Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পথেই বিপদ, দুর্ঘটনায় পরপর মৃত্যুতে ক্ষুব্ধ জনতা

শুক্রবার ভাতারের কালটিকুরি গ্রামে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরে পথ-নিরাপত্তার এমন হালের কথা বারবার সামনে আসছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। আর সেই কারণে বাড়ছে জনতার ক্ষোভও।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সৌমেন দত্ত
ভাতার শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৭:৩০
Share: Save:

কখনও দু’ধার কাটা হয়েছে বলে। কখনও বা রাস্তার ধারে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকা। অভিযোগ একটাই, ভাতারের নানা এলাকায় এমন নানা কারণে সঙ্কীর্ণ হচ্ছে বাদশাহী রোড ও লাগোয়া পথঘাট। বাড়ছে পথের বিপদ। সেই সঙ্গে শুক্রবার ভাতারের কালটিকুরি গ্রামে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরে পথ-নিরাপত্তার এমন হালের কথা বারবার সামনে আসছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী। আর সেই কারণে বাড়ছে জনতার ক্ষোভও।

মাস দুয়েক আগে ভাতারের ধরমপুর গ্রামের শেখ নুরুল ইসলামের (৬৩) দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পরে ধরমপুর-সহ তিনটি গ্রামের লোক দল বেঁধে ঘটনাস্থলে থাকা ট্রাক, ডাম্পার ও মাটি কাটার যন্ত্রে আগুন ধরায় বলে অভিযোগ। একই রকম ভাঙচুর ও আগুন ধরানোর অভিযোগ উঠেছে শুক্রবারেও।

কিন্তু কেন ক্ষোভ?বাসিন্দাদের অভিযোগ, সন্ধ্যার পরে থেকেই কালটিকুরি মোড়ে অন্তত ৩০-৪০টি গাড়ি রাস্তার উপরেই দাঁড় করানো থাকে। দেখা যায়, গাড়ি থামিয়ে চালকেরা ঢুকে পড়ছেন স্থানীয় ধাবা, হোটেলগুলিতে। এর জেরে রাস্তা ছোট হয়ে যায়। এই কারণেই গত কয়েক মাসে এই রাস্তায় বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। শুধু তাই নয়, হোটেল, ধাবার লোকজনদের বিরুদ্ধে অন্য অভিযোগও রয়েছে। স্থানীয় এক যুবকের কথায়, “কয়েক মাস আগে ওই রাস্তায় গাড়ি দাঁড়ানো দেখে ছবি তুলেছিলাম। হোটেল-ধাবার লোকজন মোবাইল কেড়ে আমাকে আটকে রাখে। ছবিগুলি ডিলিট করার পরে ছাড়া পেয়েছিলাম।’’

গাড়ি এ ভাবে রাস্তার ধারে দাঁড় করানো থাকায় রাস্তা তো সরু হচ্ছেই, সেই সঙ্গে উল্টো দিক থেকে আসা গাড়িও দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ। স্থানীয়দের ক্ষোভ, ওই রাস্তায় বেশ কয়েকটি ‘হাম্প’ থাকলেও তার জন্য কোনও ‘সতর্কতামূলক’ বোর্ড টাঙানো নেই। এর ফলে দ্রুতগতির গাড়ি ‘হাম্পে’র কাছে এসে নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছে। এমনকি, গত কয়েক মাসে বেশ কিছু গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দোকানে-বাড়িতে ঢুকে পড়েছে।

এ দিন মারতুবা গ্রামে গিয়ে জানা গিয়েছে, গত কয়েক মাস ধরে একের পর দুর্ঘটনার কারণে মানুষ ক্ষিপ্ত। ওই রাস্তার উপরেই সম্প্রতি মুরাতিপুর, কালটিকুরি, আলিনগর, ন’পাড়ায় সাত-আটটি
দুর্ঘটনা ঘটেছে।

গত ৬ এপ্রিল বাদশাহী রোডের উপর কালুত্তক গ্রামে এক প্রবীণের পিক-আপ ভ্যানের ধাক্কায় মৃত্যু হয়। তার পরে টানা তিন ঘণ্টা পথ অবরোধ হয়। এর আগে গত ২৫ মে ধরমপুর গ্রামের বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। এরুয়ারেও ডাম্পারের ধাক্কায় গত ২৪ মার্চ মারা যান খেতমজুর নিমাই রায় ও রাকেশ রায়। ফের ৩০ মার্চ স্থানীয় পাটনা গ্রামে ডাম্পারের সঙ্গে গাড়ির ধাক্কায় সূরয শেখ ও সুচলিতা কর্মকার নামে দু’জনের মৃত্যু হয়।

তবে শুক্রবারের ঘটনার যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ব্যবসায়ীরা। শেখ আব্বাসউদ্দিন নামে এক ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘নিজের জায়গায় ব্যবসা করি। তার পরেও এই ঘটনা।’’ তবে রাস্তার গাড়ি দাঁড়ানোর বিষয়ে তাঁদের কোনও ভূমিকা নেই বলেই দাবি ব্যবসায়ীদের।

বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, পূর্ত দফতর থেকে প্রশাসন ‘চুপ’ থাকার জন্যই এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। যদিও প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, ‘‘যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। তা বলে দোকান ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করাও বেআইনি। জেলা প্রশাসন পূর্ত দফতরের সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাস্তার ধারে বেদখল হয়ে যাওয়া জায়গা দখলমুক্ত করা হবে। একই সঙ্গে রাস্তা থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বেই দোকান তৈরির অনুমোদন দেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Road Accident Bhatar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE