Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সচেতনতার পাঠ মণ্ডপে

পড়া ছেড়ে খেলার দিকে ঝুঁকতে চায় শিশুমন, কিন্তু অনেক সময়েই অভিভাবরদের চাপে বন্দি হয়ে যায় ইচ্ছেরা— কালনার বড়মিত্রপাড়ার বিধান স্মৃতি সঙ্ঘের সরস্বতী পুজোর মণ্ডপে ফুটে উঠেছে শৈশবের এমনই ছবি

জাপটের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র

জাপটের মণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:৩০
Share: Save:

পড়া ছেড়ে খেলার দিকে ঝুঁকতে চায় শিশুমন, কিন্তু অনেক সময়েই অভিভাবরদের চাপে বন্দি হয়ে যায় ইচ্ছেরা— কালনার বড়মিত্রপাড়ার বিধান স্মৃতি সঙ্ঘের সরস্বতী পুজোর মণ্ডপে ফুটে উঠেছে শৈশবের এমনই ছবি। আবার জাপটের নিউ ফরোয়ার্ড ক্লাব পুজোর থিমে ফুটিয়ে তুলেছে মেয়েদের জীবনচক্র। দুই ক্লাবের সদস্যদেরই দাবি, তাঁদের মণ্ডপ লোকশিক্ষার কাজ করবে।
বড় মিত্রপাড়ার মণ্ডপে ঢুকলেই প্রথমে নজর পড়বে একটি বন্ধ কাঠের দরজা। যার পুরোটা জুড়ে রয়েছে অজস্র কচি হাতের ছাপ। মণ্ডপের বাইরের অংশ তৈরি হয়েছে স্কুল ব্যাগ, স্কুলের পরিচয় পত্র, জলের বোতল এবং কয়েক হাজার শিশুদের আঁকা ছবি দিয়ে। ভিতরে ব্যবহার করা হয়েছে শিশুদের খেলার নানা সরঞ্জাম যেমন, লাট্টু, লাফদড়ি, লুডো, পুতুল, ঘুড়ি, রং পেনসিল। রয়েছে সাইকেল, ব্ল্যাক বোর্ডের মতো নানা জিনিসও। মণ্ডপের মাঝামাঝি জায়গায় একটি খাঁচা গড়া হয়েছে, যেখানে শিকলবন্দী অবস্থায় রয়েছে দুই স্কুল ছাত্রছাত্রী। তাদের আশেপাশে প্রচুর বইয়ের স্তূপ। ঝুলছে মেডেল। বড় খাঁচার আশে পাশে রয়েছে আরও কয়েকটি ছোট খাঁচা। তার কোনওটায় লেখা, ‘বাবা শুধুই বকে’। আবার কোনওটায় লেখা ‘কবে বড় হব’। গোটা মণ্ডপটি নিজের ভাবনায় তৈরি করছেন শ্যামগঞ্জপাড়ার বাসিন্দা বছর আঠাশের তাপস দত্ত। তাঁকে সহযোগিতা করছেন অমিত মালিক এবং রাজীব বাগ নামে দুই যুবক। শিল্পীর কথায়, ‘‘বর্তমান প্রজন্মের বাবা মায়েরা শিশুদের উপর প্রত্যাশার চাপ তৈরি করছেন প্রতিনিয়ত। মেডেল ছেলের জন্য না, নিজের জন্য জিততে চাইছেন। তাতেই ডুকরে কাঁদছে শিশুমন।’’ তাঁর দাবি, মণ্ডপের সামনের অংশে সরঞ্জামগুলি ভাসমান ভাবে থাকবে। মনে হবে, স্কুলের ভারী ব্যাগ, বোতল যেন শিশুদের ছেড়ে চলে যেতে চাইছে। মণ্ডপের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে তৈরি করা হয়েছে প্রতিমাও। সেখানে দেবী সরস্বতী নিজেই পুতুল খেলছেন। প্রতিমাটি তৈরি করেছেন বর্ধমান আর্ট কলেজের ছাত্র অরিন্দম বিশ্বাস।
জাপটের নিউ ফরোয়ার্ড ক্লাবের মণ্ডপে ঢুকলে দেখা মিলবে অজস্র মডেলের। ভ্রুনের দশা থেকে শুরু করে মেয়েদের জীবন কেমন ভাবে এগিয়ে চলে, তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সেখানে। শেষ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে পৌঁছে অনেক মায়ের কী করুণ পরিণতি হয় তাও মডেলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মণ্ডপের একটা অংশে বৃদ্ধাশ্রমে থাকা মা সন্তানকে জিজ্ঞাসা করছেন, খোকা কেমন আছিস। আবার অন্য অংশে দেখা যাবে আয়না ধরে রয়েছে দুটি হাত। তাতে লেখা, খোকা তুই নিজের বিবেককে একবার দেখ। গোটা মণ্ডপটি তৈরি হয়েছে বেত, তুলো, রঙিন কাগজ, নারকেল গাছের ছাল, প্লাস্টার অব প্যারিস, তালপাতা, মাটি দিয়ে। ক্লাব কর্তাদের তরফে ধীমান দত্ত বলেন, ‘‘সামাজিক সচেতনেতা ছড়িয়ে দিতে এই উদ্যোগ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Festivals Saraswati Puja Pandel Kalna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE