এখানেই খুন হন দিলীপবাবু। সুচেতা-হত্যাকাণ্ড এই বাড়িতেই। বাড়ির উঠোনেই ছিল দেহ। ব্যাগ-বন্দি শিল্পা অগ্রবালের দেহ। ফাইল চিত্র
২০১২, ২০১৫, ২০১৭-র পরে ২০১৮। তালিকাটা দীর্ঘ হচ্ছে। তালিকা, দুর্গাপুরে বাড়িতেই ঠান্ডা মাথায় খুনের বছরের। অভিযুক্তের তালিকায় পুলিশি খাতায় দাগী দুষ্কৃতী থেকে সমাজের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি, রয়েছে সব স্তরের লোকজনই। রবিবার রাতে দুর্গাপুরের ফরিদপুর ফের বাড়িতে ঢুকে বৃদ্ধ খুনের ঘটনা শহরের নিরাপত্তা পরিস্থিতিকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে বলে মনে করছেন দুর্গাপুরের বাসিন্দারা।
কিন্তু কেন এমনটা চলছে? শহরবাসী ও আইনজীবীদের একাংশের মতে, অধিকাংশ ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, ভিন জেলা বা রাজ্যের লোকজনের অবাধ যাতায়াত এবং সেই সম্পর্কে পুলিশের কাছে তথ্য না থাকা, সম্পর্কগত টানাপড়েন-সহ নানা কারণে এমন ঘটনাগুলি ঘটছে। সেই সঙ্গে অন্য অপরাধমূলক কাজকর্মের ঘটনাও মাঝেসাঝে সামনে আসছে।
২০১২-র ২৫ ফেব্রুয়ারি। দুর্গাপুরের অভিজাত এলাকা সিটিসেন্টারের উদয়শঙ্করবীথিতে বাড়িতেই খুন হন আসানসোল মহিলা থানার তৎকালীন ওসি শম্পা বসুর বাবা, ডিএসপি-র প্রাক্তন কর্মী দিলীপকুমার বসু। বছর খানেক পরে মুর্শিদাবাদ থেকে এক জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে ওই মামলার পুরোপুরি কিনারা আজও হয়নি বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় প্রশ্ন ওঠে কী ভাবে ভিন জেলার এক জন দুর্গাপুর শহরে এসে খুন করে গেল।
সম্পর্কগত টানাপড়েন বাড়িতে ঢুকে খুনের ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন পুলিশকর্তারা। ২০১৫-র ২৯ অগস্ট। বিধাননগর আবাসনের বাসিন্দা, সুচেতা চক্রবর্তী ও তাঁর শিশুকন্যাকে খুনের অভিযোগ ওঠে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মামরা বাজার শাখার ম্যানেজার সমরেশ সরকারের বিরুদ্ধে। দেহ দু’টি টুকরো টুকরো করে সুটকেসে ভরে গঙ্গায় ফেলতে গিয়ে শ্রীরামপুরের কাছে ধরা পড়েন তিনি। আপাতত তিনি সংশোধনাগারে বন্দি। মামলাও চলছে।
বেনাচিতির উত্তরপল্লির একটি বাড়ির উঠোন খুঁড়ে ২০১৭-র ২৬ মে উদ্ধার হয় এক তরুণীর দেহ। স্ত্রী রেজিনা বেগমকে খুন করে দেহ পুঁতে রাখার অভিযোগে এক দিন পরে গ্রেফতার করা হয় পেশায় রাজমিস্ত্রি, বীরভূমের নানুরের বাসিন্দা হায়দর শেখকে। ওই বছরই ১৬ নভেম্বর রাতে সিটি সেন্টারের অবনীন্দ্রবীথিতে নিজের বাড়িতে খুন হন অবসরপ্রাপ্ত বিমাকর্মী সত্যরঞ্জন খাঁড়া। বাড়ির এক পরিচারিকাকে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় আবার গাড়ি চুরি চক্রের সঙ্গে যুক্ত কয়েক জনের যোগ পায় পুলিশ। তাদের গ্রেফতারও করা হয়। তবে ওই খুনের ঘটনারও পুরোপুরি কিনারা এখনও অধরা।
এই সব ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে ফের একই ঘটনা। ১৪ ফেব্রুয়ারি মেজিয়ার তরুণী শিল্পা অগ্রবালকে নিজের ভাড়ার ফ্ল্যাটে খুন করে দেহ ট্রলি ব্যাগে ভরে রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় মেজিয়ার এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার রাজীব কুমার ও তাঁর স্ত্রী ওই ব্যাঙ্কেরই ফুলঝোড় শাখার সহকারী ম্যানেজার মনীষা কুমারীকে। পরে মনীষা জামিনে ছাড়া পান। এ ক্ষেত্রেও সম্পর্কগত টানাপড়েনের কথা জানিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।
এর পরে ফের গত রবিবার ভিড়িঙ্গি হাইস্কুলের প্রাক্তন গ্রন্থগারিক তপন মুখোপাধ্যায়কে ভোজালি দিয়ে কুপিয়ে খুন করার ঘটনা সামনে আসে। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে উত্তরপ্রদেশের আগ্রার বাসিন্দা প্রদীপ চৌহান ওরফে রবিকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বছরের পর বছর ধরে এ ভাবে বাড়ির ভিতরে একের পর এক এমন খুনের ঘটনায় দুশ্চিন্তায় দুর্গাপুরবাসী। সব’কটি ঘটনাতেই পুলিশ দ্রুত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করেছে। তবে ঘটনা ঘটার আগেই দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করতে না পারায় পুলিশি তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। সিটি সেন্টার-সহ শহরের বহু এলাকায় প্রবীণেরা একাই বাড়িতে থাকেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁদেরও নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে পুলিশ কমিশনারেট জানিয়েছে, গোপনে সজাগ নজরদারি চলছে শহর জুড়ে। তবুও শহরবাসীর একাংশের আশঙ্কা, দুর্গাপুরে বাড়িতে খুন তো চলছেই। পরের ঘটনা কোথায় ঘটে, তা নিয়েই রয়েছে আতঙ্ক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy