Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জেলে তৈরি ন্যাপকিন পাবে ছাত্রীরা

মহিলা বন্দিদের স্বনির্ভর করতে তাঁদের দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করানো শুরু হয়েছিল বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে।

হবে অনুষ্ঠান।

হবে অনুষ্ঠান।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:১৯
Share: Save:

এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি মারা।

মহিলা বন্দিদের স্বনির্ভর করতে তাঁদের দিয়ে স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরি করানো শুরু হয়েছিল বর্ধমান কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। এ বার গ্রামীণ এলাকায় মেয়েদের মধ্যে ন্যাপকিন ব্যবহারের সচেতনতা গড়ে তুলতে সেগুলি কিনে নিয়ে বিলি করার সিদ্ধান্ত নিল জেলা প্রশাসন। বন্দিদের তৈরি ৪০ হাজার ন্যাপকিন কন্যাশ্রী ক্লাবের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ছাত্রীদের হাতে তুলে দেবে প্রশাসন।

১৫ ফেব্রুয়ারি বর্ধমানের সংস্কৃতি লোকমঞ্চে ‘কন্যাসাথী’ নামে একটি অনুষ্ঠানে প্রশাসনের তরফে ন্যাপকিন তুলে দেওয়া হবে জেলার ৫৮৪টি হাইস্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের প্রতিনিধির হাতে থাকবেন। থাকবেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘‘কন্যাশ্রী ক্লাবের মাধ্যমে ছাত্রীদের ন্যাপকিন বিলি করা সহজ হবে। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশের জন্যই এই উদ্যোগ।’’

গ্রামীণ এলাকায় ন্যাপকিন ব্যবহার নিয়ে সচেতন করতে লড়াই করা কোয়েম্বত্তুরের অরুণাচলম মুরুগাননথমের জীবনের উপরে তৈরি ছবি ‘প্যাডম্যান’ মুক্তি পেয়েছে সদ্য। ছবি মুক্তির আগে সচেতনতা গড়ে তুলতে টুইটারে ন্যাপকিন হাতে ছবি দেওয়ার ‘প্যাডম্যান চ্যালেঞ্জ’-এ মেতেছিলেন অনেক অভিনেতা থেকে ক্রীড়াবিদেরা। বর্ধমানেও প্রত্যন্ত এলাকায় ন্যাপকিনের ব্যবহার বাড়াতে উদ্যোগ হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসন জানায়। জেলে তৈরি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় সরবরাহের কথা ভাবা হচ্ছে বলে আধিকারিকেরা জানান।

কারা দফতরের ডিজি অরুণকুমার গুপ্ত জানান, প্রশিক্ষণের পরে ১৫ জন মহিলা বন্দিকে নিয়ে একটি গোষ্ঠী তৈরি করে ন্যাপকিন তৈরি করা হচ্ছে। পরে আরও কয়েকজনকে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সংশোধনাগার সূত্রে জানা যায়, কলকাতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বর্ধমানে দু’টি স্যানিটারি ন্যাপকিন তৈরির যন্ত্র বসিয়েছে। তারাই বন্দিদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। বর্ধমানের পরে আলিপুর জেলেও এই প্রশিক্ষণ দিচ্ছে সংস্থাটি।

কারা দফতরের ডিআইজি (বর্ধমান রেঞ্জ) নবীনচন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘প্রশিক্ষণ শেষের পরে বন্দিরা দু’টি যন্ত্র থেকে প্রতিদিন দু’হাজারের বেশি ন্যাপকিন তৈরি করেছেন। প্রথম পর্যায়ে তৈরি ৪০ হাজার ন্যাপকিন কিনে নিয়েছে জেলা প্রশাসন।’’ কারা-কর্তারা জানান, সরকারি সংস্থাকে ৪ টাকা ও বেসরকারি সংস্থাকে ৫ টাকা দরে ন্যাপকিন বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ন্যাপকিন তৈরি করে এক-এক জন বন্দি প্রতিদিন ১০০ টাকা করে মজুরি পাবেন। ন্যাপকিন তৈরিতে যুক্ত আবাসিকেরা জানান, এই কাজ করে একঘেয়েমি থেকে যেমন মুক্তি মিলছে, তেমনই এমন একটি সামাজিক কাজে সামিল হতে পেরে ভাল লাগছে। কারা-কর্তারা জানান, বন্দিরা ন্যাপকিন তৈরি হওয়ায় জেলেও তা ব্যবহারে আগ্রহ বাড়বে, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ গড়ে উঠবে বলে মনে করা হচ্ছে।

জেল সুপার শুভেন্দুকৃষ্ণ ঘোষ বলেন, ‘‘বন্দিনীদের ন্যাপকিন কেনার জন্য অনেকেই চিঠি দিয়েছেন। আমরাই জোগান দিতে পারছি না। ন্যাপকিন বিক্রি করে যে লাভ হবে তার একটি অংশ জমা পড়বে বন্দি কল্যাণ তহবিলে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE