Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বাড়িতে ফিরলেন কেতুগ্রামের যুবক

যে কোনও জরুরি পরিস্থিতি, প্রাকৃতির বিপর্যয়ে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে হ্যাম রেডিয়ো। সারা বিশ্বেই বহু প্রচলিত এই মাধ্যম। এ ক্ষেত্রেও হারানো ব্যক্তিকে খুঁজে দিতে এর সদস্যদের সাহায্য নেন উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।

 হারানো শ্যামল দাস। নিজস্ব চিত্র

হারানো শ্যামল দাস। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:৪৭
Share: Save:

কালিন্দী নদীর ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বছর বত্রিশের যুবক। মানসিক ভাবে অসুস্থ আন্দাজ করে কেউ বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না তাঁকে। শেষে হিঙ্গলগঞ্জের কয়েকজন যুবক তাঁকে বাজারে নিয়ে আসেন। চার দিনের চেষ্টায় নিজের নামটুকু বলতে পারেন ওই যুবক। সঙ্গে উচ্চারণ করেন ‘কেতুগ্রাম’। ইন্টারনেট ঘেঁটে কেতুগ্রামের হদিশ পাওয়ার পরে হিঙ্গলগঞ্জের ওই ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করেন ‘হ্যাম রেডিয়ো’র সঙ্গে। তাঁরাই কেতুগ্রাম থানা ও ওই যুবকের পরিজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রবিবার বিকেলে কেতুগ্রামের উত্তরপাড়ার শ্যামল দাসকে প্রায় তিন সপ্তাহ পরে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যান তাঁর দাদারা।

যে কোনও জরুরি পরিস্থিতি, প্রাকৃতির বিপর্যয়ে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে হ্যাম রেডিয়ো। সারা বিশ্বেই বহু প্রচলিত এই মাধ্যম। এ ক্ষেত্রেও হারানো ব্যক্তিকে খুঁজে দিতে এর সদস্যদের সাহায্য নেন উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের ব্যবসায়ীরা। তাঁদেরই এক জন সুশান্ত ঘোষের দাবি, “বেশ কয়েকদিন ধরে শ্যামল কালিন্দী নদীর ধারে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। সেখানকার একটি মিষ্টির দোকানেই খাচ্ছিলেন। আমরাই ওই যুবককে আশ্রয় দিই। নাম ও গ্রামের নাম জানতে পেরেই হ্যাম রেডিয়োর সঙ্গে যোগাযোগ করি।’’ তাঁর আরও দাবি, বাংলাদেশ সীমান্তে হিঙ্গলগঞ্জ বাজার। এর আগেও মানসিক ভাবে অসুস্থ ৩৫ জনের ঘর খুঁজে দিয়েছেন তাঁরা।

‘হ্যাম রেডিয়ো, ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিয়ো ক্লাবে’র সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস বলেন, “সুশান্তবাবুর কাছেওই মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের খোঁজ পেয়ে কেতুগ্রাম থানায় যোগাযোগ করি। বাড়ির লোকজনেদের সঙ্গেও ফোনে কথা হয়। নিয়ম মেনেই নিখোঁজকে পরিজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শ্যামলের হাতে ফোন নম্বর ও ঠিকানা ট্যাটু করে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে বাড়ির লোকেদের। এতে ফের নিখোঁজ হলেও অসুবিধা হবে না।’’

পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্যামল দাস বিবাহিত। তাঁর এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তবে অসুস্থতার কারণে শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক নেই। কেতুগ্রামে নিজের বাড়িতে থেকে কখনও চালকলে, কখনও খেতজমিতে কাজ করতেন শ্যামল। কেতুগ্রাম থানার দাবি, নিখোঁজ ডায়েরি করা, বিভিন্ন থানায় ছবি-সহ মেসেজ পাঠানো হয়। কিন্তু উত্তর মেলেনি। পরিজনেরাও আত্মীয়স্বজনের বাড়ি খুঁজে তাঁর সন্ধান পাননি। এর মধ্যেই শনিবার রাতে কেতুগ্রাম থানা থেকে ডাক আসে। তাঁরা জানতে পারেন সুন্দরবনের কাছে হিঙ্গলগঞ্জে ভাই আছেন।

শ্যামলের দাদা খোকনবাবু বলেন, “ভাই গত এক বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন। কিন্তু গ্রাম ছেড়ে কোথাও যায়নি। এত দূরে কী ভাবে চলে এল, বুঝতে পারছি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘এখানকার মানুষজন যে ভাবে ভাইকে আগলে রেখেছেন, সেটা অবিশ্বাস্য। আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’’ অম্বরীশবাবু বলেন, “বারবার নাম ভুল বলছিলেন। পদবীও ঠিক বলতে পারছিলেন না। সে জন্য আমাদেরও শ্যামলবাবুর পরিবারের খোঁজ পেতে সমস্যা হয়। তবে ঘরের ছেলেকে ঘরে ফেরাতে পারছি, এটাই আনন্দের।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ketugram Mental health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE