Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

প্রশাসন-ইসিএল যোগাযোগ কম, তাই জ্বলে আগুন

সাম্প্রতিক সময়ে বার বার কখনও জল পাম্প করে, কখনও বা অবৈধ খনিমুখে বালির বস্তা ঠেকিয়ে আগুনের সঙ্গে যুঝতে দেখা গিয়েছে জেলা প্রশাসন ও দমকলকে। কিন্তু খনিতে দরকার তরল নাইট্রোজেন পাঠানো।

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৪৩
Share: Save:

সাম্প্রতিক সময়ে বার বার কখনও জল পাম্প করে, কখনও বা অবৈধ খনিমুখে বালির বস্তা ঠেকিয়ে আগুনের সঙ্গে যুঝতে দেখা গিয়েছে জেলা প্রশাসন ও দমকলকে। কিন্তু খনিতে দরকার তরল নাইট্রোজেন পাঠানো। খনি লাগোয়া চুরুলিয়া, জয়নগর-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রযুক্তি বা প্রক্রিয়া জানা থাকলেও আসলে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে ইসিএলের যোগাযোগের অভাবেই খনি থেকে বার বার আগুন বার হতে দেখা যাচ্ছে।

ব্লক প্রশাসন জানায়, এ পর্যন্ত দু’ভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা চলেছে। কী তা? প্রথমত, যেখানে আগুন জ্বলছিল, সেখানে একটি জলভর্তি পরিত্যক্ত খাদান রয়েছে। পাম্পের সাহায্যে সেখান থেকে জল তুলে অনবরত খনির মধ্যে ঢোকানোর কাজ চলছে। দ্বিতীয়ত, খনি লাগোয়া এলাকায় মাটি ও পাথরের ঢিবি (‘ওভারবার্ডেন’) রয়েছে, যা প্রধানত খনির বর্জ্যেই তৈরি হয়েছে। সেই ঢিবি কেটে অবৈধ খনিমুখ বন্ধের কাজ চলছে।

আর এই কাজ নিয়েই উঠেছে প্রশ্ন। দমকলেরই প্রাক্তন আধিকারিকদের মতে, শুধুমাত্র জল ছিটিয়ে এই আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব নয়। আর যা করলে আগুন নিভবে, সেই তরল নাইট্রোজেন খনিতে পাঠানোর প্রযুক্তি বা বিশেষজ্ঞদল দমকলের কাছে নেই। যদিও বিষয়টি নিয়ে আসানসোল ডিভিশনের দমকল আধিকারিক দেবায়ন পোদ্দার বলেন, ‘‘প্রশাসনের নির্দেশেই আমরা ওখানে শুধু জল দেওয়ার কাজ করেছি।’’

খনি বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে জেলা প্রশাসনের দ্রুত ধানবাদের সেন্ট্রাল মাইনিং ফুয়েল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের পরামর্শমতো পদক্ষেপ করা দরকার। কিন্তু ধানবাদ কেন, হাতের কাছেই তো রয়েছে ইসিএলের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা। তাদের কাছ থেকেও তো প্রযুক্তিগত ও অন্য সহযোগিতা চাইতে পারে জেলা প্রশাসন। এই বিষয়টি নিয়ে নানা জনের নানা মত ভেসে আসছে। ইসিএলের সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ের বক্তব্য, ‘‘আমাদের কাছে তেমন কোনও সহযোগিতা চাওয়া হয়নি।’’ যদিও জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম রায়ের বক্তব্য, ‘‘ইসিএলের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের মতামত ও সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। তবে পুরো কাজটি ব্লক প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে চলছে।’’

‘কাজ’ মানে তরল নাইট্রোজেন খনিগর্ভে আগুনের উৎসস্থলে পাঠানো হচ্ছে কি? বিডিও (জামুড়িয়া) অনুপম চক্রবর্তীর বক্তব্য, ‘‘এই কাজটি একা ব্লক প্রশাসনের পক্ষে করা সম্ভব নয়।’’ বিডিও জানান, গোটা পরিস্থিতি ইতিমধ্যেই ওয়েস্ট বেঙ্গল পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশনকে জানিয়ে তাদের কারিগরি সহায়তা চাওয়া হয়েছে। পরামর্শ নেওয়া হয়েছে ইসিএলের সালানপুর এরিয়া কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও। কিন্তু এই খনিটির সঙ্গে যেহেতু ইসিএলের প্রত্যক্ষ যোগ নেই তাই ওই সংস্থার থেকে বিশেষ কারিগরি সহায়তা চাওয়া হচ্ছে না বলে জানান অনুপমবাবু।

এই দাবি, পাল্টা দাবির ভিড়েই আগুনে-আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। তাঁদের দাবি, দ্রুত আগুন নিভিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্দিষ্ট দরে জমি অধিগ্রহণ করা হোক। চালু হোক খনি। বাঁচুক নাগরিক জীবন। খনি বিশেষজ্ঞ অনুপ গুপ্তেরও আর্জি, ‘‘দেশের এই বিপুল কয়লা-সম্পদ এবং নাগরিক জীবনকে রক্ষার বিষয়ে সরকার বা ইসিএল, কেউই উদাসীন থাকতে পারে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coal Mine ECL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE