Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বর্ধমানের রাস্তায় মুখর ‘হোক প্রতিবাদ’

ফল প্রকাশে গোলমাল নিয়ে মুখ খুলতে গিয়ে অশান্তি পাকানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন ছ’জন। তাতে ভয়ে গুটিয়ে না গিয়ে আরও বেশি ছাত্রছাত্রী শনিবার কলকাতা থেকে পৌঁছে গেলেন বর্ধমানে। যাদবপুর, কলকাতা ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মিছিলে পা মেলালেন শিবপুর বিই কলেজের পড়ুয়ারাও। যাদবপুরের ‘হোক কলরব’-এর আদলে আগেই আন্দোলনের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘হোক প্রতিবাদ’। এ দিন যাদবপুরের মতোই উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করা হল।

পড়ুয়াদের মিছিল। উদিত সিংহের তোলা ছবি।

পড়ুয়াদের মিছিল। উদিত সিংহের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৫ ০১:০৪
Share: Save:

ফল প্রকাশে গোলমাল নিয়ে মুখ খুলতে গিয়ে অশান্তি পাকানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন ছ’জন।

তাতে ভয়ে গুটিয়ে না গিয়ে আরও বেশি ছাত্রছাত্রী শনিবার কলকাতা থেকে পৌঁছে গেলেন বর্ধমানে। যাদবপুর, কলকাতা ও প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মিছিলে পা মেলালেন শিবপুর বিই কলেজের পড়ুয়ারাও।

যাদবপুরের ‘হোক কলরব’-এর আদলে আগেই আন্দোলনের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘হোক প্রতিবাদ’। এ দিন যাদবপুরের মতোই উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করা হল। কারণটাও একই, ছাত্র আন্দোলন সামাল দিতে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার অবশ্য এই প্রসঙ্গ তোলা মাত্র ‘কোনও মন্তব্য করব না’ বলে ফোন কেটে দিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, কলকাতা থেকে যাওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল অন্তত পঞ্চাশ। ফলবিভ্রাটে ভুক্তভোগী অন্য জেলার ছাত্রছাত্রীরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। তবে টিএমসিপি-র হুমকিতে বর্ধমানেরই অনেকে পথে নামতে সাহস পাননি বলে অভিযোগ। তবে টিএমসিপি তা উড়িয়ে দিয়ে উল্টে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধেই অশান্তির দায় চাপাচ্ছে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের দাবি, ‘‘বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল বিভ্রাট নিয়ে আমরাই প্রথম আন্দোলন শুরু করেছিলাম। এখন বাইরে থেকে কিছু স্বঘোষিত ছাত্রনেতা এসে পরিবেশ অশান্ত করতে চাইছেন। এতে গুরুত্ব দেওয়ার কিছু নেই।’’

বিষয়টি যে এই মাত্রা নেবে তা টিএমসিপি নেতৃত্ব বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সম্ভবত আগে আঁচ করতে পারেননি। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ দেখাতে এলে ছয় ছাত্রকে টিএমসিপি প্রথমে মারধর করে বলে অভিযোগ। তাঁদের ‘উদ্ধার’ করে নিয়ে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ বসিয়ে রেখে শেষমেশ গ্রেফতার করে বর্ধমান থানার পুলিশ। অভিযোগ, অশান্তি সৃষ্টির। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসার ওই অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। রাত ১০টা নাগাদ ব্যক্তিগত বন্ডে ছ’জনকে ছাড়া হয়।

এ দিন সকাল ১০টা থেকে ছাত্রছাত্রীরা বর্ধমান স্টেশনে জমায়েত হতে শুরু করেন। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ স্টেশন চত্বর থেকে মিছিল বেরিয়ে জিটি রো়ড ধরে কার্জন গেটে পৌঁছয়। হাত ধরাধরি করে মিনিট পাঁচেক প্রতীকী পথ অবরোধও করা হয়। পথচারীদের মধ্যে লিফলেট বিলি করেন পড়ুয়ারা। চলে গান ও কবিতা পাঠ। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান ওঠে। গত সন্ধ্যায় ধৃতদের অন্যতম, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র সৈকত শিট দাবি করেন, ‘‘ফল বিভ্রাটে ক্ষতিগ্রস্ত ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়াতে আসায় কর্তৃপক্ষ ভয় পেয়ে আমাদের গ্রেফতার করান। হুমকিও দেওয়া হয়।’’ উপাচার্যের পদত্যাগ, মাকর্শিট সংশোধন, স্পট রিভিউ ও তথ্য জানার অধিকারে খাতা দেখার সুযোগ দেওয়ার দাবি তোলান তাঁরা।

এপ্রিলের গোড়া থেকেই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফল বিভ্রাট নিয়ে আন্দোলনে নেমেছেন বহু পড়ুয়া। বেশ কয়েক দিন ধরেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেও প্রচার চলছে। এ দিন শ’দেড়েক ছাত্রছাত্রী পথে নামেন। যাদবপুরের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের ছাত্র রাতুল বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, “বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কলেজে ভুল ফলের শিকার হওয়া ছাত্রছাত্রীরা এক সঙ্গে আন্দোলনে নামার জন্যে আমাদের অনুরোধ করেছিল। তাই আমরা কলকাতার বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছি।”

কিন্তু টিএমসিপি-র হুমকির জেরে বহু ছাত্রছাত্রী ইচ্ছে সত্ত্বেও এ দিন মিছিলে যোগ দিতে পারেননি বলে অভিযোগ অরিত্র মজুমদারের মতো ছাত্রনেতাদের। তা সত্ত্বেও যাঁরা এসেছিলেন, তাঁরাও অনেকে হুমকির কথা জানিয়েছেন। মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে বিবেকানন্দ কলেজের এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, “এপ্রিলের গোড়া থেকে যত বার আমরা হোক প্রতিবাদ আন্দোলনে যোগ দিয়েছি, তত বারই বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএমসিপি নেতাদের ইন্ধনে আমাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। মিছিলে যোগ দিতে বারণ করা হয়েছে।”

একই অভিযোগ করেছেন বর্ধমান উইমেনস কলেজ, রাজ কলেজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ছাত্রছাত্রী। রাজ কলেজের এক ছাত্রের দাবি, শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলাপবাগ ক্যাম্পাসে লিফলেট বিলির সময়ে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম এবং এক প্রাক্তন নেতা তাঁদের ভয় দেখান। সে কথা স্বীকার না করলেও আমিরুলের হুঁশিয়ারি, ‘‘আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা হলে বরদাস্ত করা হবে না।’’

উইমেনস কলেজের এক ছাত্রী অভিযোগ করেন, “টিএমসিপি-র শহর সভাপতি রাসবিহারী হালদারের নেতৃত্বে কিছু ছাত্র মারধরের হুমকি দিচ্ছে। শুক্রবার বিবেকানন্দ কলেজের এক পড়ুয়াকে মেরে-ধরে তাঁর কলেজের পরিচয়পত্র কেড়ে নেওয়া হয়েছে।” হুগলি মহসীন কলেজের এক ছাত্রের অভিযোগ, “আমরা বর্ধমানে এলেই ‘বহিরাগত’ তকমা দিয়ে মারধর করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওরা যতই ভয় দেখাক, আমরা আন্দোলন থেকে হটছি না।”

রাসবিহারী অবশ্য পাল্টা বলেন, “যে কোনও গণতান্ত্রিক দাবি নিয়ে ছাত্র আন্দোলন হতেই পারে। কিন্তু বহিরাগতদের নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা মানব না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতারা লিফলেট বিলিতে বাধা দিয়েছিলেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘আমরা কোনও ছাত্রছাত্রীকে কোনও মিছিলে যেতে বাধা দিইনি। মারধরও করিনি।”

ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে পুলিশি ব্যবস্থা ও উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রজত ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কোনও মন্তব্য করব না। সোমবার অন্য আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে মতামত জানানো হবে।’’ আন্দোলনকারীরা জানান, আগামী ২৩ এপ্রিল বর্ধমান শহরে কনভেনশন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঠিক করবেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE