Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযোগ মেমারি কলেজের অধ্যক্ষের

শিক্ষাকর্মীর দাপটে তটস্থ শিক্ষকেরাই

মুকেশ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বরং মেমারি কলেজের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেই নালিশ ঠুকে চিঠি দিয়েছে।

ক্ষুব্ধ: মেমারি কলেজের ঘেরাও হয়ে থাকা অধ্যক্ষ ও শিক্ষকেরা, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

ক্ষুব্ধ: মেমারি কলেজের ঘেরাও হয়ে থাকা অধ্যক্ষ ও শিক্ষকেরা, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৮ ০২:৫৬
Share: Save:

এক শিক্ষাকর্মীর ‘দাপটে’ তাঁদের তটস্থ হয়ে কলেজ করতে হচ্ছে—এমনই অভিযোগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হলেন মেমারি কলেজের শিক্ষকেরা।

বুধবার দুপুরে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন রাজবাটীতে মেমারি কলেজের অধ্যক্ষ দেবাশিস চক্রবর্তী-সহ ১৮ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা রেজিস্ট্রার এবং কলেজ সমূহের পরিদর্শকের সঙ্গে দেখা করে কী অবস্থার মধ্যে তাঁদের কলেজে কাজ চালাতে হচ্ছে, তা জানান। তাঁদের অভিযোগ, গরমের ছুটি নিয়ে দু’দিন ধরে কলেজে অচলাবস্থা চলছিল। তার জেরে অধ্যক্ষ-সহ চার শিক্ষককে হেনস্থা করা হয়। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের মেমারি ১ ব্লকের সভাপতি তথা কলেজেরই শিক্ষাকর্মী মুকেশ শর্মা এ সবের পিছনে বলে অভিযোগ।

মুকেশ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বরং মেমারি কলেজের টিএমসিপি পরিচালিত ছাত্র সংসদ এ দিন শিক্ষামন্ত্রীর কাছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধেই নালিশ ঠুকে চিঠি দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে ওই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগ, মুকেশ শিক্ষাকর্মী হওয়া সত্ত্বেও কলেজ পরিচালনায় নাক গলাচ্ছেন। গত ২৬ মে পরিচালন সমিতির বৈঠকে ঠিক হয়, ২৯ মে থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন ছুটি দেওয়া হবে। অধ্যক্ষ বিজ্ঞপ্তিও জারি করেন। সোমবার মুকেশ কলেজে এসে তাঁর ‘অনুমতি’ ছাড়া কী ভবে ওই ছুটির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হল, তা জানতে চান। অভিযোগ, রীতিমতো হুমকি দিয়ে ছুটির বিজ্ঞপ্তি বাতিল করার দাবি জানান তিনি। অধ্যক্ষ ওই দিনই জরুরি বৈঠক করেন। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা ছাড়াও কলেজের ছাত্র সংসদের নেতারা ছিলেন। বৈঠক চলাকালীনই অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের হেনস্থা করা হয়। অধ্যক্ষকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আটকে রাখা হয়। দেবাশিসবাবু বলেন, “আমাকে জল দেওয়া হয়নি। বাথরুমেও যেতে দেওয়া হয়নি। বৈঠকে ছুটি আপাতত বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়।’’

মঙ্গলবার কলেজে একটি ফর্ম নিয়ে মুকেশ আসেন। অধ্যক্ষের অভিযোগ, “মুকেশ দাবি করে এই ফর্ম উপাচার্য পাঠিয়েছেন। কোন শিক্ষক ক’দিন কলেজে এসেছেন, কোন সময় ক্লাস করেছেন, তা লিখে দিতে হবে। স্বাভাবিক ভাবেই ওই দাবি শিক্ষকেরা মানতে চাননি।’’ এ দিন কলেজের শিক্ষক অনুপম গড়াই, সুকান্ত সাহারা বলেন, ‘‘আমরা জানাই, এ রকম কোনও ফর্ম এলে অধ্যক্ষ বা পরিচালন সমিতির কাছে আসবে। কোনও শিক্ষাকর্মীর কাছে আসবে না। এর পরেই দুপুর ১টা থেকে অনুগত ছাত্রদের দিয়ে আমাদের ঘেরাও করায় মুকেশ।’’

কলেজ সূত্রের খবর, রাত পর্যন্ত ঘেরাওয়ের ফলে চার জন শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাতেই পরিচালন সমিতির সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থেকে শিক্ষামন্ত্রীকে ফোন করে বিষয়টি জানান অধ্যক্ষ। তিনি তাঁদের কাছে ইস্তফা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সে জন্য ১২ জুন পরিচালন সমিতির বিষয়সূচির দু’নম্বরে অধ্যক্ষের ইস্তফার বিষয়টি রাখা হয়েছে।

এ দিন রেজিস্ট্রারের সঙ্গে দেখা বেরনোর পরে শিক্ষকদের আক্ষেপ, ‘‘মেমারি কলেজে পড়ানোর পরিবেশ নেই। আমাদের নিরাপত্তাও নেই।’’ তাঁদের দাবি, এর আগেও মুকেশ কলেজে পরিচালন ব্যবস্থায় নাক গলিয়েছেন। এমনকি মুকেশকে শিক্ষাকর্মী হিসাবে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে অভিযোগ তুলে কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন মেমারির প্রাক্তন বিধায়ক আবু হাশেম মণ্ডল। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার রমেন সর এ দিন বলেন, “শিক্ষকেরা ভয়াবহ পরিস্থিতিতে রয়েছেন। এক জন শিক্ষাকর্মী বা ছাত্র নেতার জন্য শিক্ষকেরা কলেজে যেতে ভয় পাচ্ছেন, এ রকম হয় নাকি! পুরো বিষয়টি উপাচার্যকে জানিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

অভিযুক্ত মুকেশের যদিও দাবি, “আমি এ সব ব্যাপারে ছিলাম না। আমার সম্বন্ধে লেখা হলে মানহানির মামলা করব।’’ মুকেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন মেমারি ১ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা কলেজ পরিচালন সমিতির বর্তমান সভাপতি মধুসূদন ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “অধ্যক্ষ আমার কাছে মুকেশের কথা বলেছেন। কিন্ত, খোঁজ নিয়ে দেখলাম ঘটনার দিন মুকেশ মেমারিতেই ছিল না! বর্ধমানে দলের কাজে গিয়েছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Principal Non-teaching staff Memari College
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE