পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। ছবি: উদিত সিংহ
সাইকেলে করে স্কুলে যাচ্ছিল পড়ুয়ারা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি ট্রাক। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় এক ছাত্রীর। গুরুতর জখম হয় আরও দু’জন। পুলিশের ‘তোলাবাজি’ এড়াতে বেপরোয়া ভাবে পালাতে গিয়ে ট্রাকটি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, এই অভিযোগে ধুন্ধুমার বেধে গেল মেমারির রাধাকান্তপুরে। রাস্তা অবরোধ, পুলিশের গাড়িতে আগুন, আধিকারিকদের উপরে হামলা হল মঙ্গলবার দুপুরে। বিকেলে অবরোধ তুলতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ মেমারি-মন্তেশ্বর রোড ধরে রাধাকান্তপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের তিন পড়ুয়া স্কুলে যাচ্ছিল। বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কামালপুরে। অষ্টম শ্রেণির পড়ুয়া বাসন্তী হাজরা (১২) যাচ্ছিল একটি সাইকেলে। নবম শ্রেণির ছাত্রী পায়েল সর্দারের সঙ্গে সাইকেলে ছিল তার ভাই, পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়া অর্জুন।
প্রত্যক্ষদর্শী তথা ওই স্কুলেরই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সুমন হাজরা, তার মা শম্পা হাজরা বলেন, ‘‘আমরা ঠিক ওদের পিছনেই ছিলাম। হঠাৎ দেখি একটি মালবোঝাই ট্রাক কাঁপতে-কাঁপতে যাচ্ছে। তার পরেই একটি চাকা উঠে গিয়ে ধাক্কা মারে। ট্রাকের ডালা খুলে গিয়ে বাসন্তীর বুকে লাগে। রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে যায় ও।’’ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাসন্তীর। অর্জুনের মাথায় চোট লাগে। তাকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে। পায়েল বস্তায় চাপা পড়ে জখম হয়। তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অনাময় হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
জ্বলছে গাড়ি।
প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীর অনেকের দাবি, সাতগেছিয়া থেকে মেমারি পর্যন্ত পুলিশকর্মীদের একাংশ টাকা আদায়ে জুলুম চালায়। প্রতিটি মোড়ে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। এই কাণ্ড-কারখানা নিয়ে বাসিন্দারা বিরক্ত ছিলেন। এ দিনের ঘটনায় তাতে যেন ঘি পড়ে। দুর্ঘটনার পরেই ঘটনাস্থলে পৌঁছনো পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় ক্ষুব্ধ জনতা। পুলিশকে মারধর করে একটি গুদামঘরে আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। একটি বড় গাড়ি ঘটনাস্থলে এলে সেটিতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ক্ষতিপূরণ, বেপরোয়া যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশের ‘তোলাবাজি’ বন্ধের দাবিতে স্কুলের পড়ুয়ারা, শিক্ষকেরাও পথ অবরোধে শামিল হন। দোকান বন্ধ রেখে প্রতিবাদ জানান ব্যবসায়ীরাও। মহকুমাশাসক (বর্ধমান দক্ষিণ) অনির্বাণ কোলে ঘটনাস্থলে গেলে তাঁকেও হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাজ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রায় দু’শো পুলিশ রাধাকান্তপুর থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত বিভিন্ন মোড়ে যান। সব জায়গায় এলাকার লোকজন দাবি করেন, পুলিশের তোলাবাজির জন্যই এক ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এলাকার মানুষজন যখন অভিযোগ তুলছেন, আমরা বিশদে তদন্ত করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy