Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

জড়তা ভেঙে ভোটার হতে এলেন চন্দ্রারা

জেলা প্রশাসন জানায়, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, ভোটার তালিকায় নবতম সংযোজনে শহরের যৌনপল্লি এলাকার মহিলাদের নাম বেশি করে তুলতে হবে।

ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজ। নিজস্ব চিত্র

ভোটার তালিকায় নাম তোলার কাজ। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক
কুলটি শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৮ ০৫:৫৩
Share: Save:

সরকারি কর্মী, আধিকারিক দেখে প্রথমে খানিক ঘাবড়েই গিয়েছিলেন পুষ্পা, চন্দ্রা, আয়েষারা (নামগুলি পরিবর্তিত)। ওঁরা প্রত্যেকেই কুলটির লছিপুরের যৌনকর্মী। খানিক বাদে প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে সরকারি কর্মীদের থেকেই তাঁরা বুঝে নিলেন, তাঁদের আসার কারণ। শেষমেশ, লছিপুর যৌনপল্লির একশোর বেশি মহিলা ভোটার তালিকায় নাম তুলেছেন বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসন জানায়, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে, ভোটার তালিকায় নবতম সংযোজনে শহরের যৌনপল্লি এলাকার মহিলাদের নাম বেশি করে তুলতে হবে। নির্দেশ কার্যকরী করতে লছিপুর যৌনপল্লি এলাকায় অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অরিন্দম রায়ের নির্দেশে অভিযান চালানো হয়।

সরকারি কর্মীরা জানান, তাঁদের দেখে প্রথমে ধারেকাছেও ঘেঁষতে চাননি এলাকার মহিলারা। পরে মহিলা ভোটার কর্মীদের মধ্যস্থতায় তাঁদের সঙ্গে কথা বলেন স্বয়ং অরিন্দমবাবু। তিনি বলেন, ‘‘বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া-সহ নানা কারণে ভোটার তালিকায় নাম তোলাটা কেন জরুরি, সেটা ওঁদের বোঝানো হয়। তার পরেই শুরু হয় নাম তোলা।’’ নির্দিষ্ট ফর্মপূরণ করে ভোটার তালিকায় নাম তোলার আবেদন জমা নেওয়া হয়।

তবে জেলা প্রশাসন জানায়, এটাও দেখা গিয়েছে, ওই মহিলারা দীর্ঘ দিন এলাকায় থাকলেও বেশির ভাগেরই ভোটার তালিকায় নাম নেই। নেই সচিত্র পরিচয়পত্রও। তাই, কেন এত দিন নাম তুলতে পারেননি ওই মহিলারা, তার পুরো বিবরণ সাদা কাগজে লিখিয়ে আবেদনপত্র জমা নেওয়া হয়।

কিন্তু কেন এত দিন তাঁরা নাম তোলেননি ভোটার তালিকায়? ওই এলাকার মহিলা এবং সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এর নেপথ্যে রয়েছে তিনটি কারণ। প্রথমত, যৌনকর্মীদের বেশির ভাগই প্রকাশ্যে বার হতে চান না। দ্বিতীয়ত, তাঁদের স্থায়ী ঠিকানা নেই। তা ছাড়া বেশির ভাগ সময়েই দেখা যায় যৌনকর্মীরা পরিবারের পরিচয় গোপন রেখে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত হন। তাই সরকারি নথিতে এ বিষয়ে কোনও প্রমাণ না রাখার প্রবণতা রয়েছে। তৃতীয়ত, যৌনকর্মীদের একাংশ বাংলাদেশ-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে পাচার হয়ে লছিপুরে এসেছেন। ফলে তাঁদের ভোটার তালিকায় উঠলে ধরা পড়ে যাওয়ারও ভয় থাকে।

তৃতীয় কারণটির কথা উল্লেখ করে বাড়তি সতর্কতা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দা তথা সাবেক কুলটি পুরসভার প্রাক্তন তৃণমূল উপপ্রধান বাচ্চু রায়। তিনি জানান, যৌনপল্লিতে পাচারের ঘটনা আকছার ঘটে। বহু বার পুলিশি অভিযান, বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে আসা মহিলাদের সে দেশে ফেরত পাঠানোর ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু তার পরেও অনেকে অবৈধ ভাবে এলাকায় থেকে যেতে পারেন বলে আশঙ্কা বাচ্চুবাবুর। আর তাই তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওই ভিন্-দেশি মহিলাদের নাম ভোটার তালিকায় তোলা হলে তাঁরা ভারতবর্ষের নাগরিকত্ব পেয়ে যাবেন। এটা হয়তো দেশের নিরাপত্তার জন্য চিন্তার।’’ বাচ্চুবাবু-সহ কয়েক জন বিষয়টি সরকারি আধিকারিকদের নজরেও এনেছেন। তবে এ বিষয়ে আগেভাগেই বাড়তি কিছু সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে জানান অরিন্দমবাবু। সেই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, ভোটার তালিকায় বেশি সংখ্যায় নাম তোলানো। অযথা নাম বাদ দেওয়া নয়। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তাই গুরুত্ব দিয়ে এই কাজ করা হচ্ছে।’’

ভোটার তালিকায় নাম তুলে খুশি পুষ্পারাও। তাঁদের কথায়, ‘‘এত দিন দেশের নাগরিক, সেটাই বুঝতে পারতাম না। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা হোক বা অন্য কোনও কারণে পরিচয়পত্র দেওয়ার উপায় ছিল না। এ বার তা হবে ভেবে ভাল লাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sex Workers Voter List Enrollment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE