অনিয়ম: এ ভাবেই নদী-বাঁধের উপরে দিয়ে অবাধে চলে যাতায়াত। কেতুগ্রামের বারান্দায়। নিজস্ব চিত্র
বাঁধের উপরে দিয়েই চলছে গাড়ি। কোথাও বা গজিয়ে উঠেছে বসতি। প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, এমনই নানা কারণে আলগা হয়ে যাচ্ছে অজয়ের নদী-বাঁধ। এর জেরে ফি বছর বাড়ছে বন্যার আশঙ্কাও। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, কাটোয়া মহকুমা জুড়েই বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণে প্রশাসন এ যাবৎ তেমন উদ্যোগী হয়নি। তবে সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে সেচ দফতরকে উদ্যোগী হতে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, অজয়ের দক্ষিণে কটোয়া ১-এ বাঁধের দুই কিলোমিটার ও মঙ্গলকোটের ১২ কিলোমিটার অংশ ‘জমিদারি বাঁধ’। এই ১৪ কিলোমিটার এলাকা ‘দামোদর ইরিগেশন সার্কেলে’র অধীনে, যার কার্যালয় কাটোয়ায়। এ ছাড়া অজয়ের বাঁধের কেতুগ্রাম অংশটি দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে ‘ময়ূরাক্ষী সাউথ ক্যানাল ডিভিশন’, যার কার্যালয় বীরভূমের বোলপুরে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাটোয়া, কেতুগ্রামের বারান্দা-সহ সর্বত্রই অজয়ের পুরনো বাঁধের (জমিদারি) উপরে দিয়ে বছরভর গরু, মোষ চলাচল করে। এ ছাড়া ছোট-বড় গাড়ি, বালিবোঝাই গাড়িও চলে। প্রশাসনের একটি সূত্রের মতে, অনেক জায়গায় বাঁধ থেকে ন্যূনতম দূরত্ব বাদ না দিয়ে বসতি গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া ইউক্যালিপটাস, বট-সহ নানা বড় গাছ মরে যাওয়ার পর মাটি তলায় সেগুলির শিকড় পচে গিয়ে মাটিতে শূন্যস্থান তৈরি হচ্ছে। বর্ষায় সেই ‘ফাঁকা’ জায়গা দিয়ে জল ঢোকে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ইঁদুরের গর্তের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, এ সব কারণে বাঁধের স্থিতিশীলতা কমে যাচ্ছে।
প্রশাসনের সূত্রে জানা গিয়েছে, এত দিন জমিদারি বাঁধের দেখভালের দায়িত্বে ছিল স্থানীয় পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি। কিন্তু কেতুগ্রামের রসুইয়ের তপন রায়, মঙ্গলকোটের শ্যামবাজারের নারায়ণ মুখোপাধ্যায়দের অভিযোগ, বাঁধের অধিকাংশ জায়গায় প্রয়োজনমতো মাটি বা বোল্ডার দেওয়া হয় না। তা ছাড়া বাঁধের মাটি চুরির অভিযোগও রয়েছে।
সম্প্রতি কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোটে বাঁধের দেখভালের জন্য বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বিষয়টি নিয়ে বিধানসভায়, সেচমন্ত্রীর কাছেও তদ্বির করেন। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমানে জেলা সফরের সময়েও মুখ্যমন্ত্রীর নজরে আনেন বিষয়টি। বিধায়কের দাবি, ‘‘পঞ্চায়েতের সীমিত তহবিলে সব সময় বাঁধ দেখভাল ঠিক ভাবে হয় না। এই কাজে সেচ দফতর দায়িত্ব নিলে সমস্যা মেটে।’’ বিধায়কের এই আর্জি শুনে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন, পঞ্চায়েত যেটুকু করার করবে। বাঁধের বাকি অংশের দেখভালের কাজ করবে সেচ দফতর।
মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পরেই ঠিক হয়েছে, বাঁধে মাটি দেওয়ার কাজ করবে স্থানীয় পঞ্চায়েত। তারপরে বোল্ডার ফেলা, ‘কান্ট্রিসাইডে’ (বসতি লাগোয়া এলাকায়) ঘাস লাগানো, মোরাম দেবে সেচ দফতর। মহকুমা সেচ আধিকারিক সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘এখনও লিখিত কোনও নির্দেশ আসেনি। তবে পঞ্চায়েত সমিতি মাটি দেওয়ার পরে বাঁধ হস্তান্তর হলে আমরা রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy