Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

কথা রেখেছিলেন সোমনাথ

২০০৬-এ স্পিকার সোমনাথবাবু কন্যাপুরে এসেছিলেন ওই সংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে। সংস্থার অফিসে ঢুকেই এক কাপ লাল চায়ে চুমুক দিয়েছিলেন সোমনাথ। আর সঙ্গে একটা ক্র্যাকার বিস্কুট। তার পরেই শুরু হয় নানা অনুষ্ঠান। দ্বারোদঘাটন করেন সংগঠনের একটি প্রেক্ষাগৃহেরও। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বর্তমান সম্পাদক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সারাটা দিন ওঁর মতো মানুষ শিশুদের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন। দান করেছিলেন ১০ হাজার টাকা।’’

সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।ছবি : আনন্দবাজার আর্কাইভ

সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়।ছবি : আনন্দবাজার আর্কাইভ

সুশান্ত বণিক
আসানসোল শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৮ ০১:০৬
Share: Save:

ডিসেম্বরের এক দিন। ২০০৬ সাল। সকাল ১০টা। থামল কনভয়। গাড়ি থেকে নামলেন সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি, ডান হাতে ঘড়ি পরা তৎকালীন লোকসভার স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। যোগ দিলেন, আসানসোলের কন্যাপুরে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অনুষ্ঠানে। সে দিনটার কথাই বারবার বলছিলেন সংস্থার কর্তারা।

আপকার গার্ডেন। সিপিএমের জেলা পার্টি অফিস। পার্টি থেকে বহিষ্কৃত এই নেতার স্মৃতিচারণ করছেন অফিসে উপস্থিত বর্তমান সিপিএম নেতৃত্ব থেকে সাধারণ কর্মী, সকলেই।— সোমবার, সোমনাথবাবুর প্রয়াণের দিনে তাঁর কথাতেই মজে শহর আসানসোলের নানা স্তরের মানুষ।

২০০৬-এ স্পিকার সোমনাথবাবু কন্যাপুরে এসেছিলেন ওই সংস্থার বার্ষিক অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে। সংস্থার অফিসে ঢুকেই এক কাপ লাল চায়ে চুমুক দিয়েছিলেন সোমনাথ। আর সঙ্গে একটা ক্র্যাকার বিস্কুট। তার পরেই শুরু হয় নানা অনুষ্ঠান। দ্বারোদঘাটন করেন সংগঠনের একটি প্রেক্ষাগৃহেরও। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার বর্তমান সম্পাদক সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সারাটা দিন ওঁর মতো মানুষ শিশুদের সঙ্গে কাটিয়েছিলেন। দান করেছিলেন ১০ হাজার টাকা।’’ সংস্থা চালাতে কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না, খোঁজ নিয়েছিলেন সে সবেরও। এমনকি নিজের ইচ্ছেতেই সংস্থা পরিচালিত স্কুলেও যান সোমনাথবাবু, জানান সংস্থার প্রাক্তন সম্পাদক মনোরম সেন।

শুধু তাই নয়, শিশুদের জন্যই সংস্থাটির সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হয়নি তাঁর। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য অশোক সামন্ত বলেন, ‘‘ফিরে যাওয়ার সময়ে বলেছিলেন, আমৃত্যু যোগাযোগ রাখবেন। কথা রেখেছিলেন তিনি। যে কোনও দরকারে তাঁর ভূমিকা ছিল অভিভাবকের মতো।’’— সোমবার প্রয়াণ-সংবাদ পৌঁছতেই শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয় সংস্থার তরফে।

‘কথা রেখেছিলেন’ সোমনাথবাবু, এ দিন স্মৃতিচারণে সে কথা বার বার শোনা গিয়েছে সিপিএম নেতৃত্ব ও কর্মীদের মুখেও। সিটুর জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপাল চৌধুরীর সাংসদ হওয়ার সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে সোমনাথবাবুর নাম। ২০০৫ সাল। দীর্ঘ রোগভোগের পরে মৃত্যু হয়েছে আসানসোল কেন্দ্রের সিপিএম সাংসদ বিকাশ চৌধুরীর। সেই সময়ে উপনির্বাচনে দলের প্রার্থী বংশগোপালবাবু। দলের কর্মী, সমর্থকদের আবদার, ‘হেভিওয়েট’ সোমনাথবাবুকে প্রচারে চাই। এসেওছিলেন সোমনাথবাবু। আসানসোলের দিলদারনগরে হয়েছিল প্রচারসভা। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সভার ভিড়ই বলে দিয়েছিল, ভোটের ফল কী হতে চলেছে।’’

শুধু প্রচারেই নয়। প্রশাসক হিসেবেও সোমনাথবাবুর সান্নিধ্যে এসেছিলেন বংশগোপালবাবু। ২০০০ সাল। রানিগঞ্জের তৎকালীন বিধায়ক বংশগোপালবাবু তখন রাজ্যের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পমন্ত্রী। সোমনাথবাবু তখন রাজ্যের শিল্প নিগমের চেয়ারম্যান। বংশগোপালবাবু এ দিন জানান, ওই সময়ে দক্ষিণবঙ্গের শিল্পপতিদের নিয়ে আয়োজিত দুর্গাপুরের একটি বৈঠকে সোমনাথবাবু প্রস্তাব দিয়েছিলেন, শিল্পাঞ্চলে মঙ্গলপুর, ইকড়া, কল্যাণপুর-সহ কিছু জায়গায় শিল্পতালুক তৈরি করার। এ ছাড়া এডিডিএ-র চেয়ারম্যান থাকাকালীনও নানা বিষয়ে সোমনাথবাবুর পরামর্শ মিলেছিল বলে জানান প্রাক্তন সাংসদ বংশগোপালবাবু। সিপিএমের অফিস হোক, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অফিস, বা পথচলতি মানুষের জটলায়— এমনই নানা কথারা ভিড় করছে প্রয়াত নেতা এবং ভারতবর্ষের সাংসদের এক শ্রেষ্ঠ প্রতিনিধিকে নিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE