বর্ধমান শহরে পদযাত্রায় তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার বিকেলে। ছবি: উদিত সিংহ
পদযাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুর ২টো নাগাদ। কিন্তু হুগলির শ্রীরামপুর ও কৃষ্ণনগরে সভার কারণে পিছিয়ে যায় সময়। বিকেল পৌনে ৪টে নাগাদ যখন হেলিকপ্টারে বর্ধমানের স্পন্দন মাঠে নামলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন রাস্তায় রীতিমতো ভিড় জমে গিয়েছে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে পৌনে তিন কিলোমিটার হাঁটার পরে পুলিশে লাইনে ঢোকার সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও দেখা গেল চওড়া হাসি। বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের দলীয় প্রার্থী, বছর তিয়াত্তরের মমতাজ সংঘমিতার দাবি, “নেত্রীর এই জনপ্রিয়তাই আমাকে জিতিয়ে দেবে।’’
মমতা আসার অনেক আগে থেকেই ডিআইজি (বর্ধমান) তন্ময় রায়চৌধুরী, পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়-সহ একাধিক পুলিশ আধিকারিক, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরা বর্ধমান শহরের জিটি রোড নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। পৌনে তিন কিলোমিটার যাত্রাপথে বেশিরভাগ বাড়ি বা বহুতলের ছাদে নিয়োগ করা হয়েছিল সিভিক ভলান্টিয়ার। বিকেল ৩টে নাগাদ স্পন্দন মাঠে পৌঁছে তৃণমূলের জেলা পর্যবেক্ষক অরূপ বিশ্বাস মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের জানান, প্রার্থী ও জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ ছাড়া বাকি সবাই দলনেত্রীর পিছনে থাকবেন।
কাটোয়া রোডে নির্মীয়মাণ রেলসেতুর উপরে কর্মী-সমর্থকদের ভিড়। পুরসভা-সহ আশপাশের বাড়ির ছাদে কড়া রোদের মধ্যে ‘দিদি’কে দেখার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন মহিলারা। স্পন্দন মাঠে হেলিকপ্টার থেকে নেমেই তিনি হাঁটা শুরু করে দেন মমতা। রাস্তায় কারও সঙ্গে হাত মেলান, কাউকে প্রণাম জানান তিনি। বাদামতলা মোড়ে একটি বহুজাতিক সংস্থার বিপণির সামনে দাঁড়িয়ে পড়েন। ওই বিপণির উপর থেকে তৃণমূলের পতাকা উড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছিলেন কয়েকজন যুবক। তাঁদের দিকে তিনি হাত নাড়েন নেত্রী। এর পরে তিনি দাঁড়িয়ে পড়েন কার্জন গেটের সামনে। সেখানে নির্মীয়মাণ পার্কিং ও ক্যাফেটেরিয়ার দেওয়ালে বর্ধমান শহর ও বাংলার কৃষ্টিকে ভাস্কর্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। সে নিয়ে কথা বলেন পাশে থাকা অরূপবাবুর সঙ্গে।
রাস্তায় মমতার সঙ্গে করমর্দন করতে গিয়ে অনেকেই তাঁর হাত ধরে ফেলছিলেন। অনেক সময়ে প্রণাম জানাচ্ছিলেন তিনি। হাসিমুখে কুশল বিনিময় করে এগিয়ে যান। বীরহাটা সেতুর আগে ফুলের দোকান থেকে একগোছা গোলাপ নিয়ে মমতার হাতে তুলে দেন অরিন্দম ভট্টাচার্য। সেই গোলাপ দেড় বছরের শিশু সুইটির হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সুইটির মা বিজলিদেবীর দাবি, “আমার মেয়ের মাথায় দিদি হাত বুলিয়ে গোলাপ দিয়ে গেল, কখনও ভুলব না।’’
রাস্তার মধ্যে দু’এক বার দাঁড়িয়ে বহুতলের দিকে হাত নাড়েন মমতা। প্রত্যুত্তরে বাসিন্দারাও হাত নাড়েন। অনেকে দৃশ্য ক্যামেরাবন্দি করতে থাকেন। ছিন্নমস্তা কালীবাড়ির পুরোহিত গোপী ঠাকুর মমতাকে দেবীদর্শনের অনুরোধ করেন। মুখ্যমন্ত্রীও দেবীকে দর্শন করতে চেয়ে দড়ির ওপারে থাকা জনতাকে সরে যাওয়ার অনুরোধ জানান। কিন্তু সরে যাওয়া তো দূর, সুযোগ পেয়ে দড়ি টপকে যান কয়েকজন। পরিস্থিতি বুঝে আর দেবীদর্শন হয়নি তৃণমূল নেত্রীর। স্থানীয় ক্লাবের সদস্য কাঞ্চন গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, “যাওয়ার সময়ে দিদি পুজো দেওয়ার জন্য টাকা দিয়ে গিয়েছেন। আমরা তাঁর নামে পুজো দেব।’’
গোটা যাত্রাপথ ভিড়ে ভরে থাকলেও ২০১৬ সালের মতো এ বারও নীলপুর ছিল তুলনামূলক ফাঁকা। যদিও তা গুরুত্ব না দিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের দাবি, “এই পদযাত্রার পরে জেলার দু’টি আসনেই আমরা ভাল ব্যবধানে জিতব।’’
বিজেপির বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সন্দীপ নন্দীর পাল্টা দাবি, “শহর লাগোয়া এলাকায় ৪৮ ঘণ্টা আগে সভা করে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পরে আবার পদযাত্রা। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূল কতটা চাপে রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy