Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
মেমারিতে বন্ধ নাবালিকার বিয়ে

মণ্ডপ তৈরি, ফোনের ‘ভয়ে’ এল না পাত্র

রাত ১১টা। বরের খোঁজে হুড়মুড় করে বিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়েন ব্লক প্রশাসন, পুলিশ ও চাইল্ড লাইনের কর্তারা। নিমন্ত্রিতদের ফিসফাসের মধ্যেই ছুটে আসেন পাত্রীর বাবা বাপন রুইদাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেমারি শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৫৭
Share: Save:

রাত ১১টা। বরের খোঁজে হুড়মুড় করে বিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়েন ব্লক প্রশাসন, পুলিশ ও চাইল্ড লাইনের কর্তারা। নিমন্ত্রিতদের ফিসফাসের মধ্যেই ছুটে আসেন পাত্রীর বাবা বাপন রুইদাস। হাত দুটো জড়ো করে বলেন, ‘সব আয়োজন হয়ে গিয়েছিল। নিমন্ত্রিতরাও এসেছেন। কোনও ত্রুটি রাখিনি। কিন্তু যার জন্যে এত আয়োজন, সেই বাবাজীবনই আসেনি। তাই বিয়েও হয়নি।”

কথাটা অবশ্য পুরোপুরি বিশ্বাস হয়নি চাইল্ড লাইনের কর্তাদের। সোজা খাবার জায়গায় চলে যান তাঁরা। সেখানে তখন একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া হলুদ রঙের চুড়িদার পড়ে বসে খাচ্ছে। শেষ পাতের খাবার ছেড়েই চাইল্ড লাইনের কর্তাদের কাছে ছুটে যায় সে। সকলের সামনে জানিয়ে দেয়, ‘বর আসেনি। এখন বিয়ে নয়, পড়তে চাই।’ হাঁফ ছেড়ে বাঁচেন কর্তারা।

গাড়িতে ওঠার আগে বর্ধমানের চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর অভিজিৎ চৌবে বলেন, “দুপুরে এসে বাড়ির লোককে বুঝিয়ে গিয়েছিলাম ১৮ বছরের নীচে মেয়ের বিয়ে দেওয়া অপরাধ। তারপরেও সন্ধ্যায় খবর পাই পাত্র সমুদ্রগড় থেকে গাড়ি নিয়ে বুলবুলিতলা পর্যন্ত চলে এসেছে। তখন ফোনে নাবালিকাকে বিয়ে করলে আইন অনুযায়ী কী কী পদক্ষেপ নিতে পারি সেটা জানানো হয়। বোধ হয় সে কারণেই, বাবাজীবন শেষ পর্যন্ত আসেনি।’’

শুক্রবার দিনভর এমন ঘটনার সাক্ষী থাকল মেমারি ২ ব্লকের শ্রীধরপুর। ওই দিন দুপুরে ব্লক অফিস থেকে তাঁদের একাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়ার বিয়ের খবর পান প্রধান শিক্ষক সুকান্ত দাস। স্কুল পরিচালন সমিতির সদস্যদের নিয়ে গিয়ে নাবালিকার বিয়ে না দেওয়ার কথা বলে আসেন তাঁরা। মেয়েটির পরিজনেরা কথাও দেন। এর পরে চাইল্ড লাইন পুলিশ ও ব্লকের প্রতিনিধিদের নিয়ে হাজির হন মেয়েটির বাড়ি। চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধি অতনু ঘোষ বলেন, “তিন মেয়ে বলে ভাল পাত্র পেতেই তাড়াতাড়ি এক মেয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত করা হয়েছিল বলে জানানো হয়েছিল। আমাদের কথা শোনার পরে মেয়ের বাবা ও মা আমাদের কাছে মুচলেকা দিয়ে জানান ১৮-র আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না।’’ কিন্তু বিয়ের অনুষ্ঠান বন্ধ হয়নি। সন্ধ্যা হতেই নিমন্ত্রিতেরা চলে আসেন। বরযাত্রীও চলে আসে। খাবার পরিবেশনও শুরু হয়ে যায়। চাইল্ড লাইন ও পুলিশের কাছে খবর যায়, বিয়ে হয়ে গেল বোধহয়। এর পরেই বরপক্ষকে ফোন করেন তাঁরা। তার পরেও রাতে মেয়েটির বাড়ি গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলে আশ্বস্ত হন কর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Child Marriage Police Crime Memari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE