Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

তিনটি বিয়ে আটকে পুরস্কৃত লীনা

লীনার দলনেত্রী হয়ে ওঠাটা সহজে হয়নি, জানা যায় স্কুল সূত্রে।

লীনা মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

লীনা মুখোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভাতার শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৯ ০০:৩৮
Share: Save:

দলনেত্রী করা হবে ছাত্রীটিকে। স্কুলের এই কথা শুনেই বেঁকে বসেছিলেন বাড়ির লোকজন। শেষমেশ সে দলনেত্রী হয় এবং রুখে দেয় তিনটি নাবালিকা বিয়ে। সেই দলনেত্রী, ভাতারের আমারুন স্টেশন শিক্ষানিকেতনের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী লীনা মুখোপাধ্যায়ই কন্যাশ্রী মঞ্চ থেকে এ বার ‘সাহসিকতার’ পুরস্কার পাচ্ছে, জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় আড়রা গ্রামের নবম শ্রেণি, আমারুন গ্রামের দশম ও একাদশ শ্রেণির দুই ছাত্রীর বিয়ে আটকায় স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের দলনেত্রী, আড়রা গ্রামের লীনা। কেমন ছিল সে সব বিয়ে ‘আটকানোর’ অভিজ্ঞতা? ভাতার ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আড়রার নবম শ্রেণির ছাত্রীটি এক পড়শির সঙ্গে সটান লীনার বাড়িতে এসে বলে, ‘বিয়ে নয়, পড়তে চাই। বাড়িতে এ কথা বলাতে মারধর করা হয়েছে। বিয়েটা আটকে দাও দিদি।’ সব শুনে লীনা মেয়েটির বাড়ি গিয়ে বিয়ে দেওয়া যাবে না বলে রুখে দাঁড়ায়। ব্লকের কন্যাশ্রীর নোডাল অফিসার উজ্জ্বল সামন্তও ততক্ষণে পৌঁছে যান চাইল্ডলাইন ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে। শনিবার ওই ছাত্রীর এক আত্মীয় সুকুমার ঘোষ বলেন, “বড় ভুল করতে যাচ্ছিলাম। লীনাই ভুল শুধরে গিয়েছে।’’ অন্য দুই নাবালিকার বিয়ের কথা স্কুল সূত্রে জানতে পেরে একই ভাবে রুখে দাঁড়ান লীনা।

লীনার পুরস্কারে উচ্ছ্বাসের বাতাস প্রশাসন ও স্কুলে। প্রধান শিক্ষক স্বপনকান্তি চৌধুরী বলেন, “এমন দলনেত্রী থাকলে অনেক অভিভাবকই নাবালিকাদের বিয়ে দিতে সাহস দেখাবেন না। ওর স্বীকৃতি স্কুলের গর্ব।’’ জেলা সর্বশিক্ষা মিশন তথা কন্যাশ্রী প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা মৌলি সান্যালও বলেন, ‘‘মনের ইচ্ছা আর সাহস না থাকলে এটা হয় না। এই সাহসকেই আমরা সেলাম জানাই।’’

কিন্তু লীনার দলনেত্রী হয়ে ওঠাটা সহজে হয়নি, জানা যায় স্কুল সূত্রে। গ্রামে মা, ভাই, দাদু, ঠাকুমার সঙ্গে থাকে লীনা। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বাবার মৃত্যু হয়। লীনাকে দলনেত্রী হওয়ার খবরে খানিক দুশ্চিন্তাই হয়েছিল, জানান তার দাদু পেশায় ব্যবসায়ী দিগম্বরবাবু। বলেন, ‘‘আসলে চিন্তার কারণেই আপত্তি করেছিলাম।’’ তবে স্কুলের তরফে বাড়ির লোকজনকে বোঝানোর পরে আর আপত্তি আসেনি। মেয়ের পুরস্কারপ্রাপ্তির খবরে মা অর্চনাদেবী বলেন, ‘‘আমরা চাই, আমার মেয়ে তো বটেই, সব মেয়েই এগিয়ে চলুক।’’

এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় নিয়েই লীনাও বলে, ‘‘নাবালিকা বিয়ের কুফল সবাইকে বুঝতে হবে। পড়ার জন্য সরকার সাহায্য করছে। ‘রূপশ্রী’ থেকে ১৮ বছরের পরে বিয়েতেও মেলে সাহায্য। তাই মেয়ে মানে তো লক্ষ্মী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Child Marriage Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE