Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

রুটে অমিল গাড়ি, বাধ্য হয়ে ‘রিজ়ার্ভ’

শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা পাল্লা দিয়ে আধুনিক হতে পারেনি বলে অভিযোগ শহরবাসীর। রাত ৮টা বাজলেই শহরের পথে মিনিবাসের সংখ্যা কমতে থাকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৬
Share: Save:

ইলাহাবাদগামী বিভূতি এক্সপ্রেসে দুর্গাপুরে পৌঁছনোর কথা রাত ১০টা বেজে ৩ মিনিটে। কিন্তু তা স্টেশনে ঢুকতে রাত সাড়ে ১০টা বেজে গেল। কলকাতার পার্থ পাল স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে মিনিবাস ধরতে গিয়ে দেখলেন, স্ট্যান্ড ফাঁকা। যাবেন ডিএসপি টাউনশিপের এ-জোনে দিদির বাড়িতে। খোঁজ নিয়ে জানলেন, রুটের শেষ মিনিবাস বেরিয়ে গিয়েছে রাত ১০টায়। রুটে চলা অটো বা টোটো নেই। অগত্যা চড়া ভাড়া দিয়ে অটো ‘রিজ়ার্ভ’ করে গন্তব্যে পৌঁছলেন পার্থবাবু।

রাত ৯টা নাগাদ ডানকুনি থেকে বাসে করে সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ডে এসে নেমেছিলেন প্রবীণ চিত্তরঞ্জন রায়। যাবেন ডিএসপি টাউনশিপের বি-জোনের বিদ্যাপতি রোডে মেয়ের বাড়িতে। মিনিবাসের ভিড়ে না গিয়ে অটোয় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু স্ট্যান্ডে গিয়ে শোনেন, রুটের অটো আর নেই। যেতে গেলে ‘রিজ়ার্ভ’ করতে হবে। তাই করতে বাধ্য হলেন চিত্তরঞ্জনবাবু।

কাঁকসার দেউল পার্কে যাওয়ার জন্য চিত্তরঞ্জন থেকে এসেছিলেন অতনু ঘোষ। রাতটা দুর্গাপুরের প্রতাপপুরে বোনের বাড়িতে থেকে সকালে কাঁকসা রওনা হবেন ঠিক করেছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ ভিড়িঙ্গিতে নেমে প্রান্তিকা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে জানতে পারেন, লাউদোহা রুটের শেষ বাস বেরিয়ে গিয়েছে সওয়া ৭টায়। রাতে অত দূর টোটো যাবে না। তাঁকেও মোটা টাকা দিয়ে অটো ‘রিজ়ার্ভ’ করতে হল।

এক সময়ে শহর নির্ভরশীল ছিল বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানার উপরে। গত দু’দশকে তা অনেকটা বদলেছে। তৈরি হয়েছে শপিংমল, মাল্টিপ্লেক্স, বড় হোটেল, নানা ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানেজমেন্ট কলেজ থেকে আইটি হাব। কিন্তু, শহরের পরিবহণ ব্যবস্থা পাল্লা দিয়ে আধুনিক হতে পারেনি বলে অভিযোগ শহরবাসীর। রাত ৮টা বাজলেই শহরের পথে মিনিবাসের সংখ্যা কমতে থাকে। শহর থেকে লাগোয়া এলাকায় যাওয়ার বাসের তো দেখাই মেলে না বলে অভিযোগ। উধাও হতে থাকে রুটের অটো-টোটোও। তখন চড়া ভাড়ায় অটো-টোটো ‘রিজ়ার্ভ’ করাই একমাত্র পথ।

দুর্গাপুরে স্টেশন থেকে মিনিবাস ছেড়ে বিভিন্ন রুট হয়ে বেনাচিতির প্রান্তিকা বাসস্ট্যান্ডে যায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ-জোন, বি-জোন এবং ৮-বি অর্থাৎ ভায়া বিধাননগর, মুচিপাড়া রুটের শেষ বাস স্টেশন থেকে ছাড়ে রাত ১০টা নাগাদ। একমাত্র ভিড়িঙ্গি রুটের শেষ বাস ছাড়ে রাত ১০টা ৪০ নাগাদ। কিন্তু তা সিটি সেন্টার বাসস্ট্যান্ড থেকে জাতীয় সড়ক ধরে বেনাচিতি চলে যায়। ফলে, কোনও যাত্রী সিটি সেন্টারের কবিগুরু, নন-কোম্পানি, সেপকো টাউনশিপ বা ডিএসপি টাউনশিপ এলাকায় যেতে গেলে সমস্যায় পড়েন। বাসের ভাড়া যেখানে ১০-১৫ টাকা সেখানে অটো ‘রিজার্ভ’ করতে হয় ১২০-২০০ টাকায়। অভিযোগ, রুটের অটো না থাকলেও ‘রিজ়ার্ভ’ করতে চাইলে যে কোনও স্ট্যান্ডে অটোচালকেরা তৎপর হয়ে ওঠেন। কার পরে কে ‘রিজ়ার্ভে’ যাবেন, কোন চালক কোন রুটে যাবেন, তা ঠিক করার জন্য সব স্ট্যান্ডে এক জন করে দায়িত্বেও থাকেন বলে অভিযোগ। শহরের ভিতরে যাতায়াতের জন্য টোটো ‘রিজ়ার্ভ’ করলে শ’খানেক টাকা দিতে হয়।

রাজ্যের অন্যতম আধুনিক শহর দুর্গাপুর। কিন্তু বাইরে থেকে মানুষজন এ শহরে এসে পরিবহণের অব্যবস্থায় পড়ে বিরক্ত হন। শুধু বাইরে থেকে আসা মানুষেরা নন, পরিবহণের হাল নিয়ে হতাশ শহরের নিত্যযাত্রীরাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durgapur Transport দুর্গাপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE