এমনই আমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
মাসখানেক আগেই দুর্গাপুরে বামেদের মিছিলের মুখ হিসেবে জ্যোতি বসুর সঙ্গে ছিলেন বিধানচন্দ্র রায়। এ বার সেই পথে হেঁটেই মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর মৃত্যুদিন, ৩০ জানুয়ারি সিপিএমের ১৩টি গণসংগঠন ‘সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী’ গণসম্মেলন করতে চলেছে। তার জন্য পোস্টার, আমন্ত্রণপত্র— সবেতেই থাকছেন গাঁধী। তবে বাম সূত্রে খবর, এই কর্মসূচি শুধু দুর্গাপুরে নয়, গোটা রাজ্যেই নেওয়া হচ্ছে।
সঙ্ঘ পরিবারের রমরমার মোকাবিলায় গাঁধীজিকেও এখন হাতিয়ার করেছে বামেরা। কলকাতায় বামফ্রন্টের নেতৃত্ব আলোচনা করে সেই জন্যই ৩০ তারিখ বেলেঘাটার গাঁধী আশ্রম পর্যন্ত মিছিলের কর্মসূচি নিয়েছেন। যে কর্মসূচির মূল লক্ষ্য হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার প্রতিবাদ এবং ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংহতির পক্ষে সরব হওয়া। বাম রাজনীতির সঙ্গে গাঁধীবাদকে মিলতে দেখে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ বিস্মিত ঠিকই। কিন্তু বামেদের যুক্তি, বর্তমান প্রেক্ষাপটে আরএসএসের ছড়ি ঘোরানোর রাজনীতির সঙ্গে এঁটে উঠতে গাঁধীজি মোটেও অচ্ছ্যুৎ নন!
দুর্গাপুরের সম্মেলনের পোস্টার, আমন্ত্রণপত্রে গাঁধীর ছবি রয়েছে। সেই সময়ে গাঁধী-হত্যা সংক্রান্ত বিভিন্ন খবরের কাগজের ‘কাটিং’ও ব্যবহার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৬ হাজার কার্ড বিলি করা হয়েছে। সম্মেলনে বাংলাদেশের হাসান হাসমত জামাল, প্রাবন্ধিক জিয়াদ আলি, জাদুকর দীপক রায়চৌধুরী, সঙ্গীত শিল্পী পূরবী মুখোপাধ্যায়, বাচিক শিল্পী তথা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন রেজিস্ট্রার রজত বন্দ্যোপাধ্যায়, চিত্র পরিচালক তরুণ মজুমদার থাকতে পারেন বলে বাম সূত্রে দাবি।
বামপন্থী সংগঠনের গাঁধী-স্মরণে সম্মেলন প্রসঙ্গে দুর্গাপুরের তৃণমূল নেতৃত্ব কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। এক নেতার বক্তব্য, ২০১৪-র ২৬ জানুয়ারি দুর্গাপুরে ডিওয়াইএফআই আয়োজিত ১০ কিলোমিটার ম্যারাথনের পোস্টারে গাঁধীর ছবি ব্যবহার নিয়ে বিস্তর বিতর্ক হয়। শেষমেশ জেলা সিপিএমের একাংশের চাপে গাঁধীর ছবি সরিয়েও ফেলা হয়। তৃণমূলের দুর্গাপুর জেলা সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘পায়ের তলায় মাটি নেই সিপিএমের। তাই এমন দ্বিচারিতা!’’
তা হলে হঠাৎ গাঁধী-স্মরণ কেন? সিপিএমের এক জেলা নেতার ব্যাখ্যা, ‘‘সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু— উভয় মৌলবাদই সমাজের পক্ষে ভয়াবহ। আজকের দিনে গাঁধীজির প্রাসঙ্গিকতা অস্বীকার করারও জায়গা নেই।’’ শহরের এক সিপিএম নেতার দাবি, গত বছর ডিসেম্বরে কলকাতা প্লেনামে গৃহীত ‘গণলাইনে’র সিদ্ধান্তের পরে দলে বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছে। এ সব তারই ফল। সভার আহ্বায়ক তথা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য পঙ্কজ রায় সরকারের দাবি, ‘‘গাঁধীর মতাদর্শের সঙ্গে অমিল থাকতেই পারে। কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভেদ দূর করতে তাঁর মতো ‘আইকন’ কে থাকতে পারেন!’’ তাত্ত্বিক ভাবে অমিল থাকলেও গাঁধীজি কখনওই কমিউনিস্ট পার্টিতে অচ্ছুৎ নন বলেও বাম নেতাদের দাবি। এক যুব নেতার বক্তব্য, ইএমএস নাম্বুদ্রিপাদের ‘গাঁধী অ্যান্ড ইজম’-এর মতো একাধিক বইয়ে গাঁধীজির আদর্শ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy