Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

রক্তের অপচয় রুখতে পদক্ষেপ মেডিক্যাল কলেজে

রক্তের অপচয় রুখতে উপাদান পৃথকীকরণ আগেই শুরু হয়েছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (বিএমসিএইচ)। তবু ফি বছর প্রায় ৩০ শতাংশ রক্ত স্রেফ পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:২০
Share: Save:

রক্তের অপচয় রুখতে উপাদান পৃথকীকরণ আগেই শুরু হয়েছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (বিএমসিএইচ)। তবু ফি বছর প্রায় ৩০ শতাংশ রক্ত স্রেফ পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্লাড ব্যাঙ্কের সঙ্গে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও শহরের নার্সিংহোমগুলির উপযুক্ত সমন্বয়ের অভাবেই এই রক্ত পড়ে থাকছে। সমস্যা মেটাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঠিক করেছেন, জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন নয়, এমন রক্তের প্যাকেট হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কেই বৈজ্ঞানিক-পদ্ধতিতে মজুত করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই রক্ত ব্যবহার না হলে তা ব্লাড ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কাছে ফেরত আসবে।

মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের সব নার্সিংহোম তো বটেই, হাসপাতালেরও সব ওয়ার্ডে রক্ত রাখার মতো উপযুক্ত ফ্রিজ নেই। বাড়িতে ব্যবহারের ফ্রিজেই নির্দিষ্ট মাত্রায় রক্ত রাখা হয়। কোনও কারণে প্রয়োজন না হলে সেই রক্তের প্যাকেট আর ব্লাড ব্যাঙ্কে ফেরত আসে না। কিন্তু সাধারণ ফ্রিজে রক্ত থাকার ফলে সময়ের আগেই তার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়।

বিশেষজ্ঞ কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী, হাসপাতাল বা নার্সিংহোমের চিকিৎসকেরা যে কোনও ‘কোল্ড অপারেশন’-এর সময় রক্ত মজুত রাখতে বলেন রোগীর পরিজনকে। বেশিরভাগ সময় দেখা যায়, ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত নিয়ে এসে সাধারণ ফ্রিজে মজুত করে রাখা হলেও অস্ত্রোপচারের সময় সেই রক্ত দরকার পড়ে না। ফ্রিজে পড়ে থেকেই রক্ত নষ্ট হচ্ছে।

হাসপাতালের সুপার উৎপল দাঁ জানান, এই সমস্যা দূর করতে তাঁরা ঠিক করেছেন, ‘কোল্ড অপারেশন’-এর ক্ষেত্রে হাসপাতালের ওয়ার্ড বা নার্সিংহোম থেকে রক্ত দেওয়ার অনুরোধ এলে সঙ্গে-সঙ্গে দেওয়া হবে না। ব্লাড ব্যাঙ্কেই ওই রোগীর নামে প্রয়োজনীয় রক্তের প্যাকেট ফ্রিজে তুলে রাখা হবে। রোগীর পরিজন বা নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষকে ‘হোল্ডিং ব্লাড’ নামে একটি ফর্ম দেওয়া হবে। সেটি পূরণ করে জমা দিলে ব্লাড ব্যাঙ্ক টোকেন দেবে। প্রয়োজনের সময়ে ওই টোকেন দেখালে রক্তের প্যাকেট দিয়ে দেওয়া হবে।

দেড় বছর আগে নবাবহাট ও খোসবাগান এলাকায় পরপর নার্সিংহোমে হানা দিয়ে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকেরা দেখেছিলেন, সেগুলির ফ্রিজে আনাজ রাখার জায়গায় রয়েছে মেয়াদ ফুরনো রক্তের প্যাকেট। শুধু নার্সিংহোম নয়, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডের ফ্রিজেও একই অবস্থা দেখা যায়।

ব্লাড ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ৯০ ইউনিট রক্তের প্রয়োজন হয়। সেখানে রক্তদান শিবির করে দৈনিক ৪০-৫০ প্যাকেট রক্ত মেলে। ভোট, উৎসব বা গরমের সময়ে রক্ত সংগ্রহ কমে যায়। সে জন্য বছরের অনেকটা সময়েই রক্তের আকাল থাকে। চাহিদা মেটানোর জন্য ‘রক্ত দিন, রক্ত নিন’ পদ্ধতি অবলম্বন করতে হয় কর্তৃপক্ষকে।

হাসপাতালের ডেপুটি সুপার অমিতাভ সাহা বলেন, ‘‘যে পদ্ধতির কথা ভাবা হয়েছে, তা ঠিক ভাবে রূপায়ণ করতে পারলে ৩৭-৩৮ শতাংশ রক্ত অপচয় রোখা যাবে বলে আমাদের ধারণা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical Health Blood Donation Camp Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE