Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

অজ্ঞতার সঙ্গে দোষ দারিদ্রকেও

এখনও রয়েছে কুসংস্কার। তাই গ্রামে সর্পদষ্ট মেয়েকে হাসপাতালের বদলে নিয়ে যাওয়া হয় গুণিনের কাছে। কেন এই পরিস্থিতি, এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা কতটা দায়ী, উন্নয়নমূলক কাজের কী হাল সালানপুরের এথোড়ায়— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।সুশান্ত বণিকএখনও রয়েছে কুসংস্কার। তাই গ্রামে সর্পদষ্ট মেয়েকে হাসপাতালের বদলে নিয়ে যাওয়া হয় গুণিনের কাছে। কেন এই পরিস্থিতি, এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা কতটা দায়ী, উন্নয়নমূলক কাজের কী হাল সালানপুরের এথোড়ায়— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

এথোড়া গ্রাম। নিজস্ব চিত্র

এথোড়া গ্রাম। নিজস্ব চিত্র

সালানপুর
শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৮ ০৯:১৫
Share: Save:

খানিক আগেই মেয়ের পারলৌকিক কাজ শেষ হয়েছে। বাড়ির উঠোনে বসে আক্ষেপ করছিলেন নিতাই বাউড়ি। ঘণ্টা দুয়েক নষ্ট না করে যদি সে দিন শুরুতেই হাসপাতালে যেতেন, তাহলে এ ভাবে মেয়েকে হারাতে হত না— খেদ তাঁর।

সালানপুরের এথোড়া গ্রামের বাসিন্দা নিতাইবাবুর মেয়ে, বছর পনেরোর বুল্টির সম্প্রতি মৃত্যু হয়েছে সাপের ছোবলে। ঘটনার পরে হাসপাতালে না গিয়ে মেয়েকে গ্রামের এক গুণিনের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁরা। অনেকক্ষণ ঝাড়ফুঁকের পরেও যখন অবস্থার কোনও উন্নতি হচ্ছে না, তখন বুল্টিকে আসানসোল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনার পরেই বাসিন্দাদের সচেতনতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তার পিছনে এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতিও দায়ী বলে মনে করছেন অনেকে।

২ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরে রয়েছে কয়েকশো বছরের পুরনো এই জনপদটি। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বীরভূমের কাশিমপুর রাজাদের কাছারিবাড়ি ছিল এই গ্রামে। জৌলুস কিছুটা কমলে এখনও বেশ কিছু বনেদি পরিবারের বাস রয়েছে। গ্রামে ঢোকার মুখে বাঁ হাতে বিলাকুলি, বাউড়ি পাড়া, আরও কিছুটা এগিয়ে পরপর মাধাইচক, কোটশাল, আদিবাসী পাড়া, শুঁড়িপাড়া। বাসিন্দাদের অভিযোগ, উন্নয়নের ছোঁয়া বিশেষ পড়েনি এই সব চত্বরে।

খনি অঞ্চল হওয়ায় অনুর্বর পাথুরে মাটিতে জলধারণ ক্ষমতা কম। তাই চাষাবাদ বিশেষ হয় না। কল-কারখানাও তেমন নেই। তাই বেশিরভাগ পরিবারের সদস্যদের আয়ের উপায় দিনমজুরি। নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা অনেকের। শিক্ষার পরিস্থিতিও বেশ খারাপ। বুল্টি নবম শ্রেণিতে পড়ত। স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বুল্টির মতো অনেকেই পরিবারের প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া।

এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, এই দারিদ্র ও অজ্ঞতারই সুযোগ নেন কিছু গুণিন। বুল্টিকে গ্রামের যে গুণিনের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তিনি জানান, বংশ পরম্পরায় কয়েক পুরুষ ধরেই তাঁরা এই ঝাড়ফুঁক করে চলেছেন। জোর গলায় তাঁর দাবি, ‘‘আমি সাপে কাটা অনেককে বাঁচিয়েছি।’’ তাঁর এই দাবি যে যুক্তিসম্মত নয়, তা জানানো হলে গুণিনের জবাব, ‘‘অতশত জানি না। আমার কাছে কাউকে আসতে বলি না। হাসপাতালে চিকিৎসা হয়, সেখানে যেতে নিষেধও করি না।’’

বিভিন্ন পাড়ার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, গুণিনের দ্বারস্থ হওয়ার পিছনে কারণ হিসেবে অজ্ঞতার পাশাপাশি রয়েছে অর্থাভাবও। গ্রাম থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে আসানসোল হাসপাতাল। রাতবিরেতে গাড়ি ভাড়া করে সেখানে যেতে হলে হাজারখানেক টাকা গুনতে হয়। সে কারণেই সাপে কাটলে গোড়ায় গ্রামের গুণিন, ওঝাদের কাছে নিয়ে যান, দাবি করেন অনেকেই। সেই সঙ্গে তাঁদের অভিযোগ, উন্নয়নমূলক বহু কাজে খামতি রয়েছে। সে জন্যও ভুগতে হচ্ছে তাঁদের। (চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Village Poor Man
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE