গোলায় পড়ে ধান। নিজস্ব চিত্র।
আরও সমস্যায় এ রাজ্যের ধানচাষিরা।
নোট বাতিলের জেরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় সমবায়গুলি ধান কেনার প্রশ্নে আগেই হাত তুলে দিয়েছিল। রাজ্য সরকারও সহায়ক মূল্যে ধান কেনার সময় পিছিয়ে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শনিবার রাজ্যের চালকল মালিকেরাও জানিয়ে দিলেন, চলতি বছরে সরকারের ধান কেনার প্রক্রিয়ায় তাঁরা যোগ দেবেন না। তবে চালকল মালিকদের সংগঠনের তরফে এ দিন দাবি করা হয়, সরকারের কাছে গত বছরের বকেয়া টাকা না মেলার কারণেই এই সিদ্ধান্ত। নোট বাতিলের ধাক্কায় এমনিতেই গ্রামীণ অর্থনীতি জেরবার। নগদের অভাবে মার খাচ্ছে চাষ। মাঠ থেকে ধান তোলার শ্রমিকও মিলছে না জেলায় জেলায়। বহু চাষির গোলায় ধান মজুত হয়ে থাকলেও কেনার লোক মিলছে না।
সব মিলিয়ে কারণ যাই হোক, চালকল মালিকদের সিদ্ধান্তে সমস্যা আরও বাড়ল চাষিদের। চালকল মালিকদের অবশ্য দাবি, তাঁর এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ, গত কয়েক বছর ধানের দাম ও ধান ভাঙানোর জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে রাজ্য সরকারের কাছে সব মিলিয়ে প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা পাবেন তাঁরা। এই অবস্থায় ২০ ডিসেম্বর থেকে ধান কেনার জন্য মাঠে নামবে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। তার আগে এ দিন বর্ধমানে রাজ্যের চালকল মালিকদের সংগঠন ‘বেঙ্গল রাইস মিলস অ্যাসোসিয়েশন’-এর কর্মসমিতির সভায় ঠিক হয়, বকেয়া টাকা না পেলে চলতি বছরে রাজ্য সরকারের ওই সব সংস্থার কাছ থেকে তারা ধান কিনবে না। সংগঠনের সম্পাদক দীপঙ্কর প্রামাণিকের বক্তব্য, “আমরা সব স্তরে আমাদের দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু কোনও সুরাহা হয়নি। সে জন্য ১৭টি জেলার প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এ বার ধান কেনার প্রক্রিয়ায় আমরা যোগ দেব না।”
এই সিদ্ধান্ত শুনে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমরা কেন্দ্রের কাছে আড়াই হাজার কোটি টাকা পাব। তা এলেই চালকল ও সমবায় সমিতির বকেয়া শোধ করা হবে। আমরা একটা পরিবার। এই কঠিন পরিস্থিতিতে পরিবারের সদস্যেরা আমাদের পাশে থাকবেন বলে আশাবাদী।”
রাজ্য প্রায় ১২০০ চালকল রয়েছে। তার মধ্যে চালু ৮২৫টি। খাদ্য দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর অত্যাবশকীয় পণ্য নিগমের সঙ্গে ৬৭২টি চালকল সরকারের কাছ থেকে ধান কিনবে বলে নিবন্ধীকরণ করেছিল। শেষ পর্যন্ত ৫৯২টি চালকল ধান কেনে। তার মধ্যে রাজ্যে ১১টি চালকল বাদ দিয়ে সবাই সরকারকে ধান ভাঙিয়ে চাল ফেরত দিয়েছিল। খাদ্য দফতর ওই ১১টি চালকল মালিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করে। ওই সব চালকলকে কালো তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে খাদ্য দফতর। প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েও বেঙ্গল রাইস মিল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেবনাথ মণ্ডল বলেন, “সরকারের সংস্থা থাকলেও চালকল মালিকেরাই ধান কেনার জন্য লগ্নি করে থাকেন। সেই টাকা বছরের পর মিলছে না। আবার ধান ভাঙানোর খরচও দিচ্ছে না সরকার। এই অবস্থায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আমরা রাজ্য সরকারের কাছে দু’হাজার কোটি টাকা পাব। আমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে।” জলপাইগুড়ির চালকল মালিক বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য, উত্তর দিনাজপুরের উত্তম সাহারাও বলেন, “আমাদের আর কিছু করার নেই। যে কোনও দিন চালকল বন্ধ করে দিতে হবে।”
পরিস্থিতি যে খারাপ, তা আঁচ করেছে খাদ্য দফতরও। চলতি বছরে অত্যাবশকীয় পণ্য নিগমের কাছে নিবন্ধীকরণের জন্য তিন বার তারিখ বদলেও একশো চালকল জোগাড় হয়নি। পুরুলিয়া চালকল সমিতির সভাপতি মনোজ ফোকলার কথায়, “এই একটা তথ্যই বলে দিচ্ছে, আমরা সরকারের কাছ থেকে ধান কিনতে আগ্রহী নই।” চালকল মালিক সমিতির অন্যতম কর্তা আব্দুল মালেকের বক্তব্য, “ধান ভাঙানোর জন্য অন্য রাজ্যের চালকলগুলি আমাদের থেকে বেশি টাকা পায়। ধান ভাঙানোর খরচ দিন-দিন বাড়লেও আমাদের দেওয়া হয় কুইন্টাল প্রতি কুড়ি টাকা। এক কুইন্টাল ধান কিনে আমাদের নিয়মের বাইরে চার কেজি বেশি চাল দিতে হয়। সব দিক থেকেই আমরা মার খাচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy