Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

‘হাসপাতালে আছি, কিন্তু চিকিৎসা কই’

এক সপ্তাহ ধরে ভর্তি রয়েছেন বর্ধমানের চাঁদসোনা গ্রামের সরস্বতী পাত্র। বুধবার রাতে তাঁর সপ্তাহখানেকের সন্তান মারা যায়।

বন্ধ বহির্বিভাগ, ঘুমিয়ে রোগীর পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র।

বন্ধ বহির্বিভাগ, ঘুমিয়ে রোগীর পরিজনেরা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৯ ০১:১৬
Share: Save:

প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ বর্ধমান মেডিক্যালে ভর্তি হন কাটোয়ার চাণ্ডুলী গ্রামের মধুমিতা পাল। তাঁর স্বামী সুব্রত পালের অভিযোগ, ভর্তির পর থেকেই কোনও চিকিৎসক দেখেননি। ন্যূনতম পরিষেবাও মেলেনি। বুধবার রাতে মারা যায় গর্ভস্থ সন্তান। বৃহস্পতিবার সকালে অস্ত্রোপচার করে বের হয় তাকে। সুব্রতবাবু বলেন, ‘‘হাসপাতালের যা পরিস্থিতি কোথা অভিযোগ করব, কার কাছেই বা অভিযোগ করব! ডাক্তারেরা রোগীদের পাশে দাঁড়ালে আমার মতো অনেককে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হবে না।’’

এক সপ্তাহ ধরে ভর্তি রয়েছেন বর্ধমানের চাঁদসোনা গ্রামের সরস্বতী পাত্র। বুধবার রাতে তাঁর সপ্তাহখানেকের সন্তান মারা যায়। স্বামী লব পাত্রের দাবি, ‘‘স্ত্রী ছেলের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। দেখার কেউ নেই। বাড়ি নিয়ে যেতে চাই। কিন্তু ছুটি দেওয়ারও কেউ নেই।’’

বীরভূমের দাসকল গ্রামের মধুমিতা গড়াই সিয়ান থেকে বর্ধমান মেডিক্যালে এসেছেন তিন দিন আগে। তাঁর অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার বিকেলে। কিন্তু বৃহস্পতিবারও তা হয়নি। মধুমিতাদেবীর দাবি, মাসখানেক আগে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে শিশুকন্যার জন্ম দেন তিনি। ইঞ্জেকশন দিতে গিয়ে ভেতরে থেকে যায় সূচ। বর্ধমানে অস্ত্রোপচার করে সেটিই বার করার কথা ছিল। কিন্তু এক মাসের সন্তানকে নিয়ে মাটিয়ে শুয়ে কাতরাচ্ছেন তিনি। তাঁর এক আত্মীয়ের ক্ষোভ, ‘‘হাসপাতালে আছি, কিন্তু চিকিৎসা কই!’’

উপরের ছবিগুলি এনআরএসের সমর্থনে বর্ধমান মেডিক্যালে চলা জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির তৃতীয় দিনের। অন্য দিন যে হাসপাতালে চলাফেরার জায়গা থাকে না, আশপাশের জেলা, পড়শি রাজ্য থেকে রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা আসেন। এ দিন সব সুনসান। পুলিশের দাবি, অন্যান্য দিন হাসপাতালের বহির্বিভাগ ও ইন্ডোর মিলে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আসেন। এ দিন সব ছিল ফাঁকা। চিকিৎসকদের দাবি, বুধবারের ঘটনার পরে হাসপাতালের পরিষেবায় ব্যঘাত হচ্ছে এটা সবাই জেনে গিয়েছেন। তাই রোগীরা আসেননি। হাসপাতালের বাইরে বিভিন্ন দোকানের ঝাঁপও বন্ধ ছিল এ দিন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ইন্টার্ন, পিজিটি মিলে ৭৩০ জন ডাক্তার কাজ না করায় সমস্যা হয়েছে। বারবার সিনিয়র ডাক্তার, শিক্ষক-চিকিৎসকদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

এ দিন সকাল ১০টা থেকে হাসপাতালের ভেতর অবস্থান শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। বহির্বিভাগের পাশ থেকে উঠে এসে ধর্না চলে পুরনো সিটি স্ক্যান ঘরের সামনে। এ দিনও হাসপাতালের দুটি গেট বন্ধ করে দিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। তবে জরুরি বিভাগের দিকের দরজা খোলা ছিল। বহির্বিভাগ বন্ধ ছিল। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জরুরি বিভাগের মূল দরজা ও হাসপাতালের দুটি গেট খোলার জন্য বারবার জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু তাদের অবস্থান বদলায়নি। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ জরুরি বিভাগের দোতলায় দুই চিকিৎসক একেবারে মুর্মুষু রোগীদের ভর্তি নেন। সকাল ৬টায় বন্ধ হওয়া গেট তখনও খোলা যায়নি। গেটে তালা, বাইরে বেঞ্চ, ভেতরে হাসপাতালের বেড এনে ভিড়িয়ে দেওয়া হয়। দফায় দফায় গেট ‘পাহারা’ দিচ্ছেলেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। পরিস্থিতি হাতের বাইরে আন্দাজ করে ডিএসপি বর্ধমান সদর সৌভিক পাত্রের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশ বাহিনি জরুরি বিভাগের সামনে আসে। সওয়া ৩টে নাগদ জরুরি বিভাগের মূল গেটের সামনে পৌঁছন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সুহৃতা পাল, সুপার উৎপল দাঁ, ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা। হাতুড়ির ঘায়ে তালা ভাঙা হয়। ভেতরের বারান্দায় থাকা তিন রোগীর চিকিৎসা শুরু হয়। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে বহির্বিভাগ খোলার প্রয়োজনের কথা বোঝান। আন্দোলনকারীরা রাতে অবস্থান তুললেও সকাল ফের তা চলবে বলে জানান।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Burdwan Medical College Doctor's Protest NRS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE