—প্রতীকী ছবি।
ট্রেনে যাত্রীদের ব্যাগ, জিনিসপত্র চুরিতে লাগাম নেই। চুরির ধরনেও বদল ঘটেছে। আর সেটাই চিন্তা বাড়িয়েছে আরপিএফ আধিকারিক এবং যাত্রীদের। কিন্তু আরপিএফ কর্তাদের দবি, ট্রেনে এমন দুষ্কর্ম ঠেকাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
কী কী সেই পদক্ষেপ?
পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের আরপিএফ আধিকারিকেরা জানান, গত দেড় বছরে চুরির এমন প্রায় ১৫টি ঘটনার কিনারা করা গিয়েছে। ধরা পড়েছে প্রায় ৫০ জন দুষ্কৃতী। তা হলে কেন এমন চুরি নিয়ে চিন্তা আরপিএফ কর্তাদের, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। তাঁরা জানান, অভিযোগের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। সব ক’টি ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়ের হয়নি। ডিভিশনের সিনিয়র কমান্ডান্ট অচ্যুতানন্দ ঝা’ও বলেন, ‘‘প্রতি দিন এমন চুরির ঘটনা বাড়ছে। বিষয়টা খুবই চিন্তার। তবে আমরা এমন অপরাধ ঠেকাতে একটি বিশেষ দল তৈরি করেছি।’’
আরপিএফ সূত্রে জানা যায়, ওই বিশেষ দলের নাম, ‘থেফট অব প্যাসেঞ্জার বিলংগিংস টিম’। দু’জন আরপিএফ অফিসার দীপঙ্কর দে ও রাজেশ মণ্ডলের নেতৃত্বে রেল নিরাপত্তা বাহিনীর ওই দল দু’টি ভাগে ডিভিশনের আসানসোল ও যশিডি এলাকায় প্রতিটি দূরপাল্লার মেল, এক্সপ্রেস ট্রেনে নজরদারি চালাচ্ছেন। দীপঙ্করবাবু জানান, গত কয়েক মাসে সাউথবিহার এক্সপ্রেস, আদ্রা-টাটানগর ভায়া পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, ইন্টারসিটি-ভাগলপুর এক্সপ্রেস, জয়নগর-হাওড়া এক্সপ্রেসের মতো বেশ কয়েকটি দূরপাল্লার ট্রেনে অভিযান চালিয়ে প্রায় ১৫ জনকে ধরা হয়েছে।
আরপিএফ কর্তাদের দাবি, জেরায় ধৃতেরা তাদের কাছে দোষ স্বীকার করেছে। বাজেয়াপ্ত করা ব্যাগ ও সামগ্রী যাত্রীদের ফেরত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কী ভাবে নাগাল পাওয়া গেল ওই দুষ্কৃতীদের? তদন্তকারীরা জানান, অভিজ্ঞতার নিরিখে ব্যাগপত্র নিয়ে ‘সন্দেহজনক’ ভাবে কেউ ঘোরাফেরা করলেই সেই ‘যাত্রী’র উপরে নজর রাখা হয় কিছুক্ষণ। তার পরে তাদের ব্যাগের তালা খুলতে বলা হয়। তালা খুলতে না পারলেই বোঝা যায়, ওই ‘যাত্রী’রাই আসলে দুষ্কর্মে জড়িত। এ ছাড়া বাহিনীর নিজস্ব সূত্র মারফত খবর পেয়েও অভিযান চালানো হয়। দীপঙ্করবাবু বলেন, ‘‘পুজোর মরসুমে বাড়তি কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’’
কিন্তু নজরদারি আরও জোরদার করতে আরপিএফ কিছু প্রস্তাবও দিয়েছে। আরপিএফ কর্তারা জানান, বাহিনী ট্রেনের মধ্যে যাত্রী সুরক্ষার দায়িত্বে রয়েছে। সেখানে অপরাধীর দেখা মিললে ধরা হয়। কিন্তু দুষ্কৃতীরা অপকর্ম সেরে প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়ার পরে তারা কোথায় লুকিয়ে পড়ে, বা তাদের গতিবিধি কী, তা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রেলপুলিশের পক্ষেই পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব। এ অবস্থায় রেলপুলিশের সঙ্গে যৌথ দল তৈরি করা হলে ট্রেনের ভিতরে ও প্ল্যাটফর্মে একযোগে দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো সম্ভব হবে। অচ্যুতানন্দবাবুর কথায়, ‘‘আমরা রেল পুলিশের সঙ্গে যৌথ দল তৈরির পরিকল্পনা করেছি।’’
বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ড রাজ্যের রেল পুলিশের পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক হবে বলেও আরপিএফ জানায়। সেই সঙ্গে যাত্রীদের মধ্যে সচেতনতা প্রচার, অপ্রীতিকর কোনও পরিস্থিতি তৈরি হলে আরপিএফের নিজস্ব নম্বর ‘১৮২’-তে ফোন করা এবং প্ল্যাটফর্মে নিয়মিত পুলিশ কুকুর দিয়ে পরীক্ষা করানো-সহ বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে রেল জানায়।
তবে এত কিছুর পরেও ‘ঢোল কোম্পানি’-র ‘মিস্ত্রি’-রা (চুরির সঙ্গে যুক্ত দলের মূল মাথা) নির্মূল হবে কি না, তা সময়ই বলবে, মত যাত্রীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy