Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Panchayet

টাকা খরচে ‘সদিচ্ছা’র অভাব, ধারণা প্রশাসনের একাংশের

উন্নয়নের কাজে ‘দুর্বল’ হওয়ায় ১৫টি পঞ্চায়েতে ‘লাল সতর্কতা’ জারি করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। কেন এমন পরিস্থিতি, কী ব্যাখ্যা প্রশাসন ও পঞ্চায়েতগুলির— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।উন্নয়নের কাজে ‘দুর্বল’ হওয়ায় ১৫টি পঞ্চায়েতে ‘লাল সতর্কতা’ জারি করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। কেন এমন পরিস্থিতি, কী ব্যাখ্যা প্রশাসন ও পঞ্চায়েতগুলির— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

উন্নয়নের কাজ না হওয়ার জন্য সদস্যদের দ্বন্দ্ব ও পরিকাঠামোর অভাবের কথা উঠে আসছে। সংগৃহীত চিত্র।

উন্নয়নের কাজ না হওয়ার জন্য সদস্যদের দ্বন্দ্ব ও পরিকাঠামোর অভাবের কথা উঠে আসছে। সংগৃহীত চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২০ ০৪:৪৫
Share: Save:

টাকা খরচের নিরিখে পিছিয়ে পড়া বিভিন্ন পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি, লকডাউন চলার কারণেই কাজ করতে সমস্যা হয়েছে। যদিও এই যুক্তি বিশেষ গ্রাহ্য করছেন না প্রশাসনের কর্তারাই। তাঁদের বড় অংশের মতে, লকডাউন প্রকৃত কারণ হলে, জেলার বাকি পঞ্চায়েতগুলিও টাকা খরচ করতে একই রকম সমস্যা পড়ত। প্রশাসনের একাংশের দাবি, ‘দুর্বল’ পঞ্চায়েতগুলির এই সময়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সদিচ্ছার অভাব ছিল। এর পিছনে কোথাও সদস্যদের মধ্যে ‘দ্বন্দ্ব’, তো কোথাও পরিকাঠামোর অভাব ধরা পড়েছে।
আধিকারিকদের মতে, গত অর্থবর্ষের রিপোর্টে পিছিয়ে থাকা অনেক পঞ্চায়েত এ বার কাজের নিরিখে উপরে উঠে এসেছে। লকডাউন তাদের ক্ষেত্রে বাধা হয়নি। জেলার রিপোর্টে এ বার ‘ভাল’ জায়গায় থাকা কেতুগ্রাম ১ ব্লকের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মহম্মদ শাহিদুল্লাহের কথায়, ‘‘আমরা পরিকল্পনা করে এগিয়েছিলাম। কর্মীদের আনার জন্য পঞ্চায়েত থেকে গাড়ি দেওয়া হয়েছিল। সে জন্যই গ্রামের উন্নয়ন ধীরে-সুস্থে এগিয়ে চলেছে। সবার আগে কাজ করার ইচ্ছে থাকা প্রয়োজন।’’ প্রায় একই বক্তব্য খণ্ডঘোষের প্রাক্তন প্রধান তথা বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য গোপাল দাসের। তিনি বলেন, ‘‘লকডাউনের সময়ে যতটা সম্ভব কম শ্রমিক নিয়ে, দূরত্ব-বিধি মেনে কাজ করতে হয়েছে। সে জন্য বড় কাজ না করে ছোট-ছোট কাজে নজর দেওয়া হয়েছিল। তার ফলশ্রুতিতেই পঞ্চায়েতের তহবিল খরচ হতে চলেছে।’’
জেলা প্রশাসনের ত্রৈমাসিক রিপোর্টে তিনটি পঞ্চায়েত (বড়বেলুন ১, বাঘার ২, জারগ্রাম) তহবিলের ১৫ শতাংশ এবং চারটি পঞ্চায়েত (চাকতেঁতুল, নসরতপুর, সুদপুর ও সীতাহাটি) ২৫ শতাংশের কম টাকা খরচ করেছে বলে জানানো হয়েছে। প্রশাসনের একাংশ ও স্থানীয় সূত্রের দাবি, জারগ্রাম পঞ্চায়েতে দু’টি গোষ্ঠীর ‘দ্বন্দ্বে’র জেরে কাজ আটকে পড়ছে। ঠিকাদারেরা টাকা পাচ্ছেন না। পঞ্চায়েতের প্রধান সঞ্জিরা বেগমের বিরুদ্ধে কয়েকজন সদস্য প্রশাসনের নানা স্তরে চিঠি পাঠিয়ে অভিযোগও করেছেন। উপপ্রধান সুভাষ কোলের অভিযোগ, ‘‘প্রধানের সঙ্গে কারও সদ্ভাব নেই। তাই কাজে গতি নেই। যে সব কাজ হয়েছে, ঠিকাদারেরা নানা কারণে তার টাকা পাচ্ছেন না। ফলে, তহবিলে টাকা পড়ে থাকছে।’’ প্রধানের সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।
প্রায় একই অভিযোগ শোনা যায় পূর্বস্থলীর নসরতপুরেও। মতানৈক্যের জেরে ওই পঞ্চায়েতে অর্থের উপ-সমিতিতে কাজের এলাকা বা পরিবর্তিত কাজের তালিকা ঠিক হচ্ছে না। তাই টাকাও খরচ হচ্ছে না। যদিও প্রধান সীমা মণ্ডল দাবি করেন, ‘‘যে দিন কাজ হবে বলে ঠিক হচ্ছে, সে দিনই বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে, কাজ আটকে যাচ্ছে।’’ ভাতারের বড়বেলুন ১ পঞ্চায়েতের কর্তাদের দাবি, কাজের পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। স্থায়ী নির্মাণ সহায়ক, পঞ্চায়েতের দু’জন আধিকারিক নেই। ফলে, দরপত্র ডাকা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। যদিও উপপ্রধান দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাস, ‘‘অগস্টের মধ্যে টাকা খরচ করে ফেলা হবে।’’
জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা তৃণমূলের রাজ্য স্তরের মুখপাত্র দেবু টুডু অবশ্য বলেন, ‘‘উন্নয়নের কাজ কোথাও আটকে নেই। কোথাও-কোথাও প্রশাসনিক জটিলতার জন্য পঞ্চায়েতের তহবিলে টাকা আটকে রয়েছে। এ নিয়ে দলীয় স্তরেও পর্যালোচনা চলছে।’’ (‌শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Panchayet Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE