Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
কেতুগ্রামে আট মাস আগে বধুর মৃত্যু

তিন ঘণ্টা খুঁড়েও দেহ মিলল না

ঘটনাটি কেতুগ্রামের চিনিশপুরের। বছর পাঁচেক আগে বীরভূমের লাভপুর থানার গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা নাসরিন বানোর (২৬) সঙ্গে বিয়ে হয় চিনিশপুরের আতাউর রহমানের।

খোঁড়াখুঁড়ি: চিনিশপুরে বুধবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

খোঁড়াখুঁড়ি: চিনিশপুরে বুধবার দুপুরে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২০
Share: Save:

যুবতীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে শ্বশুরবাড়ির লোকজন দেহ পুঁতে দেয়, অভিযোগ করেছিল মৃতার বাপের বাড়ি। আট মাস পরে কাটোয়া আদালতের নির্দেশে বুধবার ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর খুঁড়ে সেই মৃতদেহ তোলার চেষ্টা হলেও দেহই মিলল না!

ঘটনাটি কেতুগ্রামের চিনিশপুরের। বছর পাঁচেক আগে বীরভূমের লাভপুর থানার গঙ্গারামপুরের বাসিন্দা নাসরিন বানোর (২৬) সঙ্গে বিয়ে হয় চিনিশপুরের আতাউর রহমানের। নাসরিনের বাপের বাড়ির অভিযোগ, বিয়ের রাত থেকেই পণ এবং আরও জিনিসপত্রের দাবি জানিয়ে নাসরিনের উপরে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন সেনাকর্মী আতাউর ও তাঁর পরিবারের সকলে। গত ১২ এপ্রিল গভীর রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে মেয়ের অসুস্থতার খবর পান নাসরিনের বাবা, পেশায় কৃষক দানিউল হক। তাঁদের দাবি, ওই রাতেই চিনিশপুরে পৌঁছে নাসরিনকে শ্বশুরবাড়ির বারান্দায় মৃত অবস্থায় দেখেন। পর দিন দুপুরেই স্থানীয় ছাতানপার কবরস্থানে কবর দেওয়া হয় নাসরিনকে।

আরও অভিযোগ, থানায় অভিযোগ যাতে না হয়, সে জন্য চিনিশপুরের বাড়িতেই চার দিন আটকে রাখা হয় দানিউল, তাঁর স্ত্রী নুরসোভা বেগম এবং ছোট মেয়ে শামিম বানুকে। শামিমের অভিযোগ, ‘‘এর পরে কয়েক মাস ধরে কেতুগ্রাম থানায় ঘুরলেও নানা অছিলায় অভিযোগ নেওয়া হয়নি। শেষে ১৩ নভেম্বর কাটোয়া আদালতে অভিযোগ জানাই।’’

নাসরিন বানো।

যদিও কেতুগ্রাম থানা সূত্রে দাবি করা হয়েছে, নাসরিনের মৃত্যুর পরে তাঁর পরিবার একবারও থানায় আসেনি। আদালতে আতাউর, তাঁর বাবা রবিউল আলম, মা শেফালি বেগম, তিন দাদা-বৌদি এবং বন্ধু শেখ হিল্লাল-সহ ১০ জনের বিরুদ্ধে বধূ নির্যাতন খুনের অভিযোগ দায়ের করেন নুরসোভা। এ দিন তিনি দাবি করেন, ‘‘নাসরিনের স্ট্রোক হয়েছিল বলে জানিয়েছিল জামাই ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। কিন্তু, আমরা তো জানি, আমার মেয়ের কোনও শারীরিক সমস্যা ছিল না। ওকে গলা টিপে মারা হয়েছিল।’’ নাসরিনের চার বছরের ছেলে রয়েছে। সে এখন মামার বাড়িতেই থাকে।

২২ নভেম্বর কাটোয়ার এসিজেএম কবর কুঁড়ে নাসরিনের দেহ তোলার নির্দেশ দেন। বুধবার কেতুগ্রাম থানার পুলিশের সহায়তায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রট গৌতম মণ্ডল দেহ উদ্ধারে যান। কিন্তু, আতাউরের বাড়ির থেকে ৫০০ মিটার দূরে ওই কবরস্থানে ঘণ্টা তিনেক খোঁড়াখুড়ি করা হলেও দেহ মেলেনি। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘সাড়ে চার মিটার লম্বা ও ১০ মিটার চওড়া গর্ত খুঁড়েও দেহ পাওয়া যায়নি। আদালতের নির্দেশ মতো পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’

মৃতার এক আত্মীয় ও স্থানীয় বাসিন্দারা যে জায়গা চিনিয়ে দিয়েছিলেন, সেখানেই মাটি খোঁড়া হলেও দেহ না মেলায় ক্ষুব্ধ মৃতার পরবার। শামিমের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ-প্রশাসন অসহযোগিতা করেছে। দেহ কোথায় গেল তা হলে?’’ খোঁড়াখুঁড়ির পরে দেহ যে পাওয়া যায়নি, সেই মর্মে নাসরিনের বাড়ির লোকজনের সই নিতে চেয়েছিল প্রশাসন। সই করতে তাঁরা রাজি হননি। মৃতার বোন শামিমের ক্ষোভ, ‘‘অভিযোগের পরেও কেন অভিযুক্তরা গ্রেফতার হল না? কোথায় মৃতদেহ আছে, তা ওরা দেখিয়ে দিলে উদ্ধার সম্ভব হত।’’

এখন বড় প্রশ্ন হল, নাসরিনের দেহ তা হলে কোথায়? যারা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারত, সেই আতাউরের পরিবার চিনিশপুর গ্রামে নেই। পুলিশেরও দাবি, অভিযুক্তেরা পলাতক। এ দিন ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, আতাউরদের বড় তিনতলা বাড়িটি তালাবন্ধ। সব জানলাও বন্ধ। স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, কবর খুঁড়ে নাসরিনের দেহ খোঁজা হবে, এই খবর গ্রামে চাউর হতেই আতাউরের পরিবার গা ঢাকা দিয়েছে। স্থানীয় বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান বকুল শেখ নাসরিনের বাপের বাড়ির অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, ‘‘নাসরিনের মৃত্যুর পরে ওর বোনের সঙ্গেই আতাউরের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বাবা-মা। আতাউররা তাতে রাজি না হওয়ায় ওদের ফাঁসানো হচ্ছে।’’ এই অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন নুরসোভা, শামিমরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Soil Digging Dead body
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE