দুর্গাপুরের স্কুলে চলছে পঠনপাঠন। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যের নানা প্রান্তে ফি বৃদ্ধি নিয়ে বেসরকারি স্কুলগুলি অভিযোগের মুখে পড়ছে। সেই সময়েই দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের এ-জোনের একটি বেসরকারি স্কুল অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের পড়ুয়াদের জন্য নিখরচায় পড়াশোনার ব্যবস্থা করছে। এমনকি, কোনও পড়ুয়া অসুস্থ হলে তার পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতাও করা হচ্ছে বলে জানান ওই স্কুলের কর্তৃপক্ষ।
স্কুলটির পথ চলা শুরু ২০০৫-এ। ২০০৬-এ এক মহিলা, যিনি পরিচারিকা হিসেবে কাজ করেন, তিনি স্কুলে এসে জানান, ছেলেকে পড়াতে চান। কিন্তু আর্থিক ক্ষমতা নেই। ওই মহিলার কথা শুনেই বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করা হয় বলে জানান দুর্গাপুর ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর পাবলিক হাইস্কুলের কর্তৃপক্ষ।
তাঁরা জানান, সকালে সাধারণ স্কুলটি হয়। ছুটির পরে দুপুর দেড়টা থেকে শুরু হয় অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে আসা পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ স্কুল। তাঁদের পড়ান অধ্যক্ষা-সহ মোট ন’জন শিক্ষিকা। নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত সেখানেই পড়ে তারা। সেই সঙ্গে দেওয়া হয় খেলা, নাচ-গানের তালিমও। তার পরে ষষ্ঠ শ্রেণিতে সকালের মূল স্কুলে তাদের ভর্তি করা হয়। তখন অবশ্য প্রতি মাসে ৫০ টাকা ফি দিতে হয়। তবে তার পরেও প্রয়োজনে ওই পড়ুয়াদের জন্য বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয় বলে জানান স্কুল কর্তৃপক্ষ।
স্কুল সূত্রে জানা যায়, এর ফলে সাফল্যও মিলছে। এমন পড়ুয়ারা প্রথম বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল ২০১৪-য়। ওই পড়ুয়াদের থেকেই সারা স্কুলের মধ্যে প্রথম হন অর্ঘ্য চট্টোপাধ্যায়। তাঁর বাবা পরিবহণ কর্মী। স্কুলের অধ্যক্ষা দেবযানী বসুর দিদি রুমিদেবীর মৃত্যুর পরে তাঁর নামেই চালু হয় স্বর্ণপদক। সেই স্বর্ণপদক পান বর্তমানে আসানসোল সরকারি হোমিওপ্যাথি কলেজের পড়ুয়া অর্ঘ্য। এখনও তিনি বাড়ি এলে মাঝেসাঝেই স্কুলে আসেন ক্লাস নিতে।
স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, প্রথম বছর ১২০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে ক্লাস শুরু হয়। ক্লাস শুরুর সময়ে এসেছিলেন সেই মহিলা, যাঁর ইচ্ছেকে সামনে রেখেই এই বিষয়ে পদক্ষেপ করেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে পড়ুয়ার সংখ্যা অনেকটাই বেড়েছে। এখানেই শেষ নয়, স্কুলের পড়ুয়া বিশাল মণ্ডলের চিকিৎসার খরচও স্কুল বহন করেছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু কী ভাবে জোগাড় হয় এই টাকা? স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বিনয়কুমার বসু বলেন, ‘‘স্বচ্ছল অভিভাবকেরা নির্দিষ্ট ফি দিয়েই তাঁদের ছেলেমেয়েদের পড়ান। খরচ বাঁচিয়ে দুঃস্থ পড়ুয়াদের জন্য সাধ্যমতো খরচ করা হয়।’’ অধ্যক্ষা দেবযানীদেবী বলেন, ‘‘সব শিশুর মুখে হাসি ফোটানোই লক্ষ্য।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy