ ব্লকে সিপিএমের কার্যত অস্তিত্ব নেই। দলের দু’টি লোকাল কমিটি, শাখা কমিটির দফতর প্রায় পাঁচ বছর ধরে বন্ধ। রাজ্যে ক্ষমতার হাতবদলের পর থেকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়তে থাকে। খুন হন শুকুর মোল্লা, কৃপাসিন্ধু সাহারা। বামুনডিহি গ্রামের দুই যুবক দু’বছর ধরে নিখোঁজ। পুলিশ সূত্রের খবর, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আটকাতে গিয়ে তারাও বেশ কয়েক বার হামলার মুখে পড়েছে।

কেতুগ্রামের সিপিএমের জোনাল সম্পাদক তমাল মাঝির দাবি, “শাসকদলের দ্বন্দ্বের জন্যই একের পর এক খুন হচ্ছে। এলাকায় শান্তি নষ্ট হচ্ছে। পুলিশ শাসকদলের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীকে মদত করার ফলে সাধারণ মানুষের জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।” সাউদ মিঞা বুধবারই কাটোয়া হাসপাতালে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই এই সব খুন হচ্ছে কেতুগ্রামে।” তবে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে চাননি বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ। তাঁর কথায়, “কেতুগ্রামে তৃণমূল কর্মীদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। তবে এই সব খুনের পিছনে ব্যক্তিগত রেষারেষি রয়েছে বলে মনে করি। পুলিশ আরও সতর্ক থাকলে ভাল হয়।”

বর্ধমান জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “আর যাতে এই ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সে দিকে আমরা নজর রাখছি। কেতুগ্রামে পুলিশকর্মী বাড়ানো হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE