Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অপহৃত হইনি, কোর্টে জানাল নাবালিকা

বিয়ের বয়স তার এখনও হয়নি। কিন্তু, প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিল ঘর বাঁধবে বলে। তার জেরে অপহরণের মামলায় নাম জড়ায় প্রেমিক ও তাঁর আত্মীয়দের। শেষে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে সেই নাবালিকা। আদালতে দাঁড়িয়ে জানায়, আঠারো বছর না হওয়া পর্যন্ত সে হোমেই কাটাতে চায়।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৮ ০০:৩৭
Share: Save:

বিয়ের বয়স তার এখনও হয়নি। কিন্তু, প্রেমিকের সঙ্গে বাড়ি ছেড়েছিল ঘর বাঁধবে বলে। তার জেরে অপহরণের মামলায় নাম জড়ায় প্রেমিক ও তাঁর আত্মীয়দের। শেষে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে সেই নাবালিকা। আদালতে দাঁড়িয়ে জানায়, আঠারো বছর না হওয়া পর্যন্ত সে হোমেই কাটাতে চায়। তার ইচ্ছাকে মান্যতা দিয়ে মন্তেশ্বরের কাইগ্রামের সেই নাবালিকাকে মঙ্গলবার হাওড়ার লিলুয়ার এক সরকারি হোমে পাঠানোর নির্দেশ দিল কালনা আদালত।

পুলিশ সূত্রের খবর, বছর সতেরোর মেয়েটি দশম শ্রেণির ছাত্রী। বছর খানেক আগে তার প্রেম হয় পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বছর বাইশের এক যুবকের সঙ্গে। তারা বিয়ে করবে স্থির করে। কিন্তু, এ বিয়ে মানেনি মেয়েটির পরিবার। মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে মেয়েটির বিয়ে দিতে, নানা জায়গায় সম্বন্ধ দেখা শুরু হয়। ওই নাবালিকার দাবি, মাস খানেক আগে প্রেমিকের সঙ্গে সে তারকেশ্বর পালায়। সেখানে তারা ‘বিয়ে’ও করে। নাবালিকার বাবা মন্তেশ্বর থানায় প্রেমিক, তাঁর জামাইবাবু এবং প্রেমিকের এক পরিচিতের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন। লিখিত অভিযোগে বলা হয়, ২২ মে সন্ধ্যায় ওই নাবালিকা পড়তে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বেরোয়। এর পর সে বাড়ি ফেরেনি।

অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ প্রেমিকের জামাইবাবুকে গ্রেফতার করে। কিন্তু, ওই নাবালিকা ও তার প্রেমিকের নাগাল পায়নি। সোমবার হঠাৎই মন্তেশ্বর থানায় এসে মেয়েটি আত্মসমর্পণ করে।

মঙ্গলবার নাবালিকাকে কালনা এসিজেএমের এজলাসে পেশ করে পুলিশ। তার আগে আদালতে তার গোপন জবানবন্দি নথিভুক্ত করা হয়। এর পরে বিচারকের সামনে সে বলে, মা-বাবার কাছে নয়, সে যেতে চায় হোমে। বিচারক সেই আবেদন মেনে নেন। আদালত থেকে বেরনোর পরে মেয়েটি জানায়, বাড়ি ছাড়ার পরে তারা নানা জায়গায় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। এর মাঝেই কানে আসে, প্রেমিকের জামাইবাবু গ্রেফতার হয়েছেন। মেয়েটির দাবি, ‘‘অথচ উনি নির্দোষ। আমার প্রেমিকও তো আমায় জোর করে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়নি! ধরা পড়লে ওকেও জেল খাটতে হবে। বাবা বিয়ে মেনে না নেওয়ায় বাড়ি ফেরারও উপায় ছিল না।’’ তাই তার আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত। মেয়েটির কথায়, ‘‘আদালতে তো বলতে পেরেছি, আমাকে অপহরণ করা হয়নি। স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছি।’’

হোমের উদ্দেশে এ দিন বিকেলে রওনা দেওয়ার আগে ওই নাবালিকা জানায়, ১৮ হতে বছর খানেক দেরি। বিশ্বাস রয়েছে, প্রেমিক তাকে হোম থেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে স্ত্রীর মর্যাদা দেবেন। সেই প্রেমিকের সঙ্গে এ দিন অনেক চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তাঁর মামা বলেন, ‘‘হোমে থাকাকালীন মেয়েটির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হবে। ও আঠারো বছরের হলে ভাগ্নের সঙ্গে ওর বিয়ে হবে।’’ মেয়েটির বাবার যদিও বক্তব্য, ‘‘আমার মেয়েকে কয়েক জন ভুল বুঝিয়েছে। তাই সে হোমে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’’

মেয়েটির প্রেমিকের জামাইবাবু এখনও জেল হেফাজতে রয়েছেন। এসডিপিও (কালনা) শান্তনু চৌধুরী জানিয়েছেন, অপহরণের মামলার তদন্ত যেমন চলছিল, তেমনই চলবে। তবে, কালনা আদালতের আইনজীবী অনিরুদ্ধ মণ্ডলের কথায়, ‘‘এই ধরনের মামলায় মেয়েটির জবানবন্দি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বহু ক্ষেত্রে এই জবানবন্দির উপরে নির্ভর করেই অভিযুক্তেরা জামিন পেয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Marriage Minor Kidnapped Court
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE