Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
পূর্বস্থলী থানার ভূমিকায় প্রশ্ন

দম্পতিকে ধরে পুলিশ গেল রাজস্থান

বুধবার বিকেলে ফের পুলিশ ওই দম্পতির খোঁজে গ্রামে আসে। রাজস্থানের পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পূর্বস্থলী থানা যৌথ ভাবে তল্লাশিতে নামে। কিন্তু সুকান্ত ও তাঁর স্ত্রীর খোঁজ মেলেনি।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০২:৪১
Share: Save:

অপহরণে অভিযুক্ত পূর্বস্থলী ২ ব্লকের কুকসিমলা গ্রামের পলাতক যুবককে গ্রেফতার করল রাজস্থানের কুন্দগাঁও থানার পুলিশ। ধৃত যুবকের নাম সুকান্ত অধিকারী। তাঁর স্ত্রীকেও রাজস্থানের পুলিশ উদ্ধার করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে সুশান্তকে ধরার পরে শুক্রবার সকালেই দু’জনকে নিয়ে নিজেদের রাজ্যে রওনা দেয় পুলিশ। তবে, ওই ঘটনায় রাজস্থান পুলিশ ও পূর্বস্থলী থানার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কুকসিমলা গ্রামের নামোপাড়ার বাসিন্দা সুকান্ত কম্পাউন্ডারের কাজ করতে রাজস্থানে যান। মাস দুয়েক আগে সেখানকার এক তরুণীকে বিয়ে করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তরুণীর পরিবার কুন্দগাঁও থানায় মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করে। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, মাসখানেক আগে রাজস্থান থেকে পুলিশ এসে দম্পতিকে ধরে কালনা এসিজেএম আদালতে পেশ করে। আদালত মেয়েটিকে ব্যক্তিগত বন্ডে ছেড়ে দেয়।

বুধবার বিকেলে ফের পুলিশ ওই দম্পতির খোঁজে গ্রামে আসে। রাজস্থানের পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে পূর্বস্থলী থানা যৌথ ভাবে তল্লাশিতে নামে। কিন্তু সুকান্ত ও তাঁর স্ত্রীর খোঁজ মেলেনি। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ওই দম্পতিকে না পেয়ে বাড়ি-বাড়ি তল্লাশির নামে পুলিশ হেনস্থা করেছে। সুকান্তর বাবা-সহ ছ’জনকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। অভিযোগ, রাতে পুলিশি হেনস্থার প্রতিবাদ জানাতে গেলে গ্রামের আরও দু’জনকে আটক করা হয়। যদিও বৃহস্পতিবার সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ওই দিনই সন্ধ্যায় গাড়িতে পালিয়ে যাওয়ার সময় কালনার নান্দাই এলাকায় পুলিশ সস্ত্রীক সুকান্তকে ধরে ফেলে।

শুক্রবার কিন্তু ওই দম্পতিকে কালনা আদালতে পেশ করেনি পুলিশ। পূর্বস্থলী থানা সূত্রের খবর, এ দিন সকালেই দু’জনকে নিয়ে বিমানে রাজস্থান রওনা দেয় সেখানকার পুলিশ। কালনা আদালতের আইনজীবী অরিন্দম বাজপেয়ী ও পার্থসারথি কর জানাচ্ছেন, সাধারনত কোনও রাজ্যের পুলিশ ভিন্ রাজ্যে গিয়ে কাউকে ধরলে সেখানকার আদালত থেকে ট্রানজিট রিমান্ড পাওয়ার পরেই ধৃতকে নিয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া, আদালতে পেশের আগে ধৃত অথবা উদ্ধার হওয়া লোকজনেদের মেডিক্যাল পরীক্ষা করানোর নিয়ম আছে।

কিন্তু, কুকসিমলার ঘটনায় এ সব মানা হয়নি বলেই অভিযোগ। প্রশ্ন উঠেছে সেখানেই। এমনিতে পুলিশের ভয়ে নামোপাড়ার বাসিন্দারা মুখ খুলতে চাননি। সুকান্তর বাড়িতে গিয়ে দেখা মেলেনি তাঁর বাবা-মায়ের। তবে, কুকসিমলার এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘মাস খানেক আগেই তো সুকান্তের স্ত্রীকে বন্ডে মুক্তি দিয়েছিল আদালত। আমরা ভেবেছিলাম, রাজস্থানের পুলিশ নিশ্চই ওদের আদালতে তুলবে। এর জন্য আইনজীবী নিয়োগ-সহ যাবতীয় পরিকল্পনা করা হয়েছিল। অথচ কিচ্ছু না জানিয়েই রাজস্থানের পুলিশ ওদের নিয়ে গেল।’’ পূর্বস্থলী (উত্তর) কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ সাহার দাবি, ‘‘মেয়েটি প্রাপ্তবয়স্ক। তার পরেও তাকে অন্যায় ভাবে রাজস্থানে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে পূর্বস্থলী থানার পুলিশ। সেখানে তার কোনও বিপদ হলে পুলিশই দায়ী হবে। আমি কলকাতা হাইকোর্টে পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করব।’’

এসডিপিও (কালনা) প্রিয়ব্রত রায় শুধু বলেছেন, ‘‘একটি অপহরণের মামলায় রাজস্থানের পুলিশ ওদের নিয়ে চলে গেছে। এ ব্যাপারে আমাদের বিশদে না জানিয়েই ওরা চলে যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE