Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিল্প ঘিরেই পাক খাচ্ছে ভোট-হাওয়া

দুর্গাপুর পুরসভার ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি এই বিধানসভা এলাকা। শহরের ১১ থেকে ২২ এবং ২৯ থেকে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড রয়েছে এর অধীনে। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে এই কেন্দ্রে তৃণমূল পেয়েছিল প্রায় ৫২ শতাংশ ভোট।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০৯:৪৯
Share: Save:

সব চর্চা-আলোচনায় একটাই বিষয়। শিল্প নিয়ে সেই সব চর্চায় একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে সব পক্ষ। লোকসভা ভোটের মুখে দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা এলাকায় ঘুরেফিরে আসছে সেই কল-কারখানার বেহাল দশার কথা।

দুর্গাপুর পুরসভার ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে তৈরি এই বিধানসভা এলাকা। শহরের ১১ থেকে ২২ এবং ২৯ থেকে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড রয়েছে এর অধীনে। ২০১১ সালে বিধানসভা ভোটে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বেঁধে এই কেন্দ্রে তৃণমূল পেয়েছিল প্রায় ৫২ শতাংশ ভোট। সিপিএম ৪২ এবং বিজেপি মাত্র ৩ শতাংশ ভোট পায়। ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে তৃণমূল এখানে পায় ৩৩ শতাংশ। শতাংশের হিসাবে বিজেপি এবং সিপিএম, দু’পক্ষই ২৯ শতাংশ পেলেও বিজেপি ৯৭টি ভোট বেশি পেয়ে কেন্দ্রে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। দু’বছর পরে বিধানসভা ভোটে এই আসন হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। সে বার বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে এখানে প্রার্থী দেয় কংগ্রেস। তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়ে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হন বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। তৃণমূল ৩৩ শতাংশ ও বিজেপি ৯ শতাংশ ভোট পায়।

২০১৭ সালে পুরভোটের আগেই অবশ্য বিশ্বনাথবাবু তৃণমূলের দিকে পা বাড়ান। পুরভোটে তৃণমূল শহরের ৪৩টি ওয়ার্ডেই জেতে। সিপিএম ও বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিয়োগ তোলে। যদিও তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। পুরভোটের ফলাফলে প্রায় ১৪ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকে বিজেপি। তারা যেখানে বেশি ভাল ফল করে সেই ১৩, ৩০, ৩৪, ৩৫ ও ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড রয়েছে দুর্গাপুর পশ্চিমের মধ্যেই।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বিভিন্ন ভোটে এই এলাকার বেশিরভাগ ওয়ার্ডেই ভোট কমেছে তৃণমূলের। গত পুরভোটে ভোট বাড়লেও ওই পরিসংখ্যান চিন্তায় রাখছে শাসকদলের নেতাদের। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ মমতাজ সংঘমিতা প্রচার শুরু করেছেন জোরকদমে। তাঁর দাবি, ‘‘দুর্গাপুরের মানুষ জানেন, অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্টের কৌশলগত বিলগ্নিকরণের প্রক্রিয়া বাতিলের দাবিতে আমরা সংসদের ভিতরে-বাইরে নিয়মিত আন্দোলন করে চলেছি। এমএএমসি খোলার দাবি জানিয়েছি সংসদে।’’

এই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরী প্রচারে শুরু থেকেই বেহাল শিল্পাঞ্চলের হাল ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তাঁর কাছে অনেকে বন্ধ কল-কারখানা খোলার ব্যবস্থার দাবিও জানাচ্ছেন। আভাসবাবুর বক্তব্য, ‘‘একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়েছে। কাজ হারিয়েছেন হাজার-হাজার মানুষ। কেন্দ্র ও রাজ্য, দুই সরকারই কিছু করেনি। বন্ধ কারখানা খোলা ও নতুন শিল্প গড়ার মানুষের দাবি নিয়ে লড়তে চাই আমরা।’’ তৃণমূল প্রার্থীর পাল্টা দাবি, ‘‘বাম আমলে জঙ্গি শ্রমিক আন্দোলনেই বড় ক্ষতি হয়েছে শিল্পের।’’ বিজেপি এই লোকসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে একেবারে শেষলগ্নে। এলাকায় এখনও প্রার্থীকে নিয়ে সে ভাবে প্রচার শুরু করতে পারেনি বিজেপি। দলের প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, ‘‘এখানকার পুরনো শিল্পগুলি রুগ্‌ণ হয়ে গিয়েছে। শুধু শিল্প নয়, লোকসভা কেন্দ্রের কৃষি ও গ্রামীণ এলাকারও উন্নয়ন করব আমরা।’’ কংগ্রেস প্রার্থী রণজিৎ মুখোপাধ্যায়ও এখানে এখনও সে ভাবে প্রচারে নামেননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের হৃত গৌরব ফিরিয়ে আনাই আমাদের লক্ষ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE