Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

নজরুলের কর্মস্থলের স্মৃতি সংরক্ষণ চেয়ে আবেদন শহরে

ওসমান, তাঁর ছেলে আসিফ জানান, কয়েক বছর আগে বেকারি ভবনটি ভেঙে একটি মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু নজরুল যে অফিসে বসে কাজ করতেন, সেটি আপাতত অক্ষত। কিন্তু তা-ও ভেঙে ফেলার তোড়জোড় চলছে বলে দাবি তাঁদের।

এখানেই হিসেব রক্ষকের কাজ করতেন নজরুল। ছবি: শৈলেন সরকার

এখানেই হিসেব রক্ষকের কাজ করতেন নজরুল। ছবি: শৈলেন সরকার

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৩:০১
Share: Save:

একটু একটু করে ভাঙছে চুন-সুরকির গাঁথনি। আর প্রমাদ গুণছেন কয়েক জন। তাঁদের আশঙ্কা, এই ঘরটাও যদি এক দিন ভেঙে পড়ে। প্রমাদ গোণারই কথা। কারণ, আসানসোল বাজারে ঘাঁটি গলির ওই ঘরটাই যে কাজী নজরুল ইসলামের কর্মস্থল ছিল। নজরুল গবেষকদের দাবি, এই ঘরটি কবির স্মৃতিতে সংরক্ষণ করা হোক।

ঘাঁটি গলিতে গেলেই নজরে পড়বে মেহের আলি বক্স কেক পেস্ট্রির দোকান। দোকান সামলাচ্ছেন মেহের আলি বক্সের নাতি তথা বর্তমান মালিক ওসমান গনি। বিকিকিনির দায়িত্ব সামলাতে সামলাতেই তিনি জানান, দাদুর মুখে শুনেছেন নজরুলের কথা। ওসমান জানান, মেহের আলি বক্স ১৮৮০ সালে এমএ বক্স নামে বেকারিটি তৈরি করেন। এখানেই মূলত হিসেব রক্ষকের কাজ করতেন নজরুল। গবেষকেরা জানান, এখানে কাজ করার সময়েই আসানসোলের পুলিশের এক দারোগার ভাইপোর সঙ্গে বন্ধুত্বও তৈরি হয় নজরুলের।

এর পরে দীর্ঘ দিন কেটে গিয়েছে। দামোদর দিয়ে গড়িয়েছে অনেক জল। জীর্ণ হয়েছে বেকারি ভবনটিও। সম্প্রতি বর্ষায় ভবনের একাংশ ভেঙে পড়ে। শহরের নিরাপত্তার কথা ভেবে আসানসোল পুরসভা ভবনটিকে বিপজ্জনক ঘোষণা করে। বাড়ি ভাঙার কাজে হাতও দিয়েছেন ভবনের মালিক। আর এতেই মন ভার নজরুলপ্রেমীদের। আসানসোলের নজরুল সেন্টার ফর সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজের ডেপুটি ডিরেক্টর শ্রীকান্ত রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘এই বেকারিই নজরুলের প্রথম কর্মস্থল। পুরসভার উচিত এটিকে কবির স্মৃতিসৌধ হিসেবে সংরক্ষণ করা।’’ শ্রীকান্তবাবু জানান, এ দেশ তো বটেই, বাংলাদেশের নজরুল গবেষকেরাও নিয়মিত এই কর্মস্থল পরিদর্শনে আসেন। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, বাংলাদেশের নজরুল গবেষক আনিসুজ জামান, রামেদুল আলম প্রমুখও ভবনটি সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন। একই কথা বলেছেন নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সাধন চক্রবর্তীও।

ওসমান, তাঁর ছেলে আসিফ জানান, কয়েক বছর আগে বেকারি ভবনটি ভেঙে একটি মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু নজরুল যে অফিসে বসে কাজ করতেন, সেটি আপাতত অক্ষত। কিন্তু তা-ও ভেঙে ফেলার তোড়জোড় চলছে বলে দাবি তাঁদের। নজরুল-স্মৃতিকে সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে কবির ব্যবহৃত চেয়ার-টেবিলটিও সযত্নে রেখেছেন ওসমান। গোটা বিষয়টির কথা জেনে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতি তথা বাংলা সাহিত্যের প্রবীণ অধ্যাপক বারিদবরণ ঘোষেরও দাবি, ‘‘এই ঘরটি সংরক্ষণ হলে আসলে কবির স্মৃতিকেই সম্মান জানানো হবে। সেটা হলে আগামী দিনের নজরুল গবেষকরাও উপকৃত হবেন।’’ তবে মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘‘ভবনটির মালিকের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছি। তিনি রাজি থাকলে সব ব্যবস্থাই করব।’’ তবে এ পর্যন্ত সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বিশেষ আশার আলো দেখা যায়নি বলেই মনে করছেন শহরের নজরুলপ্রেমীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kazi Nazrul Islam conservation Asansol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE