Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Corp Insurance

‘টাকা দিচ্ছে’, ভিড় ব্যাঙ্কে

কেন আচমকা এমন ভিড়?

ব্যাঙ্কের সামনে। নিজস্ব চিত্র

ব্যাঙ্কের সামনে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:০৩
Share: Save:

ঠা ঠা রোদ। তার মধ্যেই কালনার ধাত্রীগ্রাম এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে লম্বা লাইন। হাতে পাসবই নিয়ে লাইনে হাজির গৃহবধূ, চাষি, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী থেকে স্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইন দিয়ে কেউ বার হলেও হাসিমুখে, কেউ ফিরলেন চুপচাপ। ধাত্রীগ্রাম এবং নান্দাই পঞ্চায়েত এলাকার অন্তত চারটি ব্যাঙ্কে সোমবার সকাল থেকে ভিড় সামাল দিতে নাজেহাল হলেন সিভিক ভলান্টিয়ারেরা।

কেন আচমকা এমন ভিড়?

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল থেকেই কারও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ১৫ হাজার, কারও ২০ হাজার কুড়ি ঢুকেছে বলে খবর ছড়ায়। শুরু হয় পাসবই ‘আপডেট’ করানোর ভিড়। পরে অবশ্য জানা যায়, শুক্রবার থেকে ফসল বিমার টাকা ঢুকতে শুরু করেছে চাষিদের ‘সেভিংস অ্যাকাউন্টে’। কালনাতেও যাঁরা টাকা পেয়েছেন তা ওই বিমার বলে দাবি প্রশাসনের একাংশের।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, শনি-রবিবার থেকেই মোবাইলে টাকা ঢোকার ‘মেসেজ’ আসতে শুরু করে কয়েকজনের। কালনার দুই পঞ্চায়েত এলাকায় চায়ের দোকান, পাড়ার মাচা, গ্রামের বারোয়ারিতলায় লোকে বলতে শুরু করেন, কেন্দ্র সরকার প্রত্যেক অ্যাকাউন্টে টাকা দিচ্ছে। প্রত্যেকেরই নিজের অ্যাকাউন্ট নিয়ে শুরু হয় কৌতুহল। অনেকেই মনে করেন, হয়তো কোনও কারণে ‘মেসেজ’ আসেনি। কিন্তু পাসবই ‘আপডেট’ করলেই জানা যাবে টাকা ঢুকেছে। সই কারণেই সোমবার ব্যাঙ্ক খোলার আগে থেকেই লাইন পড়ে যায়।

ধাত্রীগ্রাম এলাকায় এসটিকেকে রোডের পাশে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, অন্য দিন তিনশো-র কাছাকাছি গ্রাহক আসেন। এ দিন তার আট গুণ লোক এসেছেন। ভিড় সামাল দিতে সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাঁদের। ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক চন্দনকুমার বণিক বলেন, ‘‘একটি সংস্থা বিমার অর্থ বহু সেভিংস অ্যাকাউন্টে পাঠিয়েছে। যাঁরা পাননি তাঁরাও পাসবই পরীক্ষা করাতে এসেছেন।’’ তাঁদের দাবি, এলাকার যত জনের অ্যাকাউন্ট রয়েছে প্রায় প্রত্যেকেই পাসবই নিয়ে হাজির হয়েছেন। প্রত্যেকেরই আশা, যদি কোনও ভাবে টাকা ঢোকে।

এ দিন দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে পাসবই আপডেট করান কলেজ ছাত্র পরিমল ঘোষ। তাঁর দাবি, ‘‘অনেকেই বলছিল সবার অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকছে। তাই এসেছিলাম। কিন্তু পাসবই পরীক্ষা করে দেখলাম, কোনও টাকা আসেনি।’’ বেলা বাড়তে পরিমলের মতো অনেকের কাছেই স্পষ্ট হয়, ফসল বিমার টাকা চাষিদের অ্যাকাউন্টে ঢুকেছে। যদিও কেউ কেউ দাবি করেন, চাষের জমি না থাকলেও তাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সবচেয়ে বেশি গুজব ছড়ায় নান্দাই এলাকায়। এক তৃণমূল নেত্রীর পরিজনের অ্যাকাউন্টে ২১ লক্ষ টাকা ঢুকেছে বলেও খবর ছড়ায়। যদিও তিনি দাবি করেন, পুরোটাই গুজব। এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান ঝুমুর ঘোষের দাবি, ‘‘স্থানীয় অনেকেরই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢুকেছে বলে শোনা গিয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে কয়েকমাস আগে ফসল বিমার জন্য যে ফর্ম পূরণ করা হয়েছিল, এটা তারই টাকা।’’

খবর পৌঁছয় রাজ্যের প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের কাছেও। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভার অধিবেশন চলছে। সেখানেই আমি বিষয়টি কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। উনি জানিয়েছেন, ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষের বাংলা শস্যবিমার অর্থ চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর কাজ শুরু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corp Insurance Farmer Bank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE