Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রথের কাহিনি ফেরাচ্ছে শ্রীরামপুর

কথিত আছে, বিদ্যাচর্চার জন্য পূর্বস্থলীর বিদ্যানগরে একসময় নিয়মিত যাতায়াত ছিল চৈতন্যদেবের। পণ্ডিতদের সঙ্গে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক শেষে ফেরার পথে ক্লান্তিতে কখনও বিশ্রাম নিতেন ওই গ্রামেরই বকুল গাছের নীচে। সেই থেকেই এলাকার নাম হয় বিশ্রামপুর।

দড়ি টানতে ভিড়। নিজস্ব চিত্র।

দড়ি টানতে ভিড়। নিজস্ব চিত্র।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
পূর্বস্থলী শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৬ ০০:৫৬
Share: Save:

কথিত আছে, বিদ্যাচর্চার জন্য পূর্বস্থলীর বিদ্যানগরে একসময় নিয়মিত যাতায়াত ছিল চৈতন্যদেবের। পণ্ডিতদের সঙ্গে আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক শেষে ফেরার পথে ক্লান্তিতে কখনও বিশ্রাম নিতেন ওই গ্রামেরই বকুল গাছের নীচে। সেই থেকেই এলাকার নাম হয় বিশ্রামপুর। তারই অপভ্রংশ এখনকার শ্রীরামপুর।

সেই বকুল গাছের নীচেই পরবর্তীতে গড়ে ওঠে গোপীনাথ মন্দির। এক দশক ধরে চলছে রথযাত্রাও। পৌরাণিক নানা গল্প নিয়ে যাত্রাপালা, মেলায় সপ্তাহ খানেক ধরে মেতে উঠেছে শ্রীরামপুর।

প্রবীণ বাসিন্দারা জানান, একসময় রথের কোনও অনুষ্ঠানই হতো না এলাকায়। রথ দেখতে, দড়ি টানতে যেতে হতো আশপাশের গ্রামে। ২০০৬ সালে বিধায়ক স্বপন দেবনাথের উদ্যোগেই রথযাত্রা শুরু হয়। শ্রীরামপুরের এক ব্যক্তি জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রার দারুমূর্তি দান করেন। ২০০৭-এ তৈরি হয় কাঠের রথ। উত্তর শ্রীরামপুর এলাকার বহু বাসিন্দারই মামার বাড়ি, মাসির বাড়ি রয়েছে কাছাকাছি হেমায়েতপুর এলাকায়। ঠিক হয় জগন্নাথেরও মাসির বাড়ি হবে হেমায়েতপুর বারোয়ারিতলা। সেই থেকে যে সাত দিন তিন দেবতা হেমায়েতপুরে থাকবেন সে দিনগুলিতে তাদের ঘিরে পালা কীর্তন, বাউলের আসর বসে। প্রসাদ খান হাজার হাজার মানুষ।

বছর চারেক আগে রাজ্য পর্যটন দফতরের সাহায্যে ঢেলে সাজে গোপীনাথ মন্দির। বসার যায়গা, ভোগের ঘর তৈরি হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মন্ত্রী স্বপনবাবু এখনও রথযাত্রা নিয়ে নানা পরিকল্পনায় সামিল হন। স্বপনবাবু জানান, এ বার দেবী লক্ষ্মীর বৃন্দাবন থেকে রথে জগন্নাথকে আনতে যাওয়ার পৌরাণিক গল্পই পালায় ফুটিয়ে তোলা হবে। কী সেই গল্প? পৌরাণিক উপখ্যান অনুযায়ী এক বার লক্ষ্মীকে না জানিয়েই জগন্নাথ দ্বারকা থেকে চলে আসেন বৃন্দাবন। পরে জানতে পেরে লক্ষ্মী কিছু রক্ষীকে সঙ্গে নিয়ে রথে চড়ে জগন্নাথকে আনতে যান বৃন্দাবনে। কিছু বৃন্দাবনবাসী তার পথ আটকান। ক্ষুব্ধ লক্ষ্মী যারা পথ আটকেছেন তাদের গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলার নির্দেশ দেন। নন্দ মহারাজের আকুতিতে অবশ্য বাসিন্দারা মুক্ত হন। তবে লক্ষ্মীদেবীকে লিখে দিতে হয় উল্টো রথের দিন ফেরত আসবেন জগন্নাথ। উদ্যোক্তারা জানান, চতুর্দশীর দিন এই ঘটনাটি ঘটেছিল। এ বার শনিবার, চতুর্দশীর দিনে ওই পালা হবে। তাঁদের দাবি, পালার জন্য কলকাতা থেকে আনা হচ্ছে ঘোড়ার বিশেষ গাড়ি। লক্ষ্মীর ভূমিকায় অভিনয় করবেন যাত্রাশিল্পী রুমা দাশগুপ্ত। এ ছাড়াও বীরভূমের রাইবেশে, কাটোয়ার রণপা এবং নবদ্বীপের পুরনো একটি ব্যান্ডের দল থাকছে। স্বপনবাবু বলেন, ‘‘নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের রথের পিছনে যে পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে তা জানাতেই এমন উদ্যোগ।’’

বুধবার রথের উদ্বোধন করেন পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিলীপ মল্লিক। রথের দড়ি ধরে টানেন এলাকার বিধায়ক তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ, বিখ্যাত কীর্তন শিল্পী গৌরি রায়-সহ এলাকার হাজার হাজার মানুষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Serampore Rath-yatra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE