Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

২৫ ভবঘুরের ঠাঁই আসানসোল জেলা হাসপাতালে 

মহিলা ওয়ার্ডের একেবারে শেষ প্রান্তে ডান দিকের কোণে এক শয্যায় শুয়ে সারাক্ষণই বিড়বিড় করে চলেছেন বছর পঁয়ত্রিশের এক মহিলা। কেউ কিছু প্রশ্ন করলেই চিৎকার বা হাসি। শুধুমাত্র হাসপাতালের নার্স দেখলেই কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘আমার বাবু কোথায়’। ওই মহিলা শুধু এক জন নন। সংখ্যায় এমন প্রায় ২৫ জন ভবঘুরের এই মুহূর্তে ঠাঁই আসানসোল জেলা হাসপাতালে।

হাসপাতালে শয্যাতেই বসত বৃদ্ধার। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালে শয্যাতেই বসত বৃদ্ধার। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:২২
Share: Save:

মহিলা ওয়ার্ডের একেবারে শেষ প্রান্তে ডান দিকের কোণে এক শয্যায় শুয়ে সারাক্ষণই বিড়বিড় করে চলেছেন বছর পঁয়ত্রিশের এক মহিলা। কেউ কিছু প্রশ্ন করলেই চিৎকার বা হাসি। শুধুমাত্র হাসপাতালের নার্স দেখলেই কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করছেন, ‘আমার বাবু কোথায়’। ওই মহিলা শুধু এক জন নন। সংখ্যায় এমন প্রায় ২৫ জন ভবঘুরের এই মুহূর্তে ঠাঁই আসানসোল জেলা হাসপাতালে।

গত চার বছর ধরে হাসপাতালেই রয়েছেন দক্ষিণ ভারতের এক মহিলা। নাম, ডি গ্রেস পাপা। তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় আসানসোল স্টেশন চত্বর থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিল জিআরপি। নিখিলবাবু জানান, ওই মহিলার ভাষা জানা এক ব্যক্তিকে নিয়ে এসে মহিলার ঠিকানা জানার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু বাড়ির ঠিকানা বলতে পারেননি।

তবে ঠিকানা জানা কুলটির শান্তি যাদবের। বছর তিনেক আগে তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় পড়শিরা হাসপাতালে ভর্তি করান। তিনি এই মুহূর্তে সুস্থও। কিন্তু বাড়ির কেউ তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করেননি। শান্তিদেবী বলেন, ‘‘আমি নিঃসন্তান। স্বামী বিশ্বনাথ যাদব প্রাক্তন রেলকর্মী। অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যায়নি কেউ।’’

শুধু মহিলা ওয়ার্ডই নয়। একই চিত্র পুরুষ ওয়ার্ডেও। ওয়ার্ডে ঢোকার ডান দিকে সার বেঁধে তিনটি শয্যায় রয়েছেন প্রায় দশ জন। তেমনই একজন সঞ্জয় সাউ। আসানসোলের কাচ কারখানা কলোনি এলাকার বাসিন্দা। তাঁরও প্রায় তিন বছর ধরে ঠাঁই হাসপাতালেই। ঊষাগ্রামে এক দুর্ঘটনায় জখম হয়ে তিনি ভর্তি হন হাসপাতালে। কিন্তু তাঁর কথায়, ‘‘হাঁটতে সমস্যা হয়। বাড়ির লোক আর ফিরিয়ে নেবে না বলেছে।’’

উত্তরপ্রদেশের ফরিদাবাদের বাসিন্দা মুবারককে আসানসোল স্টেশন থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল জিআরপি। তার পরে কেটে গিয়েছে প্রায় এক বছর। শুধু নিজের মায়ের নাম ফজিদন আর জায়গার নাম ফরিদাবাদ ছাড়া আর কিছুই বলতে পারেন না মুবারক। ভাঙা পা নিয়ে ছ’মাস আগে বাঁকুড়া থেকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে এসেছিলেন হীরালাল রায়। এখন তিনি সুস্থও। মাস দুয়েক আগে হীরালালবাবুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বৃদ্ধের ছেলের দেখা মেলেনি। হীরালালবাবুর আক্ষেপ, ‘‘ছেলেই তো এল না। কার সঙ্গে বাড়ি যাব?’’

কিন্তু সুস্থদের কী ভাবে হাসপাতালে রাখা সম্ভব? হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘মানবিকতার খাতিরে ওঁদের হাসপাতাল থেকে বার করে দিতে পারি না।’’ জানা গেল, রোগীদের খাবারই ভাগ করে দেওয়া হয় এঁদের। কখনও আবার অন্য রোগীর আত্মীয় পরিজনেরাও খাবার দিয়ে যান।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ভবন তৈরি হয়ে গিয়েছে। পুরনো ভবন থেকে প্রায় সব কিছুই নতুন ভবনে চলে গিয়েছে। পুরনো ভবনটি এ বার খালি করে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু তা হলে এই মানুষগুলোর ঠাঁই কোথায় হবে? এ প্রশ্নের উত্তর জানা

নেই কারও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE