Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

আন্দোলন যাবে না বিফলে, আশায় কর্মীরা

রূপনারায়ণপুরের ক্ষুদ্র শিল্পদ্যোগী বিশ্বনাথ রুজও দাবি করেন, কারখানা ডুবলে এলাকার অনুসারী শিল্পগুলি অথৈ জলে পড়বে।

চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা। নিজস্ব চিত্র

চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানা। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক
চিত্তরঞ্জন শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০১৯ ০০:০৬
Share: Save:

শিল্প সংস্থাকে কেন্দ্র করে দুই রাজ্যের সীমানা এলাকায় গড়ে উঠেছে বাণিজ্যকেন্দ্র। ঝাড়খণ্ডের মিহিজাম, জামতাড়া, নলা, কুণ্ডহিত-সহ বেশ কিছু অঞ্চলের অর্থনৈতিক ভিত হল চিত্তরঞ্জন রেলইঞ্জিন কারখানাই। সম্প্রতি কারখানাকে ‘কর্পোরেট’ করার নির্দেশিকা আসার পর থেকে আসানসোল থেকে বরাকরের মতোই আশঙ্কার দোলাচলে রয়েছেন ওই সব এলাকার ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা।

মিহিজাম বণিক সংগঠনের সম্পাদক বিনয় জৈনের কথায়, ‘‘সংস্থাটি বন্ধ করে দেওয়া হলে ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় প্রভাব পড়বে। আবার বেসরকারিকরণ হলে কর্মী ছাঁটাই হবে। তাতেও ব্যবসা প্রভাবিত হবে।’’ একই মত ‘সাউথ বেঙ্গল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ’-এর সম্পাদক সুব্রত দত্ত। তিনি জানান, এই কারখানার উপরে নির্ভরশীল রূপনারায়ণপুর, নিয়ামতপুর, বরাকরের ব্যবসা-বাণিজ্যের বড় অংশ। তাঁর কথায়, ‘‘চিত্তরঞ্জন কারখানার শ্রমিক-কর্মীদের জন্যই চলে বাজারগুলি। তাই কারখানার ভাল-মন্দের প্রভাব এলাকায় পড়বেই।’’

রূপনারায়ণপুরের ক্ষুদ্র শিল্পদ্যোগী বিশ্বনাথ রুজও দাবি করেন, কারখানা ডুবলে এলাকার অনুসারী শিল্পগুলি অথৈ জলে পড়বে। স্বরোজগারে যুক্ত মানুষজনের আয় কমে যাবে। শুধু ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, কারখানার কিছু হলে এলাকার শিক্ষা-সংস্কৃতিতেও প্রভাব পড়বে, মনে করেন শিক্ষাবিদ অনাথবন্ধু চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘কারখানা টালমাটাল হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির কার্যকারিতা কমে যাবে।’’

কারখানা টিকিয়ে রাখতে আন্দোলন শুরু হয়েছে ইতিমধ্যে। মূলত সংস্থার ১৩টি শ্রমিক সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘সেভ সিএলডব্লিউ জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির নেতৃত্বে সরব হয়েছেন শ্রমিক-কর্মীরা। তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় ব্যবসায়ী, সামাজিক সংগঠনের সদস্যেরাও পথে নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির আহ্বায়ক সৌমেন দাস বলেন, ‘‘কারখানা বাঁচাতে সবাইকে এক সঙ্গে লড়তে হবে। না হলে সকলেই সঙ্কটে পড়বেন।’’

যদিও কারখানা বেসরকারিকরণ হলে তাতে খারাপ কিছু হবে না বলে মনে করেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে সম্প্রতি তিনি বলেন, ‘‘বেসরকারিকরণ মানেই কারখানা বন্ধ হওয়া নয়। মালিকানা বেসরকারি হাতে চলে যাবে। এই উদ্যোগে প্রত্যেকের ভাল হবে।’’ শ্রমিক সংগঠন বা রাজনৈতিক দলগুলির কথায় প্রভাবিত না হওয়ার পরামর্শও তিনি দিয়েছেন সাধারণ শ্রমিক-কর্মীদের।

এরই মধ্যে কারখানা বাঁচানোর ডাক দিয়ে ৫ জুলাই সংস্থার প্রশাসনিক ভবনে হাজার দশেক শ্রমিক-কর্মীর বিক্ষোভের পরে জেনারেল ম্যানেজারকে স্মারকলিপি দিয়েছেন। সেই স্মারকলিপি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠানো হয়েছে বলে জানান সংস্থার প্রিন্সিপ্যাল চিফ পার্সোনেল ম্যানেজার বি কে সিংহ। এক সন্ধ্যায় আধ ঘণ্টা সমস্ত আলো নিভিয়ে রেখে এলাকা অন্ধকার করেও প্রতিবাদ জানিয়েছেন কর্মী-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা।

তবে আন্দোলন চললেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না শ্রমিক-কর্মীরা। তাঁদের দাবি, আন্দোলন যাতে দানা না বাঁধে, সেই চক্রান্তও শুরু হয়েছে। তাতে যাতে কেউ প্রভাবিত না হন, সেই ডাক দিয়ে শিল্পাঞ্চল জুড়ে গণসম্মেলনের ডাকও দেওয়া হয়েছে। কারখানা বাঁচানোর লড়াই বিফলে যাবে না, আশায় শ্রমিক-কর্মী থেকে চিত্তরঞ্জনের বাসিন্দারা। (‌শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chittaranjan Locomotive Works Employment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE