প্রথমবার ভোট হলেও প্রচারের উত্তাপ সে ভাবে পায়নি সোনাইচণ্ডী গ্রাম। ছবি: এএফপি।
ঝাঁ চকচকে দুর্গাপুর। সেই দুর্গাপুর পুরসভার অঙ্গদপুর গ্রামের ভিতর দিয়ে দামোদরের ফিডার ক্যানাল পার করে শ্মশানকালী মন্দির। সেখান থেকে এক কিলোমিটার ছাই-পথ দিয়ে গেলে দামোদরের গায়ে এই গ্রাম। প্রায় এক দশক এই সোনাইচণ্ডী গ্রামের মানুষ ভোট দিতে পারেননি। আজ, রবিবার প্রথম ভোটে চলল বাঁকুড়া লোকসভার অন্তর্গত এই গ্রাম।
‘সবাই ভোট দেন, এটাই শুনতাম। এ বার আমাদের এখানে প্রথম ভোট। আমরাও আজ ভোট দেব।’— সকাল সকাল খেতের কাজ সেরে বাড়ির পথ ধরে আসতে আসতে এমনটাই বলছিলেন আরতি বাওয়ালি, নারায়ণ বিশ্বাসেরা।
ভোটের আবহটা কয়েক দিন আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে। সম্প্রতি ডিটিপিএস-এর ‘অ্যাশ পন্ড’-এর ছাই-পথ ধরেই মেজিয়া পঞ্চায়েত সমিতির বানজোড়া পঞ্চায়েতের এই গ্রামে এসেছিলেন আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ান, সেক্টর অফিসের লোকজন। গ্রামে মোট ভোটার রয়েছেন ৭৭ জন। অনেকেই আগে সচিত্র পরিচয়পত্র হাতে পেয়েছিলেন। বাকিদের হাতে ওই দিন পরিচয়পত্র দেন সেক্টর অফিসের কর্মীরা। আর প্রতিনিয়ত টহল দেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যেরা।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
কিন্তু ভোট দেওয়ার অধিকারটা এ বার মিললেও মূলত কৃষি-অর্থনীতির উপরে নির্ভরশীল এই গ্রামের নানা নাগরিক পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অনেক, জানান এলাকাবাসীই।
গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতে বেড়ার দেওয়াল, খড় ও কাশের চাল। গ্রামে ঢোকার পায়ে চলা পথটাও এখন মোটরবাইক, গাড়ি চলাচলের রাস্তায় পরিণত হয়েছে। গ্রামের ভিতরেও সব রাস্তা কাঁচা। গ্রামে বিদ্যুৎ-সংযোগ নেই। তাই নেই টেলিভিশনও। দু’তিন জনের বাড়িতে স্বল্প উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুতের ব্যবস্থা রয়েছে। তা দিয়েই মোবাইল চার্জ করা হয়। মোবাইল থেকে পাওয়া তথ্য অথবা গ্রামের কেউ দুর্গাপুর শহরে এলে তিনিই দেশের রাজনীতি, অবস্থার কথা জেনে এসে বাকিদের সঙ্গে আড্ডায় মাতেন।
বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর চালিয়ে ভোট হবে, জানান সেক্টর অফিসার আনন্দলাল কর। ভোটের বুথ হয়েছে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত কমিউনিটি সেন্টারে। জায়গার অভাব ঢাকতে কমিউনিটি সেন্টারের গায়ে তাঁবু খাটানো হয়েছে। পানীয় জলের নলকূপ বসিয়েছে স্থানীয় পঞ্চায়েত।
প্রায় এক দশক আগে একটি-দু’টি করে পরিবার আসতে শুরু করে এই গ্রামে। এখন সেখানে মোট ৪০টি পরিবারের বাস। পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও ভোটই ফেরাতে পারে গ্রামের সুদিন, মনে করছেন গ্রামের অনেকেই। সুরধনী বিশ্বাস, প্রমথ বিশ্বাসেরা বলেন, ‘‘আমরা সবাই অবশ্যই ভোট দেব। আশা করি, গ্রামেরও উন্নতি হবে।’’
গ্রাম সূত্রে জানা যায়, বনগাঁর বিদায়ী সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর এই গ্রামে এসেছিলেন। তিনি এই পরিবারগুলি যাতে ভোটাধিকার পায়, সে জন্য বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের কাছে আর্জি জানান। এগিয়ে আসে প্রশাসনও।
কিন্তু প্রথমবার ভোট হলেও প্রচারের উত্তাপ সে ভাবে পায়নি এ গ্রাম। কোনও রাজনৈতিক দল প্রচারে আসেনি, জানান গ্রামবাসী। শুধু তৃণমূলের তরফে গ্রামবাসীর একাংশকে সঙ্গে নিয়ে মিছিল ও পথসভা করা হয়। প্রচার হোক বা না হোক, ভোট দিতে পারার অধিকার অর্জনেই তাঁদের সাফল্য দেখছেন গ্রামের যুবক আনন্দ বিশ্বাসেরা।
তবে এত কিছুর মাঝেও মন ভাল নেই কালু বৈদ্যের। তিনি সচিত্র পরিচয়পত্র পাননি। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘সবাই যাবেন হইহই করে ভোট দিতে। আমি দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy