প্রতীকী ছবি।
প্রেমে প্রত্যাখান করায় রাতে ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত কিশোরীর মুখে অ্যাসিড ছুড়েছিল যুবক। মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে হাত পুড়েছিল মায়েরও। বৃহস্পতিবার পূর্বস্থলীর নতুন দামপাল এলাকার ওই মামলায় অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিল কালনা আদালত। সঙ্গে ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাঁচ লক্ষ টাকা ও অনাদায়ে আরও দু’বছর কারাদন্ডের নির্দেশও দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা এবং দায়রা বিচারক তপনকুমার মণ্ডল।
স্থানীয় বিধায়ক প্রদীপ সাহা বলেন, ‘‘সমাজের জন্য এমন রায়ের খুব প্রয়োজন। এতে অপরাধ করার আগে অন্তত একটু ভয় আসবে।’’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালের ১২ ডিসেম্বর বাড়িতেই ঘুমোচ্ছিলেন বছর তেরোর কিশোরী। পাশে শুয়েছিলেন মা। তখনই ভেজানো দরজা খুলে ঢোকেন অভিযুক্ত গৌরব মণ্ডল। বোতলে আনা অ্যাসিড ছুড়ে দেন নাবালিকার মুখে। বাঁ চোখ, মুখ, বুকে ক্ষত হয় কিশোরীর। মেয়ের চিৎকারে তাকে ছুঁতেই ঝলসে যায় মায়ের হাত। বেরনোর সময় দরজার কড়া দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে যান গৌরব। ওই কিশোরীর পরিবারের দাবি, হামলা করে পালানোর সময় সৌরবাতির আলোয় স্পষ্ট চেনা গিয়েছিল গৌরবকে। তাঁরা জানান, বারবার চিঠি দিয়ে, ফোন করে মেয়েকে উত্যক্ত করত পেশায় রাজমিস্ত্রি ওই যুবক। কিশোরী সম্পর্কে রাজি না হওয়ায় ঘটনার মাস দুয়েক আগে কাপড়ের গোলায় আগুন লাগিয়ে ঘরের জানলা দিয়ে ছুড়েও দেয়। পুড়ে যায় টিভি। তবে আগেই দেখতে পেয়ে যাওয়ায় সে যাত্রাই ক্ষতি হয়নি কারও। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে গ্রেফতার করে গৌরবকে। পরে তার বাবা গৌরাঙ্গ মণ্ডল এবং বন্ধু সুকান্ত বাগচিকেও গ্রেফতার করা হয়।
মামলার তদন্তকারী অফিসারের দায়িত্ব নেন গৌতম হালদার। ওই তিন জনকে জেল হাজতে রেখে বিচার প্রক্রিয়ার আবেদন জানিয়ে চার্জশিট পেশ করা হয়। এ বছরের ৩ জুলাই থেকে মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ৩ অক্টোবর কালনা আদালত গৌরবকে দোষী সাব্যস্ত করে। তবে বাকি দু’জন অভিযুক্ত তথ্য, প্রমাণের অভাবে খালাস পেয়ে যান। মামলার সরকারি আইনজীবী মলয় পাঁজা বলেন, ‘‘অ্যাসিডে মেয়েটির মুখ এবং চোখের ব্যপক ক্ষতি হয়। এই ধরনের ঘটনায় দোষীর বিরুদ্ধে এমন রায় পূর্ব বর্ধমান জেলায় এই প্রথম। এই রায় এ ধরনের হামলাকারীদের অপরাধের আগে ভাবাবে।’’ তিনি জানান, আদালতের নির্দেশে এর আগেও ক্ষতিপূরণের অর্থ পেয়েছিল নির্যাতিতার পরিবার।
এ দিন আদালতে হাজির ছিলেন ওই কিশোরীর মা-বাবা। তাঁরা জানান, হামলার পর থেকে মেয়ের একটি চোখের দৃষ্টি অত্যন্ত কমে গিয়েছে। তা সত্ত্বেও লড়াই ছাড়েনি সে। এখন নবম শ্রেণিতে পড়ে ওই কিশোরী। রায় শুনে কিশোরী ফোনে বলে, ‘‘এই দিনটারই অপেক্ষা করছিলাম।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy