Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মোবাইলে ব্যস্ত নার্স, মৃত প্রসূতি

শুক্রবার সকালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন বর্ধমানের কাঞ্চননগরের বেলপুকুরের বাসিন্দা রিম্পা তালুকদার (২০)।

বিক্ষোভ হাসপাতালে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

বিক্ষোভ হাসপাতালে। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৮
Share: Save:

প্রসূতি যন্ত্রণায় ছটফট করলেও নজর দেননি নার্সেরা। তাঁরা বরং ব্যস্ত ছিলেন মোবাইলে গেম খেলায়— প্রসূতির মৃত্যুর পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই অভিযোগে দফায়-দফায় বিক্ষোভ দেখালেন পরিজনেরা। তাঁরা দেহ নিতে অস্বীকারও করেন। ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশ পৌঁছে পরিস্থিতি আয়ত্তে আনে। হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহার আশ্বাস, উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কর্তব্যরত অবস্থায় মোবাইল ব্যবহার নিয়েও প্রতিটি ওয়ার্ডে কড়া বার্তা পাঠানো হচ্ছে।

শুক্রবার সকালে প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন বর্ধমানের কাঞ্চননগরের বেলপুকুরের বাসিন্দা রিম্পা তালুকদার (২০)। সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ তাঁর যমজ কন্যাসন্তান প্রসব হয়। সে দিন ভাল থাকলেও শনিবার রাতে তিনি অসুস্থ বোধ করেন। তাঁর কাছে ছিলেন মা আলোদেবী। তাঁর অভিযোগ, “শনিবার সন্ধে থেকেই মেয়ে সমস্যায় ভুগতে শুরু করে। রাত বাড়ার সঙ্গে যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। একই সঙ্গে রক্তপাতও হচ্ছিল। গভীর রাতে আমি বারবার নার্সদের কাছে ছুটে গিয়েছি। কিন্তু তাঁরা আমার কথা না শুনে মোবাইলে গেম খেলতে ব্যস্ত ছিলেন। তাতে অসুবিধা হচ্ছিল বলে আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহারও করেছেন।” রিম্পাদেবীর স্বামী পঙ্কজ তালুকদারের ক্ষোভ, “শাশুড়ির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করে ওই সময় এক বার রিম্পাকে দেখতে গেলে ও মারা যেত না বলেই আমাদের ধারণা।”

অভিযোগ, নার্সেরা যখন ছুটে গিয়ে প্রসূতিকে দেখেছেন, ততক্ষণে রিম্পাদেবীর অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়েছিল। রবিবার সকালে এক জন জুনিয়র চিকিৎসক রিম্পাদেবীকে ইঞ্জেকশন দিয়ে অস্ত্রোপচার করার জন্য অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তখনই তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রোগীদের দেখভালের বদলে মোবাইলে চোখ থাকে নার্সদের, এমন অভিযোগ মাঝে-মধ্যেই ওঠে। কিন্তু নার্সদের এমন গাফিলতিতে রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠায় নড়ে বসেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিক রিপোর্টে জানা গিয়েছে, ঘটনার পিছনে নার্সদের গাফিলতি রয়েছে। প্রসূতির রক্তপাত হওয়ার পরেও কর্তব্যরত নার্সেরা তা গুরুত্ব দেননি।

প্রসূতির মৃত্যুতে শোকার্ত পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র

এ দিন সকালে মৃতের পরিজনেরা হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। তাঁদের অভিযোগ, “হাসপাতাল তো মোবাইলে গেম খেলার জায়গা নয়। নার্সদের এমন আচরণের জন্য কখনও রোগীর মৃত্যু হচ্ছে, আবার কখনও শিশু বদল হচ্ছে।” বিক্ষোভকারীদের সরাতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের একপ্রস্ত ধাক্কাধাক্কিও হয়। মৃতের পরিজন সাগরী হাওলাদারের কথায়, “সন্তানদের মুখ দেখার আগেই এক মা চলে গেলেন। নার্সদের মধ্যে এতটুকু অনুভূতিও কি থাকবে না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Negligence mobile Nurse
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE