অভিযোগ ওঠার পরে নাম-রঙ পাল্টে চলছে নার্সিংহোম। নিজস্ব চিত্র
এক বছরে পাল্টে গিয়েছে নাম। হলুদ থেকে ভবন হয়েছে নীল-সাদা। তবে শুধু এটুকুই। বদলায়নি আর কিছু।
শয্যা সংখ্যা থেকে চিকিৎসা পরিষেবার মান, পাল্টায়নি কোনও কিছুই। বর্ধমান শহরে নানা নার্সিংহোম চলছে আগের মতোই। তবে মুনাফার জন্য পাল্টেছে কাজের পদ্ধতি। ফাঁকা শয্যা ভরানোর জন্য কার্যত ‘ঠিকা’ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে দালালদের হাতে। রোগী জোগাড় থেকে ডাক্তারের ব্যবস্থা— সবই করে তারা। শুধু নির্দিষ্ট টাকা পেয়ে যান নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ।
এ ভাবে চুপিসারে নার্সিংহোমের ‘শয্যা বিক্রি’র ঘটনা অবশ্য জানতেই পারছে না স্বাস্থ্য দফতর। জানলেও কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে কি না, সে নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করছেন নার্সিংহোম মালিকেরাই। তাঁদের কথায়, ‘‘প্রকাশ্যে ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিসমেন্ট অ্যাক্ট ভেঙে নার্সিংহোম চালাচ্ছে যারা, তাদের বিরুদ্ধেই কোনও ব্যবস্থা নেই। সেখানে গোপনে চলা কোনও পদ্ধতি আটকাতে কী ব্যবস্থা নেবে স্বাস্থ্য দফতর?’’ তাঁদের দাবি, পুরো ব্যবস্থটায় যুক্ত রয়েছেন হাজার পাঁচেক ‘দালাল’। তাঁরাই কার্যত বর্ধমানের স্বাস্থ্য-পরিষেবা নিয়ন্ত্রণ করেন।
এই ‘শয্যা-বিক্রি’ কী ভাবে হয়? কারাই বা কেনেন? বিভিন্ন নার্সিংহোম মালিক, অ্যাম্বুল্যান্স চালক ও স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতি বছর বর্ধমান শহরে নার্সিংহোমের সংখ্যা বাড়ছে। খোসবাগান ছাড়িয়ে নার্সিংহোম গজিয়ে উঠছে নবাবহাট এলাকায়। গত কয়েক বছরে প্রায় ১৫টি নার্সিংহোম তৈরি হয়েছে। বাড়ি ভাড়া নিয়ে তৈরি হওয়া বেশিরভাগ নার্সিংহোমের ‘ক্লিনিক্যাল এস্টাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট’ অনুযায়ী লাইসেন্স থাকছে এক জনের নামে, কিন্তু কার্যক্ষেত্রে পরিচালনা করছেন অন্য লোকজন। তাঁরা নার্সিংহোম চালাতে গিয়ে দেখছেন, নিয়মিত শয্যা ফাঁকা পড়ে থাকছে। সে কারণেই ‘দালাল’দের মোটা টাকার বিনিময়ে শয্যা ভাড়া দেওয়ার পদ্ধতি চালু হয়েছে। একটি নার্সিংহোমের পরিচালকের কথায়, “আমাদের ৪৪টি শয্যা রয়েছে। কিন্তু দিনে ৮-১০ জনের বেশি রোগী হচ্ছিল না। অথচ, রোগী আনার জন্য শ’খানেক দালাল রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনকে মোটা টাকায় কুড়িটি শয্যা বিক্রি করে দিয়েছি। তাঁরাই রোগী নিয়ে আসেন। ডাক্তারের ব্যবস্থাও করেন।’’
নার্সিংহোম মালিকদের একাংশেরই দাবি, এই ব্যবস্থা বন্ধ করতে না পারলে ভবিষ্যৎ ভয়ঙ্কর হতে চলেছে। আগে চিকিৎসকেরা নার্সিংহোম তৈরি করতেন, তার পরে বড় ব্যবসায়ীরা এলেন। এখন গোটা ‘ব্যবসা’টাই চলে যাচ্ছে দালালদের হাতে। এমন দালাল-দৌরাত্ম্যের ঘটনা ঘটেছিল বর্ধমানের নবাবহাটের কাছে এক নার্সিংহোমে। রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল থেকে কলকাতার পিজি হাসপাতালে রেফার করা হয়েছিল ঝাড়খণ্ডের চুমকি লেটকে। অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্স চালক ভুল বুঝিয়ে ‘পিজি’ নার্সিংহোমে ভর্তি করান। অতিরিক্ত বিলের চাপে চুমকির বাবা আত্মঘাতী হন বলে অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছয়। প্রথমে ওই নার্সিংহোমকে শো-কজ, পরে লাইসেন্স বাতিলও করা হয়েছিল।
তবে একই ভবনে রং পাল্টে অন্য নামে নার্সিংহোম চলছে এখন। মালিকও রয়েছেন একই। এ নিয়ে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে চাননি। বর্ধমানের নার্সিংহোম মালিক সমিতির সম্পাদক শেখ আলহাজউদ্দিনের দাবি, “শয্যা ভাড়া বা বিক্রির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সত্যিই এ রকম ঘটনা ঘটে থাকলে সমিতিতে আলোচনা করা হবে।’’ বর্ধমানের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) প্রণব রায়ের বক্তব্য, “আমাদের কাছে এ রকম কোনও অভিযোগ আসেনি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy