আসানসোলের পোলো গ্রাউন্ডে নরেন্দ্র মোদী। মঙ্গলবার। ছবি: পাপন চৌধুরী
২০১৪-র ৪ মে। সে দিনও ছিল কাঠফাটা রোদ। সে দিন এই শহরে গেরুয়া-সাদা চপারটা উড়ে আসা মাত্র জনতার গর্জন উঠেছিল, ‘মোদী মোদী’।
২০১৯-র ২৩ এপ্রিল। মাঝে ব্যবধান প্রায় পাঁচ বছরের। এ বার চপারের রংটা বদলে গিয়েছে, তা সেনাবাহিনীর। আসানসোলের পোলো গ্রাউন্ডে উপস্থিত জনতার ধ্বনি সেই একই। নরেন্দ্র মোদীর সভা ঘিরে আসানসোল এই দৃশ্যই দেখল মঙ্গলবার। সঙ্গে মোদীর সঙ্গে বিজেপির স্লোগানে গলা মেলানো, চলল তা-ও।
চড়া রোদ, গরম হাওয়াকে মাথায় রেখেও সভার নির্ধারিত সময় পৌনে ৪টের প্রায় তিন ঘণ্টা আগে চলে এসেছিলেন রিনা দেবী প্রসাদ। বার্নপুরের ধ্রুবডাঙার বাসিন্দা। সভাস্থল তখনও ফাঁকা। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৪-য় একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। মোদীকে দেখতে পাইনি। এ বার তাই সকাল সকাল চলে এসেছি।’’
উৎসাহ ছিল খুদেদের মধ্যেও। তেমনই এক জন সায়ন্তন মুখোপাধ্যায়। বয়স সাত বছর! দুপুর ২টো থেকে হেলিপ্যাডের সামনে বাবা নীরদবরণবাবুর হাত ধরে দাঁড়িয়ে ছিল সে। নীরদবরণবাবু বলেন, ‘‘ছেলের বড় ইচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে দেখবে। তাই এসেছি।’’
মোদীর সভা ঘিরে পোলো গ্রাউন্ডের আশপাশে শতাধিক দোকান বসেছিল। সেখানে মোদীর ছবি দেওয়া টুপির পাশাপাশি, আম পোড়া, ছাতুর সরবত সবই বিক্রি হতে দেখা গিয়েছে। সেখানেই দেখা খুসবু মিস্ত্রি, মাসুদা খাতুনের সঙ্গে। দু’জনেই কলেজ ছাত্রী। খুসবু জানালেন রোদ থেকে বাঁচতে ভরসা মোদী-টুপি। মাসুদা এসেছিলেন, উন্নয়নের কথা কী বলেন প্রধানমন্ত্রী, তা জানতে।
তবে এ দিন সভা শুরুর ঘণ্টাখানেক আগেও সে ভাবে ভিড় জমেনি বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। গত বছর, লাগোয়া জল ট্যাঙ্কের মাথায়, ছাদে, শপিং মলেও সভার শ্রোতা দেখা গিয়েছিল। এ বার তেমন দৃশ্য দেখা যায়নি বলেই স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। যদিও সভা শুরুর খানিক আগে মাঠ পুরো ভরে যাওয়ার পরে রাস্তাতেও লোক জন দেখা যায়। প্রথম দিকে মাঠ ভরেনি দেখে বিজেপি নেতৃত্ব বলেন, ‘‘অপেক্ষা করুন। আসলে রোদ-গরমে মানুষ একটি দেরিতে আসছেন।’’
এ দিন মোদীর ছবি দেওয়া মুখোশ পরা বেশ কয়েক জন মহিলাকে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয়ের নির্বাচনী এজেন্ট তাপস রায় বলেন, ‘‘মাঠে আগত কর্মী, সমর্থকদের মোদীই যেন স্বাগত জানাচ্ছেন, এই ভাবনা থেকেই এমন পরিকল্পনা।’’
এমনই নানা পরিকল্পনা, মেজাজের মধ্যেই দুপুর ৩টে ৪০ মিনিটে দেখা গেল, সেনাবাহিনীর তিনটি হেলিকপ্টার পোলো গ্রাউন্ডের আকাশে চক্কর কাটছে। মুহূর্তের মধ্যে সমবেত জনতা চিৎকার করলেন, ‘মোদী মোদী।’
সভা শেষে ফেরার মুখে শহরেরই এক প্রবীণ জানালেন, তিনি ২০১৪-র সভাতেও এসেছিলেন। সে বারের মতো ভিড় দেখা না গেলেও, মোদীকে নিয়ে জনতার মেজাজটা একই রকম ছিল, জানান সেই প্রবীণ। আর সেই মেজাজ আন্দাজ করেই বোধহয় মোদীও বললেন, ‘‘এক বার ফের আমাদের সব কর্মকর্তাকে আশীর্বাদ দিন। বিশ্বাস রাখুন, পদ্ম চিহ্নে যখন বোতাম টিপবেন আপনার ভোট সোজা মোদীর খাতায় যাবে।’’
যদিও স্থানীয় তৃণমূল ও সিপিএম নেতৃত্বের কটাক্ষ, প্রার্থীতে ভরসা নেই। তাই, নিজের নামে ভোট চাইলেন নরেন্দ্র মোদী। তবে বিজেপি নেতা লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজের কথা বলে আসলে প্রার্থীর জন্যই জনতার আশীর্বাদ চেয়েছেন।’’ বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, সভায় লক্ষাধিক মানুষ এসেছিলেন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ওই মাঠে কমবেশি ২০ হাজারের মতো লোক ধরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy