প্রতীকী ছবি।
ফের দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টে (ডিএসপি) কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনায় মৃত্যু। এ বার এক আধিকারিকের। মৃত অনির্বাণ সিংহবাবু (৩১) কারখানার স্টিল মেল্টিং শপ (এসএমএস) বিভাগে সহকারী ম্যানেজার ছিলেন। তাঁর বাড়ি, ডিএসপি টাউনশিপের সি-জোনের ভগৎ সিংহ রোডে।
ডিএসপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল ১১টায় ‘কন্টিনিউয়াস কাস্টিং প্ল্যান্টে’ কাজ করার সময় আচমকা একটি ‘ডামি বার’-এর আঘাত লাগে ওই ম্যানেজারের মাথায়। ঘটনাস্থলেই তিনি লুটিয়ে পড়েন। তাঁকে প্রথমে প্ল্যান্ট মেডিক্যালে ও পরে ডিএসপি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ডিএসপি হাসপাতালে তাঁকে মৃত বলে জানানো হয়।
মৃতের স্ত্রী পেশায় শিক্ষিকা। তাঁদের বছর দেড়েকের এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তরুণ এই আধিকারিকের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে।
দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন ডিএসপি কর্তৃপক্ষ। তার জন্য এক জন জেনারেল ম্যানেজারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ডিএসপি-র মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক চিন্ময় সমাজদার বলেন, ‘‘খুবই মর্মান্তিক ঘটনা। দুর্ঘটনার কারণ ও ভবিষ্যতে ফের যাতে এমনটা না হয়, তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।’’
তবে এই মৃত্যুর পরে কারখানায় শ্রমিক, আধিকারিকদের নিরাপত্তায় অবহেলার অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। অভিযোগ, পর পর দুর্ঘটনাতেও হুঁশ ফেরেনি কর্তৃপক্ষের।
ডিএসপি সূত্রেই জানা যায়, গত এক বছরে কারখানায় দুর্ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। জখম হয়েছেন প্রায় ১৫ জন। গত বছর অক্টোবরে কোকআভেন প্ল্যান্টে কাজ করার সময় ক্রেন ছিড়ে ধাতব সামগ্রী পড়ায় গুরুতর জখম হয়ে মৃত্যু হয় এক ঠিকা শ্রমিকের। ১৯ নভেম্বর কোকআভেন প্ল্যান্টে ‘গ্যাস লিক’ হয়ে দু’জন ঠিকা শ্রমিকের মৃত্যু হয়। অসুস্থ হন আরও পাঁচ জন। ২৩ জানুয়ারি বিকেলে দু’নম্বর ব্লাস্ট ফার্নেস মেরামতির পরে পরীক্ষার সময়ে ‘ব্লাস্ট ফার্নেস গ্যাস’ লিক করে ছ’জন অসুস্থ হয়ে পড়েন। দু’জন স্থায়ী কর্মী, দু’জন ঠিকা শ্রমিক ছাড়াও তাঁদের মধ্যে দু’জন আধিকারিকও ছিলেন। বুধবার ফের এক আধিকারিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে এসএমএস বিভাগে। ওই বিভাগেই ২০১৬ সালের ২১ মার্চ দুর্ঘটনায় এক স্থায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়। জখম হন এক জন।
সিটু প্রভাবিত ‘হিন্দুস্থান স্টিল এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন’-এর যুগ্ম সম্পাদক সৌরভ দত্তের অভিযোগ, ‘‘উৎপাদন ও প্রজেক্টের কাজকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে কর্মী নিরাপত্তার দিকটি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’’ আইএনটিটিইউসি নেতা স্নেহাশিস ঘোষ জানান, কারখানায় নিরাপত্তার উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকার জন্যই ডিএসপি-তে বার বার দুর্ঘটনা ঘটছে। বিএমএস নেতা অরূপ রায়ের ক্ষোভ, ‘‘দীর্ঘ দিন কোনও সেফটি কমিটি নেই। বার বার বলার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। তারই ফল ভুগতে হচ্ছে শ্রমিকদের।’’
ডিএসপি কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, শ্রমিক, আধিকারিকদের নিরাপত্তার বিষয়টিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের মাথায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সেফটি অফিসার রয়েছেন। তা ছাড়া সামগ্রিক ভাবে বিষয়টি তদারক করার জন্য সেফটি ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ রয়েছে। চিন্ময়বাবু বলেন, ‘‘নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যাবতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়াও দুর্ঘটনা এড়াতে নিরন্তর সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করা হয়। তার পরেও এমন প্রাণহানি খুবই দুঃখজনক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy