মা ও মামার সঙ্গে অনিমেষ (মাঝে)। নিজস্ব চিত্র
কবিতার কিশোর ডাকাতের হাত থেকে মা’কে বাঁচিয়েছিল। বর্ধমানের কিশোরও অবলীলায় বলতে পারে, ‘আমি আছি ভয় কেন মা করো!’ তফাত একটাই, শুধু ‘হাতে লাঠি, মাথায় ঝাঁকড়া চুল’ ডাকাত নয়, বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমের মতো সমাজের যে কোনও ‘ডাকাতে’রই প্রবল প্রতিপক্ষ সে।
বছর দশেক আগে বাবা ছেড়ে গিয়েছেন। বস্তির এক কামরার ঘরে মা ও মামার সঙ্গে থাকে বছর সতেরোর কিশোর। তবে নিজের সমস্ত প্রতিকূলতা, লড়াইয়ের মাঝেও অন্যদের জন্য ভাবা থামায়নি সে। নিজের পড়াশোনার সঙ্গে বস্তির স্কুলছুটদের স্কুলে ফিরিয়েছে। রুখেছে একাধিক নাবালিকা বিয়ে। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র অনিমেষ মণ্ডলের এই কাজের স্বীকৃতি দিতে আজ, বুধবার তাকে ‘বীরপুরুষ’ সম্মান দিচ্ছে রাজ্য সরকার।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘কমিশন ফর প্রোটেকশন অব চাইল্ড রাইটস’-এর তরফে প্রতি বছর এ ধরনের কাজের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে পুরস্কারের নাম ‘বীরাঙ্গনা’। গত বছর বর্ধমান শহরের তিন নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষীপুর মাঠ এলাকার দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী পমি মাহাতো পেয়েছিল এই পুরস্কার।
কৃষি দফতরের কাছে, বীরহাটা বাঙালি বস্তিতে অনিমেষের সঙ্গে থাকেন মা গীতুয়া মণ্ডল ও মামা লাল্টু মাহাতো। তাঁরা দু’জনেই রাস্তার ধারে হাতে টানা গাড়িতে রুটি বিক্রি করেন। সে আয়েই চলে সংসার। বাড়ির কাজে মা, মামাকে সাহায্য করে স্কুলে যায় বর্ধমান বিদ্যার্থীভবন হাইস্কুলের ছাত্র অনিমেষ। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে একটি বেসরকারি সংস্থা তাঁদের এলাকায় মূলত বাল্যবিবাহ, শিশু সুরক্ষায় সচেতনতা প্রচারের কাজ করত। কিশোরের কাজের আগ্রহ দেখে ২০১৫ সালে ওই সংস্থা তাঁকে নিজের এলাকার ‘চিলড্রেন ক্লাব’-এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে। প্রায় দেড়শো জনের দল নিয়ে কাজ শুরু করে অনিমেষ। ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিন বছরে পাঁচটি নাবালিকা বিয়ে রুখে দিয়েছে সে। নিজের ও পাশের বস্তির আট জনকে স্কুলে ফিরিয়েছে। এ ছাড়া, নানা সচেতনতা কর্মসূচি, প্রশিক্ষণের অনুষ্ঠান করতে অনিমেষের জুড়ি মেলা ভার।
ওই সংস্থার তরফে শৌভিক বিশ্বাস, অর্জুনকুমার রায়রাও বলেন, ‘‘আমরা এক একটা এলাকায় চিলড্রেন ক্লাব গড়ে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট বেছে নিয়ে কাজের প্রশিক্ষণ দিই। তারা পরে এলাকায় কাজ করে। অনিমেষ তিন বছরে কার্যত নজির গড়েছে। তাই তার নাম জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিটের মাধ্যমে রাজ্যে পাঠানো হয়েছে।’’
জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সুদেষ্ণা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পূর্ব বর্ধমান থেকে অনিমেষ এই পুরস্কার পাচ্ছে। ওর এই কাজ সচেতনতা বাড়াবে।’’ অনিমেষের স্কুলের প্রধান শিক্ষক ঈশ্বর চন্দ্র বলেন, ‘‘বরাবরই অনিমেষের এ ধরনের কাজে ঝোঁক রয়েছে। আমরা উৎসাহ যোগাই মাত্র।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy