Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
ক্ষুব্ধ হকারেরা, বর্ধমান-আসানসোল রুটেও ট্রেন চালানোর দাবি
Indian Railways

বর্ধমানে যাত্রী কমল, খানিক বৃদ্ধি কাটোয়ায়

কাটোয়ায় এ দিন প্রায় ন’হাজার যাত্রী ট্রেনে উঠেছেন বলে রেল সূত্রে জানা যায়।

বাঁ দিকে, বর্ধমান স্টেশনে যাত্রীরা। মাঝে, বর্ধমান-আসানসোল লোকাল ট্রেন চলছে না, ফাঁকা গলসি স্টেশন। ডান দিকে, ট্রেন ঢুকতেই দূরত্ব-বিধি ভুলে হুড়োহুড়ি কালনায়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, বর্ধমান স্টেশনে যাত্রীরা। মাঝে, বর্ধমান-আসানসোল লোকাল ট্রেন চলছে না, ফাঁকা গলসি স্টেশন। ডান দিকে, ট্রেন ঢুকতেই দূরত্ব-বিধি ভুলে হুড়োহুড়ি কালনায়। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ০৪:২৫
Share: Save:

প্রথম দিনে তেমন যাত্রী না হলেও ধীরে-ধীরে তা বাড়বে, বুধবার আশা করেছিলেন রেলের কর্তারা। বর্ধমান-হাওড়া কর্ড ও মেন লাইনে বৃহস্পতিবার ঘটল তার উল্টো। এ দিন এই দুই শাখায় বুধবারের চেয়েও কম যাত্রী যাতায়াত করেছেন বলে রেল সূত্রের দাবি। তবে কাটোয়া-হাওড়া শাখায় আগের দিনের তুলনায় এ দিন যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে বলে আধিকারিকেরা জানিয়েছেন। এর মধ্যে আসানসোলে ও রামপুরহাট শাখায় ট্রেন চালানোর দাবি তুলেছেন নিত্যযাত্রীরা।

সাড়ে সাত মাস পরে, বুধবার থেকে হাওড়া ডিভিশনের সাবার্বান এলাকায় ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। প্রথমে অর্ধেক ট্রেন নিয়ে যাত্রা শুরু করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত বেশিরভাগ লোকাল ট্রেনই চালাচ্ছে রেল। পূর্ব রেলের কমার্শিয়াল ইনস্পেক্টর পদমর্যাদার এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘বুধবারের তুলনায় বৃহস্পতিবার বর্ধমান স্টেশন দিয়ে প্রায় অর্ধেক যাত্রী হাওড়া গিয়েছেন। কাটোয়া লাইনেও ভিড় বেশি ছিল না। তবে পূর্বস্থলী থেকে কালনা পর্যন্ত বুধবারের চেয়ে ভিড় বেশি ছিল।’’

যাত্রী কম কেন? রেলের আধিকারিকদের দাবি, সপ্তাহের অন্য দিনের চেয়ে বৃহস্পতিবার ভিড় তুলনামূলক ভাবে কম হয়। তা ছাড়া, শুক্রবার ধনতেরস রয়েছে। এখনও পুরোদমে অফিস-কাছারি চালু হয়নি। স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে। তবে সোম-মঙ্গলবার থেকে ভিড় বাড়বে বলে তাঁদের ধারণা। বুধবার ট্রেনগুলি মেমারি স্টেশন পার হওয়ার পর থেকে ভিড় বেড়েছিল। এ দিন সেই ভিড়ও দুই-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে বলে রেল সূত্রের দাবি।

এ দিন বর্ধমান স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের ‘থার্মাল গান’ দিয়ে পরীক্ষা, মাস্ক ও স্যানিটাইজ়ার ব্যবহারের জন্য প্রচার চলছে। আরপিএফ প্ল্যাটফর্মে টহল দিচ্ছে। বর্ধমানের মতো মেমারি, শক্তিগড়, কাটোয়া স্টেশনেও পরীক্ষা হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও কিছু যাত্রীকে মাস্ক খুলে রাখতে দেখা গিয়েছে। মুখ আ-ঢাকা রেখেই ট্রেনের ভিতরে গল্প করতে দেখা গিয়েছে অনেককে। দূরত্ব-বিধিরও বালাই নেই। বর্ধমান থেকে আদিসপ্তগ্রাম যাচ্ছিলেন সুপ্রিয়া মুখোপাধ্যায়, সন্তু রায়েরা। মুখে মাস্ক না থাকার কারণ প্রসঙ্গে তাঁদের জবাব, ‘‘আট নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ট্রেন ছাড়ছে। ছুটে এসে ট্রেন ধরতে হল। হাঁফিয়ে উঠেছি। তা ছাড়া, আমরা সবাই পরস্পরের পরিচিত। সে জন্য মাস্ক আপাতত খুলে রেখেছি।’’

কাটোয়ায় এ দিন প্রায় ন’হাজার যাত্রী ট্রেনে উঠেছেন বলে রেল সূত্রে জানা যায়। কালনা, সমুদ্রগড়, পাটুলি থেকে এ দিন বুধবারের তুলনায় বেশি মানুষ ট্রেনে ওঠানামা করেছে। পূর্বস্থলীর পর থেকে কোনও আসন ফাঁকা ছিল না। কাটোয়ার মিঠু সরকার, কালনার সুদীপ সামন্তদের অভিযোগ, ‘‘পূর্বস্থলীর পরে, ভাল ভিড় হয়েছে। কোনও নিয়মনীতি ছিল না। এ ভাবে চলতে থাকলে করোনা সংক্রমণ কিন্তু বাড়বে।’’

বর্ধমান স্টেশনে ঘেরা জায়গার বাইরে এ দিন সকাল থেকে টোটোর ভিড় ছিল। সেখানে গাদাগাদি করে যাত্রীদের টোটোতে উঠতে দেখা যায়। তবে অন্য সময়ের তুলনায় টোটোর ভিড় কম ছিল বলে আশপাশের বাসিন্দাদের দাবি। টোটো চালকদের অনেকে দাবি করেন, যাত্রী কম হচ্ছে বলে স্টেশনে টোটো কম ঢুকছে। যাত্রী বাড়লেই স্টেশন জুড়ে টোটো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাবে। স্টেশনের বাইরে বা প্ল্যাটফর্মে এ দিনও হকারদের বসতে দেয়নি পুলিশ। তবে কাটোয়া লাইনের ট্রেনে কয়েকজন হকারকে দেখা গিয়েছে। কালনার হকার কৃষ্ণ দেবনাথের দাবি, ‘‘সকালে ট্রেনে যাত্রী বেশি ছিল। কিন্তু বিক্রিবাটা সে ভাবে হয়নি।’’ ব্যবসা করতে দেওয়ার দাবিতে এ দিন কাটোয়া স্টেশনে স্মারকলিপি দেন হকারেরা।

মেমারি স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের পাশেই দোকান খুলে বসেছেন মেমারি শহরের সুলতানপুরের আসলেমা বেগম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘অনেক মাস পরে, বুধবার কিছুটা বিক্রি হয়েছে। বৃহস্পতিবার বাজার ভাল ছিল না।’’ কাটোয়ার হকার সৈকত সাহা ট্রেনে বোতলের জল বিক্রি করেন। তাঁর দাবি, ‘‘বোতলের জল বিক্রিতে রেল বাধা দিচ্ছে না বলে শুনেছি। তবে কয়েকটা দিন দেখার পরে বিক্রি করব।’’ রেলের আধিকারিকেরা অবশ্য জানান, আপাতত হকারদের প্ল্যাটফর্মে বসা বা ট্রেনে ওঠা নিষেধ। বিক্ষিপ্ত ভাবে নিয়মভঙ্গের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ দিনই আসানসোল-বর্ধমান রুটে লোকাল ট্রেন চালুর দাবিতে গলসির স্টেশন ম্যানেজারের কাছে স্মারকলিপি দিল ডিওয়াইএফ। বৃহস্পতিবার সংগঠনের গলসি ২ অঞ্চল কমিটির নেতা মনসিজ হোসেনের নেতৃত্বে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়। তাঁদের দাবি, গরিব যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে অন্য রুটের মতো বর্ধমান-আসানসোল রুটেও দ্রুত ট্রেন চালাতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Indian Railways West Bengal lockdown Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE