ছবি: এপি।
গরম পড়লেই জলের জন্য হাপিত্যেশ করেন আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এই বিধানসভা এলাকার বাসিন্দারা। এ বারেও কুলটির জল-সঙ্কটই এলাকার ভোটে প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়েই শুরু হয়েছে ভোট-চর্চা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আসানসোল পুরসভার কুলটি বরোর অন্তর্গত বিদায়গড়, দক্ষিণ রানিতলা, বিডিওপাড়া, চিনাকুড়ি, কেন্দুয়া বাজার-সহ লাগোয়া এলাকার বাসিন্দাদের প্রায় তিন কিলোমিটার দূর থেকে জল বয়ে আনতে হয়। এই এলাকার জল সমস্যার কথা উঠে এসেছিল খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও। ২০১৮-র ডিসেম্বরে জামুড়িয়ার সভা থেকে মমতা বলেছিলেন, ‘‘কুলটি, জামুড়িয়ায় পানীয় জলের সমস্যা রয়েছে। আগামী দিনে জলের সমস্যা মেটানো হবে।’’ রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে-ও বলেছিলেন, ‘‘পশ্চিম বর্ধমানে এ বার একটু পানীয় জলের সমস্যা হতে পারে। সেটা নিয়ে পদক্ষেপ করতে হবে।’’
এই জোড়া নির্দেশের পরে এলাকা-সহ জেলার নানা জলপ্রকল্পগুলির কাজে গতি এসেছে বলে দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। প্রচারে নেমে সে কথাই তাঁরা বলছেন বলে জানান কুলটির তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। আসানসোল পুরসভার মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারিও বলেন, ‘‘কুলটির জন্য অনুমোদিত রাজ্য সরকারের ২৪৯ কোটি টাকার নতুন জল প্রকল্পের কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তবে, এই ‘দ্রুত গতি’ সম্পর্কেই সন্দিহান বিরোধীরা। সিপিএম নেতৃত্ব জানান, ২০০৬-এ কেন্দ্রীয় সরকার জল প্রকল্পের জন্য ১৩৩ কোটি বরাদ্দ করে। কিন্তু, তা পরে তৈরি করতে পারেনি তৃণমূল। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য বংশগোপাল চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘এক বার জল প্রকল্পের টাকা হাতে এসেও ফিরে গিয়েছে। এ বারেও তা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। জল নিয়ে মানুষের এই সমস্যার কথা আমরা প্রচারে তুলছি।’’ একই কথা বলছেন বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইও।
সেই সঙ্গে চর্চায় রয়েছে গত কয়েকটি ভোটের অঙ্কও। ২০০৬ থেকে টানা এই বিধানসভা থেকে বিধায়ক হয়েছেন তৃণমূলের উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু ২০১৪-র লোকসভা ভোটে দেখা যায়, বিজেপি প্রার্থী বাবুল সুপ্রিয় প্রায় ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়ে অন্তত ৪২ হাজার ভোটের ‘লিড’ পেয়েছেন। যদিও এর পরে ২০১৫-র পুরসভা ভোট এবং ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে কুলটিতে জয়পতাকা ওড়ে তৃণমূলেরই। কিন্তু তার পরেও এলাকার ভোট কোন দিকে যাবে, তা নিয়ে সন্দিহান সব পক্ষই।
বিজেপি নেতা লক্ষ্মণবাবুর দাবি, গত কয়েক বছরে এই এলাকায় দলের সংগঠন চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। এলাকার রাজনৈতিক নেতা, কর্মীদের একাংশের মতে, এই এলাকায় বড় সংখ্যায় রয়েছেন হিন্দিভাষী ভোটারেরা। তাঁদের বড় অংশই গত লোকসভা ভোটে বিজেপির দিকে ঝুঁকেছিলেন বলেই এলাকাবাসীর একাংশের মত। লক্ষ্মণবাবু যদিও বলেন, ‘‘শুধু হিন্দিভাষী নন, সমাজের প্রতি ক্ষেত্রের মানুষই আমাদের ভোট দেবেন।’’ সিপিএম নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, এলাকার শ্রমিকদের সমস্যা, জল-সঙ্কট নিয়ে তাঁরাই সবথেকে বেশি সরব হওয়ায় ভোট
তাঁরাই পাবেন।
তৃণমূল সূত্রে খবর, এই এলাকায় দলের মাথাব্যথার অন্যতম কারণ দলের গোষ্ঠীকোন্দল। এ বারেও প্রচার পর্বের শুরুর দিকে দলের এক কর্মিসভায় এলাকার তৃণমূল কাউন্সিলরদের একাংশের অনুপস্থিতি সেই কোন্দলের চিত্রকেই সামনে এনেছিল বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতা, কর্মীদের একাংশ। পরে অবশ্য সবাইকে এক জায়গায় এনে ‘ঐক্যে’র বার্তা দেওয়া হয়। যদিও কোনও রকম কোন্দল নেই দাবি করে তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, ‘‘কুলটি থেকে এ বার আমরা ভাল ‘লিড’ পাবই। সবাই মিলেমিশে এক সঙ্গে কাজ করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy