Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ি থেকে বার করে চলল ভাঙা

বৃহস্পতিবার সকালে সালানপুরের পাহাড়গোড়ায় এ ভাবেই বাসিন্দাদের ঘর থেকে বার করে পরপর বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। ইসিএল জানায়, খনি সম্প্রসারণের জন্য এই গ্রামের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।

বাইরে ডাঁই আসবাবপত্র। বৃহস্পতিবার পাথরগোড়ায়। ছবি: পাপন চৌধুরী

বাইরে ডাঁই আসবাবপত্র। বৃহস্পতিবার পাথরগোড়ায়। ছবি: পাপন চৌধুরী

সুশান্ত বণিক 
সালানপুর শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

সকালে স্নান সেরে লক্ষ্মীর পাঁচালি পড়া শুরু করেছিলেন প্রৌঢ়া বুলুরানি রায়। হঠাৎ বিকট শব্দে ভেঙে পড়ল বাড়ির পাঁচিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘরের মধ্যে এসে হাজির লাঠিধারী বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী। তাঁরা নির্দেশ দিলেন, ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হবে এখনই। কারণ, বাড়ি ভেঙে ফেলা হবে। প্রতিবাদ করতেই শুরু হল টানাহ্যাঁচড়া। বছর পাঁচেকের নাতিকে নিয়ে বাড়ির বাইরে বেরোতেই যন্ত্র দিয়ে ভেঙে ফেলা হল রান্নাঘর। সে দিকে তাকিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে বুলুরানিদেবী বলেন, ‘‘নাতির জন্য দুধ গরম করতে বসিয়েছিলাম উনুনে। সেটুকুও নিতে দিল না!’’

বৃহস্পতিবার সকালে সালানপুরের পাহাড়গোড়ায় এ ভাবেই বাসিন্দাদের ঘর থেকে বার করে পরপর বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। ইসিএল জানায়, খনি সম্প্রসারণের জন্য এই গ্রামের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শুরু হয় অভিযান। খনির আধিকারিকরা জানান, গ্রামে মোট ২৯টি পরিবারের বাস। ১৭টি পরিবার আগেই টাকা নিয়ে জমি খালি করে চলে গিয়েছে। বাকি ১২টি পরিবারের মধ্যে শরিকি দ্বন্দ্ব রয়েছে। তাই তারা কেউ টাকা নিতে চায়নি। তাই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে জমি-বাড়ির দাম আসানসোল আদালতে জমা দিয়ে উচ্ছেদ-পর্ব মেটানো হয়েছে।

বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে-কাঁদতে বৃদ্ধ শম্ভুনাথ রায় বলেন, ‘‘শতাধিক বছরের পৈর্তৃক ভিটে আর রক্ষা হল না। হাতে এখনও টাকা পেলাম না, অথচ, আমাদের ঘরছাড়া করে দেওয়া হচ্ছে।’’ গ্রামের মাঝে কুঁড়েঘরে বাস বৃদ্ধা নমিতা রায়ের। বছর পাঁচেক আগে স্বামী ও তিন বছর আগে একমাত্র ছেলে মারা গিয়েছেন। বাড়িতে তিনি এখন একা। যন্ত্র দিয়ে একের পর এক বাড়ি ভাঙা পড়তে দেখে আতঙ্কে রয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘এ বার আমি কোথায় যাব? ক্ষতিপূরণের টাকাই বা কী ভাবে পাব জানি না!’’ আর এক বাসিন্দা চিন্ময় রায় জানান, বাড়ি ভাঙা পড়ার আগে যতটা সম্ভব আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। বুকে স্কুলের ব্যাগ আঁকড়ে ধরে গোটা কর্মকাণ্ড দেখছিল এক খুদে। প্রথম শ্রেণির ওই পড়ুয়া জানায়, সকালে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। তখনই বাড়ি ভাঙতে আসে লোকজন। এ দিন আর তার স্কুলে যাওয়া হয়নি।

ইসিএলের কর্তারা অবশ্য জানান, আদালতের রায়ের কথা বারবার জানানো হয়েছে বাসিন্দাদের। তবু তাঁরা নিজেরা উঠে না যাওয়ায় জোর করতে হচ্ছে, দাবি মোহনপুর কোলিয়ারির এজেন্ট বীরেন্দ্রপ্রসাদ গুপ্তের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ECL Salanpur Pahargora Mine Extension
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE