Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বালি তোলা বন্ধ, বিপাকে খনি

খনি অঞ্চলে অজয় ও দামোদরের নানা ঘাটে বেআইনি ভাবে বালি তুলে পাচার হচ্ছে দেদার। অথচ, বৈধ ঘাট থেকে বালি তোলার অনুমতির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। ফলে, বালি ভরাটের কাজ করতে না পারায় রানিগঞ্জে নিমচা এবং জেকে নগর খনি দু’টিতে গত কয়েক দিন ধরে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন।

রানিগঞ্জের তিরাটে এই ঘাটেরই অনুমতি মেলেনি। ফাইল চিত্র।

রানিগঞ্জের তিরাটে এই ঘাটেরই অনুমতি মেলেনি। ফাইল চিত্র।

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৬ ০২:৫৩
Share: Save:

খনি অঞ্চলে অজয় ও দামোদরের নানা ঘাটে বেআইনি ভাবে বালি তুলে পাচার হচ্ছে দেদার। অথচ, বৈধ ঘাট থেকে বালি তোলার অনুমতির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। ফলে, বালি ভরাটের কাজ করতে না পারায় রানিগঞ্জে নিমচা এবং জেকে নগর খনি দু’টিতে গত কয়েক দিন ধরে ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। কেন বালি তোলার অনুমতি মেলেনি, চাপান-উতোর তৈরি হয়েছে সে নিয়ে। শ্রমিক সংগঠনের দাবি, এরিয়া কর্তৃপক্ষ বিধি মেনে কাজ না করার ফলেই এই পরিস্থিতি। প্রশাসন সূত্রের আবার খবর, অনুমতি দেওয়ার প্রক্রিয়ায় পরিবর্তনের জন্য দেরি হচ্ছে।

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, দামোদরের তিরাট ঘাট থেকে দীর্ঘদিন ধরে বালি তুলছেন তাদের সাতগ্রাম এরিয়া কর্তৃপক্ষ। অস্থায়ী অনুমতির ভিত্তিতে বালি তোলা হয়। মেয়াদ শেষ হলেই ফের অমুমতি মিলত। সে ভাবে গত ৩১ মার্চ বালি তোলার মেয়াদ শেষ হয়েছে। কিন্তু তার পরে আবার অনুমতি চেয়ে প্রয়োজনীয় নথিপত্র চেয়ে বাঁকুড়ার ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে আবেদন করা হয়েছে বলে জানায় ইসিএল। কিন্তু সাড়ে তিন মাস পেরিয়ে গেলেও সেই অনুমতি মেলেনি বলে অভিযোগ সংস্থাটির। এর জেরে দু’টি কোলিয়ারির ভূগর্ভ থেকে কয়লা খননের পরে ফাঁকা হয়ে যাওয়া জায়গায় বালি ভরাট করা যাচ্ছে না।

খনি বিশেষজ্ঞেরা জানান, ভূগর্ভে কয়লা কেটে নেওয়ার পরে ফাঁকা জায়গায় বালি ভরাট করা জরুরি। তা না হলে বিস্ফোরণের (এয়ার ব্লাস্ট) সম্ভাবনা থেকে যায়। এ ছাড়া যদি কখনও ধস নামে, ভূগর্ভে ফাঁকা জায়গায় জমে থাকা বাতাস বাইরের বাতাসের সংস্পর্শে এসে আগুন লেগে যেতে পারে। সেই বিস্ফোরণের মাত্রা এত প্রখর হতে পারে যে ডুলি খনিতে আছড়ে পড়া থেকে খনিতে কর্মীদের প্রাণহানি, নানা ঘটনাই ঘটতে পারে। সেই সম্ভাবনা এড়াতে ডিজিএমএস মাসখানেক আগে ওই দু’টি খনিতে কয়লা তোলা বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তাই খনন বন্ধ রয়েছে।

কোলিয়ারি সূত্রে জানা গিয়েছে, খনন বন্ধের কারণে উৎপাদনের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার সুকুমার দলপতি জানান, বর্তমানে ওই দু’টি কোলিয়ারির নিঘা ও সাতগ্রাম কয়লাস্তরে শুধু খনির নীচে পড়ে থাকা কয়লা তোলা হচ্ছে। খনন করা যাচ্ছে না। ক্ষতির পরিমাণ পাল্লা দিয়ে বাড়ছে প্রতি দিন। এ দিকে যেমন খনি কর্তৃপক্ষের লোকসান হচ্ছে, ও দিকে ঘাটের অনুমোদন না দেওয়ায় রাজ্য সরকারও বালির রাজস্ব পাচ্ছে না। বালি তোলার অনুমতি মিলতে দেরি হলে পাশাপাশি আরও কয়েকটি কোলিয়ারিতে খনন বন্ধ করতে তাঁরা বাধ্য হবেন বলে খনিকর্তাদের দাবি। সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট সব দফতরকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি। সমাধানসূত্র মিলবে বলে আশাবাদী।’’

শ্রমিক নেতা তথা সাতগ্রাম এরিয়া সংযুক্ত কমিটির সদস্য তরুণ গঙ্গোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা দীর্ঘদিন যে ঘাট থেকে বালি তুলছে, তার মেয়াদ শেষ হওয়ায় ফের অনুমতি পেতে এত কাঠখড় পোড়াতে হচ্ছে। অথচ, এই সুযোগে বালি মাফিয়ারা ওই ঘাট থেকেই বিনা অনুমতিতে বালি তুলে প্রকাশ্যে পাচার করছে। প্রশাসন নির্বিকার।’’ আসানসোল-দুর্গাপুর উন্নয়ন পর্ষদের এক কর্তা আবার দাবি করেন, ইসিএলের তরফে যে সব ঠিকাদারেরা বালি তোলে, তাদের কোনও চালান দেওয়া হয় না। সে জন্য কে বৈধ ভাবে বালি তুলছে আর কে অবৈধ, তা বোঝা মুশকিল হয়। ঠিকাদারেরাও নিয়ম ভেঙে বাড়তি বালি বোঝাই করে নিয়ে যায় বলে ওই কর্তার অভিযোগ। সে কারণেই অনুমতি পেতে দেরি হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।

ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর অবশ্য জানায়, এত দিন বালিঘাটের অস্থায়ী অনুমোদন দেওয়া হতো। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্য সরকার তিন থেকে তিরিশ বছর স্থায়ী ভিত্তিতে অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়াকরণের কাজ চলছে। সেই কারণেই ইসিএলকে অনুমতি দিতে দেরি হচ্ছে বলে দফতরের দাবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sand Smuggling Raniganj Stopped
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE