গাড়ি চালকদের হাতে আলু পোড়া তুলে দিচ্ছেন নেতারা। নিজস্ব চিত্র
কয়েক দিন আগে মাটি উৎসবে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছিলেন, এ রাজ্যেই চাষিরা ভাল আছেন। সেই জেলাতেই চাষিদের দুর্দশা বোঝাতে আলু পুড়িয়ে বিক্ষোভ দেখাল কৃষকসভা।
হিমঘরে আলু রাখার মেয়াদ কার্যত আর ৫ দিন। আলু বিক্রি করার পথে হাঁটতে শুরু করেছেন হিমঘর মালিকেরা। জামালপুরের আঝাপুরের কাছে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে কৃষকসভা ‘আলু পোড়া উৎসব’ করল বুধবার বিকেলে। মুখ্যমন্ত্রী মাটিমেলায় বলেছিলেন, ‘‘দেশের যে কোনও কৃষকের থেকে আমাদের কৃষকেরা গর্বে থাকেন, ভাল থাকেন, সুস্থ থাকেন।” এ দিন কৃষকসভার রাজ্য সম্পাদক অমল হালদারের পাল্টা দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যে আদতে রাজ্যের ‘শস্যগোলা’র চাষিদের বিদ্রুপ ও উপহাস করা হয়েছে। রাজ্যের চাষিদের প্রকৃত অবস্থা আমজনতাকে বোঝানোতেই তাঁরা ‘আলু পোড়া উৎসবে’ সামিল হয়েছেন বলে জানান তিনি।
এ দিন বিকেলে আঝাপুর উড়ালপুরের কাছে গিয়ে দেখা যায়, ছোট মালবাহী গাড়িতে করে কাঠ ও প্রায় দশ বস্তা আলু (৫০ কেজির বস্তা) নিয়ে এসে রাখা হয়েছে। রাস্তার ধারে পোড়ানোর ব্যবস্থা করেছেন কৃষকসভার কর্মীরা। পোড়া আলু বাসের চালক, বাসযাত্রী-সহ নানা গাড়ির চালক-যাত্রীদের হাতে দেওয়া হয়। অমলবাবু প্রতিটি গাড়ির চালক ও যাত্রীদের হাতে ঠোঙা ভর্তি পোড়া আলু তুলে দিয়ে বলেন, “বাজারে আলুর দাম নেই। হিমঘরে আলু পড়ে রয়েছে। চাষিরা সর্বস্বান্ত হয়ে আত্মহত্যা করছেন। এর প্রতিবাদে আলু পোড়া উৎসব চলছে। আপনারা আলু খেতে-খেতে যান। ঠোঙাটা নবান্নের সামনে ফেলে প্রতিবাদ করুন।” এই কর্মসূচির মধ্যেই বস্তাভর্তি আলু ফেলে প্রতিবাদ শুরু করেন কৃষকসভার কয়েকজন কর্মী। পুলিশের হস্তক্ষেপে জাতীয় সড়কে আলু ছড়ানো বন্ধ হয়।
পূর্ব বর্ধমানের হিমঘর অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, জেলায় এখনও ১৩ লাখের মতো আলুর বস্তা রয়েছে হিমঘরে। বেশ কিছু জায়গায় হিমঘরের মালিকেরা এলাকায় আলু বিক্রি করতে শুরু করে দিয়েছেন। অ্যাসোসিয়েশনের এগজিকিউটিভ কমিটির অন্যতম সদস্য কৌশিক কুণ্ডু বলেন, “প্রতিদিন গড়ে এক লাখ করে আলুর বস্তা হিমঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। ১০ দিন আগেই সরকার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু আলু বের করছেন না চাষি ও ব্যবসায়ীরা। বাড়তি সময়ের জন্য আমরা ভাড়াও পাচ্ছি না।” রাজ্য সরকার ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিবহণের উপরে ভর্তুকি দেওয়ার কথা জানিয়েছে। আর ৫ দিন পরে হিমঘর মালিকেরা কোনও ভাবেই আলু রাখবেন না বলে প্রচার শুরু করেছেন। প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ীর সমিতির বর্ধমান জেলা সম্পাদক সুনীল ঘোষ বলেন, “প্রতিদিনই আলুর দাম কমছে। হিমঘরের ভাড়া মিটিয়ে বস্তা পিছু আলু বিক্রি হচ্ছে বড়জোর ১৫ টাকায়। তবু আমরা আলোচনার মাধ্যমে আলু বের করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
অমলবাবুর অভিযোগ, “শুধু আলু নয়, সব রকম চাষেই ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। ফলে, বর্ধমানের চাষিরা আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন।” কৃষকসভার জেলা সভাপতি তথা প্রাক্তন জেলা সভাধিপতি উদয় সরকার বলেন, “আমরা জেলা জুড়ে আলু পোড়া উৎসব করব বলে ঠিক করেছি।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের প্রতিক্রিয়া, “মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে সিপিএম। বাংলার মানুষ জানেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দূরদর্শিতার জন্য কৃষকদের গড় আয় প্রায় আড়াই গুন বেড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে চাষিদের ক্ষতিপূরণও দেওয়া হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy