একের পর এক খুন। প্রায় একই কায়দায়। আর চুপি সাড়ে পরপর দুষ্কর্ম ঘটিয়ে গা ঢাকা দিচ্ছে দুষ্কৃতী। প্রতি ক্ষেত্রেই পুলিশ জানাচ্ছে, তদন্ত চলছে। কিন্তু জেলা পুলিশের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, দুষ্কৃতী সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত সে রকম কোনও গুরুত্বপূর্ণ সূত্র মেলেনি। আর এই পরিস্থিতিতে পূর্ব বর্ধমানের কালনা, মেমারি, হুগলির পাণ্ডুয়া-সহ নানা প্রান্তে মহিলা খুন বা খুনের চেষ্টার ঘটনার কিনারা কোন পথে, তা নিয়ে ধন্দই বেশি বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
পুলিশ জানায়, খুনগুলির তদন্তে নেমে মূলত ছ’টি ধন্দ সামনে আসছে।
ধন্দ এক: পুলিশের অনুমান, ঘটনাগুলির সঙ্গে একজন অপরাধীর যোগ থাকতে পারে। কিন্তু ঘটনাস্থলগুলির দূরত্বগত বিষয়টি সে অনুমানেও প্রশ্ন রাখছে। যেমন, মন্তেশ্বরে যেখানে মহিলাকে খুন করা হয়, তার থেকে কালনার সিঙেরকোন, অর্থাৎ যে এলাকায় কিশোরীকে খুনের চেষ্টা করা হয়, তার দূরত্ব অন্তত ৭০ কিলোমিটার! প্রতিটি ক্ষেত্রেই মহিলারা যখন বাড়িতে একাই থাকছেন, হামলার জন্য সেই সময়কেই বেছে নিচ্ছে দুষ্কৃতী। কিন্তু কী ভাবে এক জন দুষ্কৃতীর পক্ষে বিভিন্ন জায়গা বেছে বেছে কোন সময় বাড়ি ফাঁকা থাকছে তা জানা সম্ভব হচ্ছে, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে বলে জানান জেলা পুলিশের এক আধিকারিক। তা হলে অন্য কোনও দুষ্কৃতী কি ‘খুনি’-কে সহযোগিতা করছে, প্রশ্ন পুলিশের অন্দরে।
ধন্দ দুই: প্রথমে কালনা, মেমারি, পাণ্ডুয়ার মতো এলাকায় অপরাধ দেখে তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে মনে করেছিলেন, এই নির্দিষ্ট বৃহত্তর এলাকাটি দুষ্কৃতীর চেনা। কিন্তু মন্তেশ্বরে খুনের ঘটনার পরে সেই ধারণাও কত দূর ঠিক তা নিয়ে তৈরি হয় ধন্দ।
ধন্দ তিন: বিস্তীর্ণ এলাকা কোনও ‘এক জনের’ যদি অত্যন্ত ভাল ভাবে চেনা না হয়, তা হলে কী ভাবে বিভিন্ন এলাকায় দুষ্কর্ম ঘটিয়ে গা ঢাকা দিচ্ছে খুনি। প্রশ্ন উঠেছে এমনও।
ধন্দ চার: তদন্তকারীদের সূত্রে জানা যায়, ঘটনাগুলির সঙ্গে যুক্ত দুষ্কৃতী কোনও ফোন ব্যবহার করে না। ফলে তদন্তের কাজ ভীষণই কঠিন হয়েছে। দু’টি ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে ব্যাগ ও একটি রড উদ্ধার হয়। পুলিশ জানতে পারে একটি লাল মোটরবাইকে চড়ে দুষ্কৃতী দুষ্কর্ম করে পালিয়ে যায়। লাল মোটরবাইকের সূত্রে হয় তল্লাশিও। কিন্তু রড, ব্যাগ বা বাইক, এই তিনের সূত্র ধরে তদন্ত হলেও এ যাবৎ খুনি সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায়নি, খবর
পুলিশ সূত্রে।
ধন্দ পাঁচ: প্রথম দিকের কিছু খুনের ঘটনায় দেহের কাছে উদ্ধার হচ্ছিল বিশেষ এক ধরনের চেন। সেই সূত্রে তদন্তও শুরু করে পুলিশ। কিন্তু মেমারির বড়া গ্রামের খুনের পরে দেখা যায়, আর চেন পেঁচিয়ে নয়, এ বার মাথায় আঘাত করে খুন করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে খুনের ‘ধরন’ বদলানোয় খুনির নাগাল পেতে আরও সমস্যা হচ্ছে বলে সূত্রের দাবি।
ধন্দ ছয়: অতীতের বিভিন্ন রেকর্ড ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে জেলায় এমন খুনের সঙ্গে জড়িত কোনও অপরাধী নেই। ফলে এই দুষ্কৃতী আদৌ জেলার না কি অন্য কোথাও থেকে আসছে, সে বিষয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে।
যদিও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সৈকত ঘোষ বলেন, ‘‘তদন্ত তো জোরকদম চলছে। জোর দেওয়া হচ্ছে সচেতনতা প্রচারের কাজেও। সিঙেরকোনের ঘটনাটি নিয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা চালানো হচ্ছে।’’ কী ধরনের প্রচার? পুলিশ সূত্রে খবর, প্রচারে সচেতনতা বাড়লে দুষ্কৃতী সম্পর্কে কোনও তথ্য মিললেও মিলতে পারে। এমনকি, ফের দুষ্কর্ম ঘটাতে গেলে জালেও পড়তে পারে। সেই ‘আশা’ থেকে ইতিমধ্যেই কালনা থানা এলাকায় টোটো-র মাধ্যমে শুরু হয়েছে প্রচার। কোনও অচেনা মানুষকে বাড়িতে ঢোকার সুযোগ না দেওয়া-সহ বেশ কিছু বিষয়ে প্রচার চালানো হচ্ছে বলে
পুলিশ জানায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy