Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

ফল বেরোতেই মামলা তোলার চাপ, অভিযোগ

প্রতিরোধের মাসুল দিতে হয়েছিল ভোটের দিনই। বুথের কাজ সামলে ফেরার পথে খুন হয়েছিলেন খণ্ডঘোষের লোধনা গ্রামের দুই সিপিএম কর্মী শেখ ফজল ও দুখীরাম ডাল। তারপর থেকে থম মেরে গিয়েছিল দুই পরিবারই। ১৯ মে ভয়ের জায়গা নিল আতঙ্ক।

এই কালভার্টেই মারধর করা হয়েছিল নিহত কর্মীদের। ফাইল চিত্র।

এই কালভার্টেই মারধর করা হয়েছিল নিহত কর্মীদের। ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৬ ০২:১১
Share: Save:

প্রতিরোধের মাসুল দিতে হয়েছিল ভোটের দিনই।

বুথের কাজ সামলে ফেরার পথে খুন হয়েছিলেন খণ্ডঘোষের লোধনা গ্রামের দুই সিপিএম কর্মী শেখ ফজল ও দুখীরাম ডাল। তারপর থেকে থম মেরে গিয়েছিল দুই পরিবারই। ১৯ মে ভয়ের জায়গা নিল আতঙ্ক।

দুই পরিবারেরই দাবি, ভোটের পর থেকেই তাঁরা ‘গৃহবন্দি’। বৃহস্পতিবার রাতের পর থেকে দুই ছেলে ঘরছাড়াও। কারণ? তাঁদের অভিযোগ, গ্রামের মূল রাস্তা দিয়ে সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের আসা-যাওয়া ইতিমধ্যেই বন্ধ করে দিয়েছে তৃণমূল। দুই কর্মীর সাইকেল ও মোটরবাইক সারানোর দোকান বন্ধ করে দেওয়ারও ফরমান জারি করা হয়েছে। আর হুমকি, চাপ তো রয়েইছে। তার উপর ৩৯ বছর পরে বামফ্রন্টের হাত থেকে খণ্ডঘোষ বিধানসভা ছিনিয়ে নেওয়া নিশ্চিত হতেই, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে জোড়া খুনের মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নিহত পরিবারের উপর তৃণমূল চাপ দিতে শুরু করেছে বলে তাঁদের অভিযোগ।

যদিও অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছেন রায়না-খণ্ডঘোষের দায়িত্বে থাকা জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক উত্তম সেনগুপ্ত। তিনি বলেন, “আমি ও আমার দুই বিধায়ক কলকাতায় গিয়েছিলাম। এ রকম কোনও খবর আমাদের কানে আসেনি। দলের নির্দেশে কোনও রকম অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না।”

২১ এপ্রিল, চতুর্থ দফা ভোটে লোধনা গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে ১০৮ নম্বর বুথে সিপিএমের এজেন্ট হয়েছিলেন ফজল শেখ। সঙ্গী ছিলেন প্রবীণ সিপিএম কর্মী দুখীরাম ডাল। অভিযোগ, বুথ থেকে মল্লিকপাড়ার দিকে যাওয়ার সময় বোমাবাজি শুরু করে তৃণমূলের লোকেরা। সঙ্গের লোকজন ছন্নছাড়া হয়ে গেলে ওই দুই সিপিএম কর্মীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বাড়ির কাছে একটি কালভার্টের উপর ফজল শেখকে ফেলে লাঠি, বাঁশ দিয়ে মারধর ও কোপানো হয়।হাত-পায়ের শিরা কেটে দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। দু’জনকেই প্রথমে খণ্ডঘোষ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পুলিশের হাতে অভিযোগ জমা দেন ফজল শেখের স্ত্রী হেনা বিবি। পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে মারা যান দু’জনেই। এ বার খণ্ডঘোষের তৃণমূল প্রার্থীর নেতৃত্বে তাঁর বাবা ও দুখীরাম ডালকে লাঠি, টাঙি দিয়ে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ফজল শেখের ছেলে সজল।

সিপিএমের অভিযোগ, মূল অভিযুক্ত ধরা পড়া তো দূর, গ্রামে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় অভিযোগটি নেয়নি পুলিশ। বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দিরও ব্যবস্থা করেননি তদন্তকারী অফিসার। গত সোমবার এ রকম একগুচ্ছ অভিযোগ নিয়ে পুলিশ সুপারের কাছে সিআইডি তদন্তের দাবিও জানায় সিপিএমের জেলা সম্পাদকণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকারের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল। ভোটের ফল বেরোনোর পরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে বলেও সিপিএমের অভিযোগ।

বাম নেতাদের দাবি, বৃহস্পতিবার রাত থেকেই হুমকি শুরু হয়ে গিয়েছে। খুনের মামলা তোলার জন্য চাপও দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন নিহত ফজল শেখের দুই ছেলে। শুক্রবার দুপুরে সজল শেখ অভিযোগ করেন, “চাপ আর হুমকি জন্য গ্রাম ছেড়েছি। বাড়িতে মা একা আছে। খুব চিন্তা হচ্ছে। আমার বাবার খুনিরাই লাঠি হাতে গ্রাম দাপাচ্ছে।”

ওই গ্রামেরই মেটে পাড়ার বাসিন্দা নিহত দুখীরাম ডালের পরিবারও এতটাই আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে যে, বাড়ি ছেড়ে বেরোতেই ভয় পাচ্ছেন। নিহতের বড় ছেলা বিজয় বলেন, “আতঙ্কে রয়েছি। ঘরের বাইরে পা রাখতে পারছি না। মা ভয়ে কেঁদেই চলেছেন। এ ভাবে কতক্ষণ থাকতে পারব, জানি না।” গ্রামের বাসিন্দাদেরও অভিযোগ, গ্রামে ঢোকা-বেরনোর একটাই রাস্তা। সে রাস্তায় যাতায়াত নিষেধ করে দিয়েছে তৃণমূল। শুধু তাই নয়, এই পাড়ার দু’জন যুবকের সাইকেল ও মোটরবাইক সারানোর দোকান বন্ধ রাখার ‘নির্দেশ’ দিয়েছে তৃণমূল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Worker Murder Pressure withdraw
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE