Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

নির্বিষ সাপ, ঝাড়ফুঁকে নাম  কুড়োয় ওঝা

রেওয়াজ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সেটাই ত্যাগ করতে পারছেন না বাসিন্দারা— সাপের ছোবলে অসুস্থকে হাসপাতালের পরিবর্তে প্রথমে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার পিছনে এটা বড় কারণ বলে দাবি গ্রামবাসীর একাংশের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
মঙ্গলকোট শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:২৯
Share: Save:

রেওয়াজ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সেটাই ত্যাগ করতে পারছেন না বাসিন্দারা— সাপের ছোবলে অসুস্থকে হাসপাতালের পরিবর্তে প্রথমে ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার পিছনে এটা বড় কারণ বলে দাবি গ্রামবাসীর একাংশের।

পেশায় শিক্ষক সনাতন টুডুর কথায়, ‘‘হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে গ্রামের মানুষজনের এখনও কিছু জড়তা কাজ করে। অন্ধবিশ্বাস থেকেই তাঁরা ওঝার কাছে যান।’’ আউশগ্রামের আদিবাসী সমাজের মোড়ল চরণ কিস্কুর বক্তব্য, ‘‘দীর্ঘদিনের বিশ্বাস সহজে মন থেকে ঝেড়ে ফেলতে না পারায় ওঝার দ্বারস্থ হন অনেকে। অশিক্ষার পাশাপাশি দারিদ্রও দায়ী।’’ তাঁর দাবি, ওঝারা এলাকায় পরিচিত মুখ। তাঁদের কাছে গেলে তেমন খরচ হয় না। তাই গোড়ায় তাঁদের কাছে যাওয়াই রেওয়াজ হয়ে রয়েছে। সরকারি প্রচারেও সে ভাবে কাজ হচ্ছে না।

বিদায়ী জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুর দাবি, স্কুল, ক্লাব, পাড়া-মহল্লায় প্রচার চালানো হচ্ছে। ওঝাদের ডেকেও সতর্ক করা হয়েছে। তাতে খানিক সচেতনতা এসেছে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। নিরন্তর প্রচার চালাতে হবে। আউশগ্রামের এক ওঝা যদিও তা মানতে নারাজ। তাঁর দাবি, আগে বছরে হাজার খানেক সাপে কাটা রোগী তাঁর কাছে আসত। এখন তা প্রায় দেড় গুণ হয়েছে। তিনি প্রত্যেকের নামঠিকানাও খাতায় লিখে রাখেন।

পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ওঝাদের একাংশের হয়ে প্রচার চালাতে বিভিন্ন গ্রামে লোক ঠিক করা থাকে। তারাই রোগীকে ওঝাদের কাছে পাঠানোর বিষয়ে উদ্যোগী হয়। বিপদের সময়ে বিভ্রান্ত হয়ে সেই ফাঁদে পা দেন বেশিরভাগ মানুষ। তবে গ্রামগঞ্জে মানুষকে সচেতন করতে সরকারি বিভিন্ন কর্মসূচির পাশাপাশি বিভিন্ন বিষধর সাপের ছবি দেখিয়ে তাঁদের প্রকৃতি চেনানো, কী ভাবে তারা ছোবল দেয়, ছোবল দিলে কী করা উচিত— বিজ্ঞানমঞ্চের তরফে এ সব জানানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।

রাজ্য সরকারের সর্পদংশন চিকিৎসার প্রশিক্ষক দয়ালবন্ধু মজুমদার বলেন, ‘‘৯০ শতাংশ সাপ বিষহীন হওয়ায় রোগীরা বেঁচে যান। বাকিদের ক্ষেত্রে ওঝাদের কাছে সময় নষ্টের কারণে বিপদের সম্ভাবনা বেড়ে যায়।’’ তিনি জানান, বিষযুক্ত সাপে কাটার ১০০ মিনিটের মধ্যে ১০০ মিলিলিটার অ্যান্টি ভেনম সিরাম রোগীর শরীরে দেওয়া গেলে তিনি বেঁচে যান। কিন্তু ওঝার কাছে নিয়ে যাওয়ার ফলে অনেক সময় সেই সুযোগ চলে যায়। তাঁর আক্ষেপ, ওঝাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বলেই তাঁদের দৌরাত্ম্য দিন-দিন বাড়ছে। শুধু সচেতনতার বার্তা নয়, শাস্তি এড়াতে ওঝারা ঝাড়ফুঁক বন্ধ করলেই এই কুসংস্কার বন্ধ করা যাবে বলে তাঁর মত। (শেষ)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shaman Snake Bite Patient Non-venomous
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE